সোহেলের পরিবারে উপযুক্ত কেউ থাকলে চাকরি পাবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

    বিএম ডেস্ক : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, রাজধানীর বনানীতে এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে উদ্ধারকাজে অংশ নিয়ে আহত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন মারা যাওয়া ফায়ার সার্ভিসকর্মী সোহেল রানার পরিবারে উপযুক্ত কেউ থাকলে তাকে চাকরি দেয়া হবে।

    আজ মঙ্গলবার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদর দফতরে সোহেল রানার প্রথম জানাজা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

    সোহেল রানার প্রথম জানাজা

    তিনি বলেন, ফায়ারম্যান সোহেল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। ফায়ার সার্ভিসসহ আমরা সবাই তার পরিবারের প্রতি লক্ষ রাখব।

    সোহেল রানার পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ক্ষতিপূরণ নয়, আমরা তার পরিবারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। ইতিমধ্যে ফায়ার সার্ভিস তাকে সহযোগিতা করেছে, প্রধানমন্ত্রীও সহযোগিতা করবেন। ভবিষ্যতে আপনারা তা দেখতে পারবেন। মন্ত্রী বলেন, সোহেল রানা মানুষকে ভালোবাসতেন, দেশকে ভালোবাসতেন- এর প্রমাণ তিনি রেখে গেছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এফআর টাওয়ারে উদ্ধার করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। তার মৃত্যুতে গোটা জাতি শোকাহত। তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

    সোহেল রানার চিকিৎসার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করেছি। প্রথমে তাকে সিএমএইচে নেয়া হয়েছে, এর পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়।

    প্রসঙ্গত ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারের ভয়াবহ আগুনে ঘটনাস্থলে ২৫ জন ও হাসপাতালে একজন নিহত হন। আগুনের ঘটনায় উদ্ধার অভিযানে গিয়ে আহত ফায়ার সার্ভিসকর্মী সোহেল রানা সিঙ্গাপুরে জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা গেছেন। সিঙ্গাপুরের স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়।

    ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ জানান, বাংলাদেশ সময় রোববার দিবাগত রাত ২টা ১৭ মিনিটে সোহেল মারা যান। সোমবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে করে তার মৃতদেহ দেশে আনা হয়।

    ২০১৫ সালে মুন্সীগঞ্জের কমলাঘাট নদী ফায়ার স্টেশনে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন সোহেল রানা। এর কয়েক মাস পরেই বদলি হন কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনে। গত ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পর উদ্ধার অভিযানে যোগ দেন রানা। ২৩তলা ওই ভবনে আটকাপড়া মানুষকে ল্যাডারের মাধ্যমে নামাচ্ছিলেন তিনি। সোহেল চার-পাঁচজন আটকেপড়া মানুষ নিয়ে নামার সময় দেখেন তার উদ্ধারকারী ল্যাডারটি ওভারলোড দেখাচ্ছে।

    ওভারলোড হলে সাধারণত সিঁড়ি নিচে নামে না, স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক হয়ে যায়। এ অবস্থায় ল্যাডারের ওজন কমাতে একপর্যায়ে সোহেল ল্যাডার থেকে বেয়ে নিচে নামতে থাকেন। এতে ল্যাডারটির ওজন কমে যাওয়ায় সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়। এরপরই দুর্ঘটনাটি ঘটে, যা তার জীবনের আলো নিভিয়ে দিল।

    দুর্ঘটনার পরপরই সোহেল রানাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রতিদিন চার ব্যাগ রক্ত দিলেও প্রত্যাশানুযায়ী উন্নতি হচ্ছিল না। পরে সিএমএইচের চিকিৎসকদের পরামর্শে গত ৫ এপ্রিল রানাকে পাঠানো হয় সিঙ্গাপুরে। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

    বিএম/রনী/রাজীব