মাদ্রাসায় ঝুলন্ত ছাত্রের লাশ : পরিবারের দাবি নির্যাতনের পর হত্যা

    মাদ্রাসা ছাত্রের ঝুলন্ত লাশ মাদ্রাসায় তালা

    বিএম স্পেশাল ডেস্ক : বিগত কিছুদিন ধরে সারাদেশে মাদ্রাসা ছাত্র-ছাত্রীদের উপর অমানুষিক নির্যাতনে নেমেছে শিক্ষক ও হুজুর নামধারী গুটি কয়েক পাষন্ড। সর্বশেষ বুধবার রাতে চট্টগ্রামের অক্সিজেন এলাকার কওমি মাদ্রাসায় নির্যাতন পরবর্তী এক ছাত্রকে হত্যা করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত ছাত্রের পরিবারের অভিযোগ তাদের ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

    অক্সিজেন এলাকার কুয়াইশ সংযোগ সড়কে ওমর ফারুক আল ইসলামীয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার মসজিদে ঘটনাটি ঘটে। বুধবার রাত ১১টার সময় খবর পেয়ে মাদ্রাসার হেফজ বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান (১২) নামে এক ছাত্রের ঝুলন্ত অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

    খাগড়াছড়ির দিঘীনালা উপজেলার মধ্য বোয়ালখালী পশ্চিম পাড়ার আনিসুর রহমানের ছেলে হাবিবুর রহমান মাদ্রাসার ছাত্রাবাসেই থাকতেন।

    লাশ উদ্ধারের পর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবী ছাত্রটি গলায় গামছা পেছিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে স্থানীয় এলাকাবাসীরা বলছে তাকে নির্যাতন করে হত্যার পর ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে। ক্ষোভ ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এলাকাবাসীরা বৃহস্পতিবার সকালে মাদ্রাসাটিতে তালা লাগিয়ে দিয়েছে পাশাপাশি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নানান অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ তুলেন স্থানীয়রা।

    বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি আতাউর রহমান খন্দকার মাদ্রাসা থেকে ছাত্রের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের তথ্যটি নিশ্চিত করে বলেন, বুধবার রাতে মাদ্রাসা মসজিদের চতুর্থ তলা থেকে হাবিবুরের ঝুলন্ত লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, নিহতের হাঁটুতে জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা জানতে চাইলে ওসি বলেন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে বিষয়টি পরিস্কারভাবে জানা যাবে।

    সিএনজি অটোরিকশাচালক আনিসুর রহমান তার ১২ বছর বয়সী ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চমেক হাসপাতাল মর্গে ছেলের মরদেহের পাশে বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, চার দিন আগে তাঁর ছেলেকে মাদ্রাসার শিক্ষক তারেক আহমেদ মারধর করলে ছেলে মাদ্রাসা থেকে বাসায় চলে আসে। পরদিন তাকে বুঝিয়ে পুনরায় মাদ্রাসায় পাঠানো হয়। বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে মাদ্রাসা থেকে ফোন করে জানানো হয়, হাবিবুরকে মাদ্রাসায় পাওয়া যাচ্ছে না।

    এই খবর শুনে আত্মীয়স্বজন মিলে বিভিন্ন জায়গায় হাবিবুরের খোঁজ করা হয়। তবে কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। রাত নয়টার দিকে মাদ্রাসা থেকে ফোন করে জানায় হাবিবুর মাদ্রাসার একটি কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে সেখানে গিয়ে দেখেন, পুলিশ লাশ উদ্ধার করছে।

    তিনি বলেন, আমার ছেলে আত্মহত্যা করতে পারেনা, তাকে নির্যাতন করে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর গলায় গামছা পেছিয়ে জানালার গ্রিলের সাথে ঝুঁলিয়ে রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আত্মহত্যা বলে প্রচার করছে।

    এদিকে অক্সিজেন এলাকার কুয়াইশ সংযোগ সড়কের বাসিন্দা আহম্মেদ শাকিল এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, মা বাবার স্বপ্ন গুলোকে এভাবেই হত্যা করছে শিক্ষক নামের কুলাঙ্গার গুলো।

    তিনি বলেন লাশ উদ্ধারের সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম। হেফজ বিভাগের ছাত্র হাবিবুর রহমান বয়স আর লক্ষন দেখে মনে হয়না এই ছেলে ফাঁস খেতে পারে বা ফাঁস খাওয়ার মত মন মানসিকতা জন্মাতে পারে। তাকে নির্যাতন করে হত্যার পর ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে রাখা হয়েছে।

    নিশাদ নামে অপর এক স্থানীয় জানালেন এর আগেও বেশ কয়েকবার এই মাদ্রাসায় ছাত্রদের বলাৎকার হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। দেন দরবার আর টাকা পয়সার মাধ্যমে ঘটনাগুলো ধামাচাপা পরে যায়। এ মাদ্রাসার সাথে এলাকায় কারো সাথে সম্পৃক্ততা না থাকায় সুযোগ কাজে লাগায় হুজুর নামের নরপিশাচ গুলো।

    বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স…

    আরো খবর :: নুসরাতে চিঠিতে অধ্যক্ষের লালসার বর্ণনা

    নুসরাত হত্যার তদন্ত তনুর মতো না হয় : হাইকোর্ট