কোরবানীগঞ্জে গৃহবধু খুন : হত্যার পর আলামত নষ্ট করতে আগুন দিয়েছে খুনি

    চট্টগ্রাম মেইল : চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার কোরবানীগঞ্জ এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে বাসায় ঢুকে ব্যবসায়ীর স্ত্রীকে হত্যার মূল খুনী ও খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। হত্যাকান্ডের মাত্র ৯ ঘন্টার মধ্যেই খুনীকে গ্রেফতার করতে পুলিশ সক্ষম হয়। উদ্ধার করেছে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছোরা ও লুটপাট হওয়া সকল মালামাল।

    মঙ্গলবার রাত সোয় ১০টার সময় কর্ণফুলি থানার মইজ্জারটেক এলাকা থেকে খুনী মো. সোহেল (৩৫) কে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে কালো একটি টিশার্ট পড়ে মুখে মাস্ক লাগিয়ে ঘরে ঢুকে ছুরিকাঘাত করে হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে সোহেল। চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানাধীন কোরবানীগঞ্জের বাইন্নাপট্টি এলাকার আল আমিনের মালিকানাধীন ভবনে খুনের ঘটনাটি ঘটে।

    আজ ১ মে বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় কোতোয়ালি থানার ওসির রুমে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে খুনীকে গ্রেফতার ও হত্যাকান্ডের বিবরণ গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে তুলে ধরেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম।

    তিনি বলেন, খুনী সোহেল খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ি আবুল কাশেমের দুঃসম্পর্কীয় ভাগিনা হয়। সে খাতুনগঞ্জে ছোট খাটো ভ্রাম্যমান ব্যবসায় জড়িত। বিগত কয়েকমাস যাবৎ সে ব্যবসায় লস খেয়ে অনেক টাকা দেনায় পড়ে। এ দেনার টাকা যোগাড় করতে মঙ্গলবার দুপুরে সোহেল খেলনার একটি পিস্তল ও ধারালো চাকু ব্যাগে নিয়ে তার মামার বাসায় যায়। সেখানে গিয়েই সে তার দুঃসম্পর্কিত মামিকে বাসায় একা পেয়ে তার কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করে।

    মূলত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সোহেল তার কাঁধে থাকা ব্যাগ থেকে খেলনা পিস্তল বের করে গৃহবধু রোকসানাকে ভয় দেখায়। এসময় রোকসানা তাকে মেরে ফেললেও সোহেলকে কোন টাকা পয়সা দেবেনা বলায় সে ক্ষুদ্ধ হয়ে ব্যাগে থাকা ধারালো চাকু বের করে রোকসানার পেটে, পিঠে ও হাতে উপুর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করে। এক পর্যায়ে রোকসানা মাঠিতে লুটিয়ে পড়লে তার মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ছুরিকাঘাত করতে থাকে সোহেল। একসময় রোকসানার শরীর নিস্তেজ হয়ে গেলে সোহেল তার ব্যবহৃত দামী মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, তেল ব্যবসার কিছু ডিও লেটার ও ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা স্বর্ণ ও ইমিটেশন লুট করে পালানোর চেষ্টা করে।

    আমেনা বেগম প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের বরাত দিয়ে আরো বলেন, মালামাল লুট করে পালানোর সময় ঘরে প্রবেশ করে ব্যবসায়ি আবুল কাশেম ও নিহত রোকসানার ছোট ছেলে আব্দুল আজিজ (২৩)। তাকেও পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করে টেনে বেডরুমে নিয়ে যায়। তার চিৎকারে বাসার কাজের বুয়া ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে চারতলায় ছুটে আসে। এরপর খুনী নিহত রোকসানা ও তার ছেলে আজিজ ও কাজের বুয়া ইয়াসমিনকে আঞ্চলিক ভাষায় পুড়িয়ে মারার উদ্দ্যেশে ভেতরে নিয়ে আটকে রাখে এবং কিছুক্ষণ পর খুনের ঘটনার আলামত লোপাট করার লক্ষ্যে রান্নাঘরের পুরনো কিছু কাপড় ও বালিশের তুলোয় আগুন ধরিয়ে পুরো ঘরে ছড়িয়ে পালিয়ে যায়।

    পালানোর সময় আব্দুস সোবাহান নামে এক পথচারী সোহেলকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে সে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছোরাটি রাস্তায় ফেলে দেন। পরবর্তীতে খুনী সোহেল প্রথমে খাতুনগঞ্জের আমির মার্কেট এলাকাস্থ নিউ পার্ক বিল্ডিংয়ে আত্মগোপন করে। ভবনের ৩য় তলার বাথরুমে হত্যাকান্ডের সময় পরনে থাকা গেঞ্জি, প্যান্ট স্যান্ডেল ও খেলনার পিস্তলটি রেখে সন্ধ্যায় কর্ণফুলি থানা মইজ্জারটেক এলাকায় ১৮শ টাকায় নতুন একঠি বাসা ভাড়া নেয় সোহেল। পরে সোহেল তার স্ত্রীকে নতুন বাসায় আসতে বললে প্রযুক্তির ব্যবহারে মোবাইল ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে পুলিশ গিয়ে খুনী সোহেলকে গ্রেফতার করে।

    খুনী সোহেলকে গ্রেফতার অভিযানের নির্দেশনায় ছিলেন কোতোয়ালী জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা, কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন ও পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান। টিমে অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এস আই আকতার হোসেন, আব্দুর রব, আইয়ুব উদ্দিন, মো. হারুন অর রশিদ, কে এম তারিকুজ্জামান, ইসটিম চাকমা, এএসআই অনুপ কুমার বিশ্বাস, রুহুল আমিন, নাসের আহমেদ ও জয়নাল আবেদিন অংশগ্রহণ করেন।

    কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে ঘরে ঢুকে গৃহবধুকে খুনের প্রধান আসামি মো সোহেল নিহতের স্বামী আবুল কাশেমের দুঃসম্পর্কীয় আত্মীয়। হত্যাকান্ড সংঘঠিত হওয়ার পর পর ওই এলাকায় কয়েকটি সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে খুনীকে সনাক্ত করা হয়। এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে মাত্র ৯ ঘন্টার মধ্যেই খুনীকে গ্রেফতার করা হয়। তাছাড়া খুনীর দেওয়া তথ্যমতে খুনের সকল আলামত ও লুটপাট হওয়া সকল মালামালও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান ওসি।

    তিনি জানান, খুনী সোহেল চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী ঈদ পুকুরিয়া রফি সওদাগর বাড়ির জামাল উদ্দিনের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে সে নগরীর বাকলিয়া থানা ময়দার মিল এলাকার বেলাখান মসজিদ সংলগ্ন নুরুল হক হাজীর কলোনীতে ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছেন।

    বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স…