লবণহীন জনজীবন কল্পনাও করা যায় না-শিল্প সচিব

    কক্সবাজার প্রতিনিধি : কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রলোভনে লবণ আমদানি করা হবে না বলে জানিয়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল হালিম। তিনি বলেছেন, দেশের একমাত্র সয়ংসম্পূর্ণ কৃষিপণ্য লবণ শিল্প রক্ষায় করণীয় সব কার্যক্রম করবে মন্ত্রণালয়।

    কক্সবাজারে লবণ চাষী পরিসংখ্যান নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন। কক্সবাজারের বিয়াম ফাউন্ডেশনের হলরুমে শিল্পমন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব ‘পিআরআইএসএম’র ন্যাশনাল প্রজেক্ট ডিরেক্টর মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি আরো বলেন, লবণহীন জনজীবন কল্পনাও করা যায় না। নিত্যদিনের সবরকমের খাবার এবং পরিধেয় পণ্যেও লবণের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তাই লবণ উৎপাদনকারিরা দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।

    জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল পণ্য কম-বেশি আমদানি করতে হয়। কিন্তু একমাত্র লবণই দেশে চাহিদার শতভাগ উৎপাদন হচ্ছে।

    কর্মশালায় কক্সবাজার লবণ মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল কাদের মাস্টার ও লবণ চাষী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কায়সার ইব্রাহিম বলেন, মাঝে মাঝে দেশের চাহিদার অতিরিক্ত লবণ উৎপাদন হলেও মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রয়োজনের অধিক শিল্পলবণ (সোডিয়াম সালফেক্ট) আমদানি করা হয়। এটি স্বল্প সুল্কে আনা যায় বলে দেশিয় লবণের চেয়ে দাম কম পড়ে। তাই দেখতে লবণের মতো কিন্তু শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এসব সোডিয়াম সালফেক্ট লবণ হিসেবে অসাধু আমদানিকারকরা বাজারজাত করছে। এতে দেশীয় লবণ শিল্প মার খাচ্ছে। অনেকে লবণ উৎপাদন থেকে সরে এসে ভিন্ন পেশায় মনোনিবেশ করছে।

    এর জবাবে সচিব বলেন, বিসিকের তথ্য মতে- কক্সবাজারের ৭ উপজেলা ও চট্টগ্রামের ২ উপজেলায় ৫৯ হাজার ৫৬৪ একর জমিতে লবণ উৎপাদন হয়। এবছর লবণের চাহিদা প্রায় ১৭ লাখ মেট্রিক টন। গত ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিকটন উৎপাদন হয়েছে। আগামী সপ্তাহ দু’য়েক আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চাহিদার উদৃত্ব উৎপাদন হবে বলে আশা করা যায়। তাই এ শিল্পকে বাঁচাতে কারো প্রলোভনে অহেতুক লবণ আমদানি করা হবে না।

    বক্তারা বলেন, আমরা জেনেছি লবণ চাষীরা দাদনে জর্জরিত থাকেন বলেই ন্যায্য মূল্য পান না। তাই আগামী মৌসুম হতে লবণ চাষীদের জন্য সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হবে।

    সেমিনারে বক্তব্য রাখেন, বিসিক চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ, বিসিক চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পরিচালক মহসীন কবীর খান, বিসিক পরিচালক আতাউর রহমান সিদ্দিকী, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এডিএম শাহজাহান আলী ও বিসিক কক্সবাজারের ডিজিএম সৈয়দ আহমদ প্রমূখ।

    বিসিক কক্সবাজারের কর্মকর্তা ইদ্রিস আলীর সঞ্চালনায় ‘সল্ট সেনসাস ডিসিমিনেশন প্রোগ্রামে’ পরিসংখ্যানের যাবতীয় প্রজেক্টরের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন, ড. আমীর হোসাইন। সেখানে দেখানো হয়, ৬০ এর দশকে বিসিকের যাত্রাকালে মাত্র ৬ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন শুরু হয়। তখন উৎপাদন হতো এক থেকে দেড় লাখ টন। আর ৫৫ বছরে লবণ উৎপাদনের জমির পরিমাণ প্রায় ৬০ হাজারে উন্নিত হয়েছে। সাড়ে ২৭ হাজার লবণচাষী এখন লবণ উৎপাদন করে প্রায় ১৭-১৮ লাখ মেট্রিকটন। জমির পরিমাণ ঠিক রেখে কিভাবে উৎপাদন আরো বাড়ানো যায় সে গবেষণা চলছে।

    বিএম/ইসলাম/রাজীব…