মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী ব্যবস্থাপনায় শক্ত অবস্থানে সরকার

    বিএম ডেস্ক : বন্ধু প্রতীমদেশ মালয়েশিয়া। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম স্বীকৃতিকারী মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিস্তৃত হয়ে চলেছে। বর্তমানে রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বাংলাদেশ মালয়েশিয়া সুসম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

    দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এ দেশটি বাংলাদেশিদের জন্য ইতিবাচক। এ সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশিকর্মী নিয়োগে বাংলাদেশ হতে মালয়েশিয়া পর্যন্ত রয়েছে দালাল ও মানবপাচারকারী চক্রের নানান অপতৎপরতা। যদিও বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার দালাল ও মানব পাচার রোধে রয়েছে কঠোর আইন। আর এ আইনকে বাস্তবায়নে এবং কর্মী ব্যবস্থাপনায় স্ট্যান্ডার্ড অর্জনে কাজ করে চলেছে দুই দেশের সরকার।

    মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্টসূত্রে জানাগেছে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের নানান অবৈধ প্রক্রিয়ায় কর্মী প্রেরণ করা হচ্ছে অনবরত।

    ফলে সেদেশের সরকার দফায় দফায় বৈধ হওয়ার সুযোগ দেয়া সত্বেও অবৈধ বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। যা স্থগিত হওয়া জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগে বাধাগ্রস্ত করছে বলে জানা গেছে।

    এদিকে স্থগিত কর্মী নিয়োগ পুন:রায় উম্মুক্ত করতে এবং অবৈধদের বৈধতা ও প্রতারনার শিকার কর্মীদের সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখলেও নামধারি কথিপয় দালাল চক্র আগাম তৎপরতা ও ভুলবার্তা দিয়ে এ প্রক্রিয়াকে ফেলেছে জটিলতায়।

    কেননা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মাহাথির সরকারের স্পষ্ট ঘোষণা এবং বাংলাদেশ সরকারের স্পষ্ট অবস্থান থাকা সত্বেও মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের কতিপয় এজেন্টদের তৎপরতা কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করছে।

    ফলে দুটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় নির্দিষ্ট হওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে মালয়েশিয়া সরকার সতর্কতা অবলম্বন করছে।

    পক্ষান্তরে বাংলাদেশি কর্মীদের স্বার্থই ক্ষুন্ন হচ্ছে। মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশিসহ সকল প্রবাসী কর্মীদের স্বার্থসুরক্ষা দিতে বদ্ধপরিকর।

    সূত্র জানায়, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অর্জনে সচেষ্ট রয়েছে তারা। বিগত রি-হিয়ারিং প্রোগ্রামে বৈধতার আওতায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক প্রতারণার শিকার হয়ে অজানা আশংকায় ভুগছেন। এদের বৈধতার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য হাইকমিশনের অনুরোধে মালয়েশিয়া সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

    পাশাপাশি যেসকল কোম্পানি বা এজেন্ট প্রতারনা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও হাইকমিশন করেছে বলে জানা গেছে।

    প্রায় ৫০ হাজারেরও অধিক কর্মী এখনও ভিসা প্রাপ্তির আশায় প্রহর গুনছেন। এ ছাড়া ১ লাখেরও বেশি নিবন্ধিত হয়েও প্রতারনার শিকার হয়ে দিকবিদিক ছুটাছুটি করছেন। এখনও বৈধতার স্পেশাল পাশ করিয়ে দেয়ার নামে প্রচারণা চলছে যা মালয়েশিয়া সরকারকে কঠোর হতে বাধ্য করছে। ফলে বৈধ কর্মীরাও এখন নানান সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন।

    মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় স্বাধীন কমিটি দেশটির উপ প্রধানমন্ত্রী ওয়ান আজিজাহর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। আলোচনায় বিদেশি কর্মী ব্যবস্থাপনায় সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে।

    এ বিষয়ে ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, প্রবাসীদের সকল সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা। প্রবাসে একজন কর্মী যে কারনেই অবৈধ হোক না কেনো, তিনি যেহেতু বাংলাদেশের নাগরিক তার দায়িত্ব সরকার নেবে এবং নিচ্ছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

    বর্তমান সরকার প্রবাসীদের বিষয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে উল্লেখ করে ইমরান আহমেদ বলেন, বিশ্বের যেখানেই প্রবাসীদের সমস্যা হোক না কেন, দূতাবাসগুলো তার সমাধানে বদ্ধ পরিকর।

    প্রতিমন্ত্রী কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেনো কোম্পানী পরিবর্তন না করেন। অনেক কর্মী আছে, যারা এক কোম্পানীর ভিসায় গিয়ে বেশি বেতনের আশায় কোম্পানী পরিবর্তন করেন। এটা করলে তারা অবৈধ হয়ে যাবেন। তখন তারা নানা সমস্যায় পরেন। তাই প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সে দেশের আইন কানুন ভালোভাবে জেনে, সেগুলো মেনে চলার আহ্বান জানান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্হান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমেদ।

    এদিকে মালয়েশিয়ার মাহাথির সরকার, বিগত সরকারের অনেক নীতি ও সিদ্ধান্তের রিভিউ করলেও বিদেশী শ্রমিকদের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি। এ সুযোগে আগাম বিশেষ কয়েকটি ঘটনা ঘটে চলেছে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের আদম বেপারীদের মধ্যে।

    বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাংলাদেশ পক্ষে এমন কিছু কর্মকান্ড করা হচ্ছে তা পক্ষান্তরে মালয়েশিয়ার জন্য বিব্রতকর।

    অপরদিকে প্রতারণার ফাঁদ পাতানো বন্ধ হচ্ছে না। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে।

    আর ওই সব কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, উইচ্যাটসহ ভিন্ন অবলম্বন। প্রবাসীকর্মী হতে সরকারের আইনগত পদ্ধতি আছে এবং এ সম্পকির্ত আইনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নীরব থাকে।

    শক্তিশালী একটি ভিজিলেন্স টিম এবং তাতক্ষণিক শাস্তি প্রদানের জন্য ১১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করা হলেও প্রতারকদের বিরুদ্ধে দৃশ্যত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নি।

    এ বিষয়ে প্রবাসীদের নিয়ে সোচ্চার সংগঠনগুলো সরকারকে বারবার দাবি জানিয়ে আসলেও অজ্ঞাত কারণে সরকার চুপ রয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি সর্বাগ্রে অভিবাসনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হলে বাংলাদেশ বেশি উপকৃত হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

    বিএম/রনী/রাজীব