কবরস্থানে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন : ঘুমিয়ে সিডিএ!

    বিশেষ প্রতিবেদন : চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় কবরস্থানে বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা গত ২ এপ্রিল একটি লিখিত অভিযোগ দেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালামের হাতে। তিনি অভিযোগ গ্রহণ করে ব্যবস্থা নিতে অথরাইজড অফিসার-০১ মঞ্জুর হাসানকে নির্দেশ দেন।

    তবে এখনো আশানুরূপ সাফল্য আসেনি, চলছে নির্মাণ কাজ। অভিযোগ উঠে, একটি চক্র সিডিএ’র দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই গড়ে তুলছে বহুতল এই ভবন। ফ্ল্যাট দেওয়ার শর্ত এখানে ওপেন সিক্রেট।

    সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ ইতিমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের হেড অফিসে জমা হয়েছে৷ তদন্ত প্রক্রিয়াধীন আছে।

    সরেজমিনে দেখা গেছে, চান্দগাঁও আ/এ বি-ব্লক জামে মসজিদ কমপ্লেক্স এর উত্তর পাশে কবরস্থানের এক তৃতীয়াংশ জায়গায় বিশাল স্থাপনা নির্মাণ কাজ চলছে। অথচ সিডিএ কিছুই জানেনা! ইতিমধ্যে উনসত্তরটি পাইলিং সম্পন্ন হয়।

    স্থানীয়রা অভিযোগ দেওয়ার পর সিডিএ কাজ বন্ধ রাখতে মৌখিক নির্দেশ দিলেও তা অমান্য করে গত শুক্রবার ভবনের বেইস ঢালাই করতে দেখা গেছে। এখন ৯টি পিলার উঠানো হয়েছে। যেহেতু এটি কবরস্থানের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গা, এখানে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অনুমোদন দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা।

    স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আবাসিক এলাকা হবার আগে থেকেই পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দাদের শত বছরের পুরনো কবর ছিল এখানে। পরবর্তীতে আবাসিক এলাকা করা হলে প্লট মালিকদের জন্য বরাদ্দ রাখে সিডিএ। মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি সাক্ষরিত একটি প্রতিবেদনে এ জায়গায় দশ তলা ভবন নির্মাণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

    নীচতলায় অজুখানা, দ্বিতীয় তলায় মসজিদের ইমাম মোয়াজ্জেম ও স্টাফদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থাসহ বাকী আট তলায় ফ্ল্যাট ঘর ভাড়া দিয়ে মসজিদের জন্য তহবিল সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে। এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রভাবশালী একটি চক্র এই অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তৎপর। এই মসজিদে মুসল্লিরা যে অনুদান দেয়, এতে মসজিদ নির্মাণ থেকে আজ পর্যন্ত কখনো অর্থের অভাব দেখা দেয়নি।

    সরকার তথা সিডিএ নীতিমালা অনুযায়ী, তাদের আওতাধীন এলাকায় যে কেউ স্থাপনা নির্মাণের আগে নকশাসহ লিখিত অনুমোদন নেয়া বাধ্যতামূলক। তাছাড়া এটি ব্যক্তি মালিকানাধীন বা পরিত্যক্ত জায়গা নয়। যেহেতু এটি কবরস্থানের জন্য বরাদ্দকৃত জমি, প্ল্যান বদলে অনুমোদন দেওয়া বা কোন ভবন নির্মাণে সুযোগ নেই। এখানে ধর্মীয় অনুভূতির বিষয় জড়িত।

    চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় স্কুল-কলেজ, খেলার মাঠ, মসজিদ, কবরস্থানসহ ইত্যাদি নাগরিক সুবিধা প্ল্যানে বরাদ্দ রেখে প্লট বিক্রয় করেছিল সিডিএ। যেখানে প্রত্যেক প্লট মালিকগণের পরিবার সমান অধিকার রাখে। মুসল্লিদের অনুদানে একটি দৃষ্টিনন্দন চারতলা মসজিদ নির্মিত হয় অনেক বছর আগেই। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাযে ও ঈদে একসাথে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ নামায আদায় করেন। মসজিদে মুসল্লিদের জন্য অজুখানা ও গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধাও আছে। সিডিএ প্রায় ষাট লক্ষ টাকা অর্থায়নে সম্প্রতি মসজিদের একটি দৃষ্টিনন্দন গেইট নির্মাণ করে।

    এদিকে, বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে মসজিদটি পরিচালনায় একজন সিডিএ কর্মকর্তাকে প্রধান করে পরিচালনা পর্ষদ গঠনের দাবি জানান স্থানীয়রা। কোন নিয়মের তোয়াক্কা না করেই গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল এপার্টমেন্ট। অচীরেই দাঁড়িয়ে যাবে অবৈধ এই স্থাপনার প্রথম তলার ছাদ। আর অর্থায়ন করছে জামায়াতের এক শীর্ষ নেতা।

    স্থানীয় সরকার দলীয় নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই জামায়াত নেতা এলাকায় যা খুশি তাই করছেন। উন্নয়নের নামে রীতিমতো সরকারকে হেয় করা হয়। কয়েকবছর আগে পত্রিকার মাধ্যমে তিনি বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের বর্ধিত অংশ (বহদ্দারহাট মোড় থেকে পেপসি মোড় পর্যন্ত) নির্মাণে সিডিএ-কে চুক্তি ভিত্তিক কোটি টাকা লোন দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

    একইভাবে প্রস্তাব রাখেন অত্র এলাকায় হোল্ডি টেক্স নিজস্ব লোক দিয়ে আদায় পূর্বক নিজেরাই উন্নয়ন করবেন। ইতিমধ্যে তিনি নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় সড়ক, নালা বিভিন্ন উন্নয়ন করেন। অথচ সরকারি রাস্তা কিংবা জায়গায় একটি গর্ত করতেও লিখিত অনুমোদন নেওয়ার বিধান আছে। আর উন্নয়ন প্রকল্প গুলো বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা কেবল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

    অর্থের উৎস ও অনিয়মের বিষয় গুলো খতিয়ে দেখা উচিৎ বলে মনে করছেন সচেতন নগরবাসী। সরকারি জমি দখলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও জমি উদ্ধারে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান এলাকাবাসী।

    ভিডিও দেখুন :