রাজাকার পুত্রের হামলায় আহত মহেশখালী প্রেসক্লাব সম্পাদক : সাংবাদিকদের নিন্দা ও প্রতিবাদ

    বিএম ডেস্ক : কক্সবাজারের মহেশখালী পৌরসভার মেয়র ও রাজাকার মৃত হাশেম সিকদারের ছেলে মকছুদ মিয়ার নেতৃত্বে সন্ত্রাসী হামলাযর শিকার হয়েছেন মহেশখালী উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর এম ছালামত উল্লাহ।

    গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা ছালামত উল্লাহকে উদ্ধার করে প্রথমে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে পর্যবেক্ষণ করে তার অবস্থা আশংকাজনক জানিয়ে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

    মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাত সাড়ে নয়টার দিকে মহেশখালী পৌরসভা বাজারে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় প্রথমে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাঝে ক্ষোভ দেখা গেলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুরো সাংবাদিক সমাজেই ক্ষোভ ও তীব্র নিন্দার ঝড় উঠে। প্রতিবাদ জানিয়েও স্ট্যটাস দিচ্ছে সিনিয়র সাংবাদিকরা।

    আহত ছালামত উল্লাহ জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে আজ পর্যন্ত মকছুদ মিয়ার পরিবার ক্ষমতার কাছাকাছি থেকে সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতন চালাতো। তার তিন ভাই বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। ক্ষমতার পালাবদল হলে মকছুদ মিয়া আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়। বর্তমান সাংসদের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত। পৌরসভার একজন কাউন্সিলর ও সাংবাদিক হিসেবে আমি তার বিভিন্ন অনিয়মের বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ করে আসছি।

    ফলে তিনি আমার উপর ক্ষুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন সময় আমাকে হত্যার হুমকি দিতো। মঙ্গলবার আমি বাড়ি যাওয়া পথে তার নেতৃত্বে একদল যুবক আমার গতিরোধ করে আমার উপর হামলা চালায়। তাদের হাতুড়ি ও লোহার রড়ের আঘাতে আমার হাত ভেঙ্গে যায়। তাদের মারধরের এক পর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। জ্ঞান ফিরে দেখি আমি হাসপাতালে আছি।

    অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মহেশখালী পৌর মেয়র মকছুদ মিয়া জানান, মঙ্গলবার রাতে ছালামত উল্লাহর সাথে যখন ঘটনা হয় তখন আমি কক্সবাজারে ছিলাম। আমি ঘটনা সম্পর্কে অবগত নয়। পরে লোকজন আমাকে ফোন করে জানিয়েছে। তবে আহত কাউন্সিলর ছালামত উল্লাহর সাথে নানা বিষয় নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে প্রায় সময় মারমারি হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।

    তবে এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন মহেশখালী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রভাষ চন্দ্র ধর। তিনি বলেন, উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের উপর হামলা হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু এখনো আমাদের কাছে লিখিত কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।

    স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মকছুদ মিয়ার পিতা মো: হাশেম একজন চিহ্নিত তালিকাভক্ত যুদ্ধাপরাধী। তার বড়ভাই আবু বক্কর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক, ছোটভাই কায়সার মহেশখালী পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আরেকভাই আতা উল্লাহ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। তার পরিবার যুদ্ধাপরাধের অপরাধ আড়াল করতে রাজনৈতিক ছাত্র ছায়ায় থেকে ক্ষমতার কাছাকাছি অবস্থান করেন বলে দাবি তাদের।

    এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মহসিন কাজী, নির্বাহী সদস্য রুবেল খান ও আজহার মাহমুদ।

    প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব মহসিন কাজী তার ফেসবুক টাইমলাইনে আহত সাংবাদিক ছালামত উল্লাহর একটি ছবি পোস্ট করে তাতে লিখেছেন,

    ছবিটি মহেশখালী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও মহেশখালী পৌরসভার কাউন্সিলর এম. ছালামত উল্লাহ’র। তার উপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে পঙ্গু করে দেয় রাজাকার পুত্রের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা। এ ছবি দেখে গা শিউরে উঠবে যে কারও। চোখের জল সংবরণ করা যাচ্ছে না।
    সাংবাদিক ছালামত উল্লাহ’র উপর হামলাকারী এবং ইন্ধনদাতা রাজাকার পুত্র যতই শক্তিশালী হোক তাদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। একই সঙ্গে হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

    তাছাড়া চট্টগ্রামের একাধিক সাংবাদিক এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

    বিএম/রাজীব সেন…