চলন্ত ট্রেনে দুর্বৃত্তের পাথর নিক্ষেপ : এবার আহত হয়ে গার্ড হাসপাতালে

    মোরশেদ রনী : চলন্ত ট্রেনে দুর্বৃত্তের পাথর নিক্ষেপে এবার আহত হয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের গার্ড আবুল বাসার ডালি (৪৫)।

    ঢাকাগামী চলন্ত মহানগর ট্রেনে দুর্বৃত্তরা পাথর নিক্ষেপ করে। এতে তার মুখে পাথরের আঘাত লেগে ঠোট ফেটে যায়। ট্রেনটি কমলাপুুর স্টেশনে পৌঁছালে তাকে রেলওয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

    আহত গার্ড ডালি

    কে বা কারা পাথর নিক্ষেপ করেছে সেটা বুঝতে পারেননি তিনি।

    বিগত দেড় বছরে দুইশত বারের উপরে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ হয়েছে বলে সূত্রে জানা যায়। পাথর নিক্ষেপে যাত্রীর প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটেছে ইতিপূর্বে।

    গত ১৮ এপ্রিল দিনাজপুর গামি দোলোন চাপায় রংপুর শ্যামপুরের মাঝে পাথর নিক্ষেপের কারনে এক যাত্রীর ঠোটের উপরে আঘাত লাগলে অনেক রক্ত পাত হয়।

    দোলন চাপার সেই যাত্রী

    এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি মায়ের কোলে থাকা মাত্র দেড় বছর বয়সী শিশুর মাথায় আঘাত লাগে দুর্বৃত্তের ছোড়া পাথরের। তাৎক্ষণিক ট্রেনে এক ডাক্তার যাত্রী থাকায় শিশুটি প্রাথমিক চিকিৎসা পেয়েছিল।

    আহত সেই শিশু

    চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ রোধে ইতিপূর্বে বেশ কিছু জনসচেতনতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছিল রেলকর্তৃপক্ষ। তবুও থেমে নেই দুর্বৃত্তের পাথর নিক্ষেপে।

    রেলওয়ের গৃহীত কর্মসূচীঃ

    ১। পোষ্টারিং ও স্টিকারের মাধ্যমে আইন ও সচেতনতামূলক তথ্য বিতরন।
    ২। বিপদজনক চিহ্নিত এলাকা গুলোর চেয়ারম্যানের সাথে মিটিং ও পদক্ষেপের অনুরোধ।
    ৩। আইন, ধারা ও শাস্তি সম্পর্কে যাত্রী ও রেলপথের ধারে বসবাসরত অভিভাবকদের অবহিত করন।

    চলন্ত ট্রেনে এখন বড় আতঙ্কের নাম পাথর নিক্ষেপ। প্রচলিত আইন দিয়ে কোনভাবেই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বন্ধ করতে কঠোর আইন করতে যাচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

    এ আইনে জরিমানার পাশাপাশি যুক্ত হচ্ছে শাস্তির বিধান। গত ১ বছরে দেড় শতাধিক ঘটনায় ট্রেন যাত্রী ও রেলকর্মচারী সহ আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। পাথর বা ঢিল ছোড়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে দেশের ২০ জেলায়। তারমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ৫ টি জেলার ৩৬ টি স্পট ও পশ্চিমাঞ্চলের ১৫টি জেলার ২৯টি স্পটে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে পাথরের আঘাতে আহত ও নিহতের সংখ্যাও। এছাড়াও এক সমীক্ষায় দেখা গেছে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ৭৫% ঘটনায় জড়িত ‘অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানেরা’। ইতিমধ্যে দেশে ‘অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান’ কর্তৃক চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় দায়ীদের জন্য কঠোর আইন বিদ্যমান রয়েছে।

    পাথর নিক্ষেপ রোধে রেলওয়ে আইনসমূহঃ
    ১) ১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের জন্য একজন অপরাধীর যাবজ্জীবন বা ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড হতে পারে।
    ২) উদ্দেশমূলকভাবে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুঁড়ে রেলযাত্রীর মৃত্যুর কারণ বলে প্রমাণিত হলে ৩০২ ধারায় ফাঁসির বিধান রয়েছে।
    ৩) ‘অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান’-এর অপরাধের ক্ষেত্রে রেলওয়ে আইন ১৮৯০ অনুযায়ী অভিভাবকের শাস্তির বিধান রয়েছে।

    তাই, আপনার সন্তান যেন কোনভাবেই রেলওয়ের কোন অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।

    বিএম/রনী/রাজীব