ঠাকুরগাঁওয়ে ধানের ন্যায্য মূল্যের দাবীতে কৃষকদের ঢাকা-ঠাকুরগাঁও মহাসড়ক অবরোধ

    ধান ভূট্টাসহ সকল কৃষি ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করণ, অবিলম্বে প্রতিটি ইউনিয়নে সরকারি ক্রয় কেন্দ্র চালু করে খোদ কৃষকদের কাছ থেকে ১০৪০ টাকা মণ দরে ধান ক্রয়ের দাবীতে কৃষক ক্ষেত মজুর সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শনিবার সকাল ১১টা হতে ঘন্টা ব্যাপী ঠাকুরগাঁও খোচাবাড়ী বাজারে কৃষকরা ঢাকা-ঠাকুরগাঁও মহাসড়কে অবরোধ কর্মসূচী পালন করে।

    বিক্ষোভ ও প্রতিবাদী সমাবেশ চলাকালীন সময়ে বক্তব্য রাখেন, বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা সমন্বয়ক মাহাবুব আলম রুবেল, থানা সিপিবি সভাপতি আহসানুল হাবিব বাবু, সংহতি বক্তব্য রাখেন জেলা উদীচী সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক রিজু, আরো বক্তব্য রাখেন, কৃষক নেত্রী পেঙ্গুলা রানী, কৃষক নেতা এরশাদুল, সাইফুল ইসলাম ও এ্যাডভোকেট সৌরভ, কৃষক আব্দুস সামাদ, ছাত্র নেতা আবু বক্কর সিদ্দিক প্রমুখ।

    সমাবেশে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন জতীশ চন্দ্র বর্মন।

    প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও ধানের ন্যায্য মূল্য থেকে কৃষক বঞ্চিত। ব্যবসায়ী বান্ধন সরকারী কৃষি নীতিই আজ
    কৃষকের দুর্দশার মূল কারণ। সরকার প্রতি কেজি ধানের মূল্য ২৬ টাকা নির্ধারণ করলেও বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৮-১২ টাকা দরে। যা দিয়ে কৃষকদের উৎপাদন খরচ উঠা তো দুরের কথা বিঘা প্রতি ৩-৫ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। সরকার উন্নয়নের বুলি আউরাচ্ছে। তার সরকারের আমালে দেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়েছে অথচ সরকারের সব
    সুবিধা থেকে কৃষকরা বঞ্চিত। ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে ক্রমাগত লোকসান করেও কৃষক বাম্পার ফলন ফলিয়ে যাচ্ছে। যারা ১৬ কোটি মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছে তাদের কে থাকতে হচ্ছে অনাহারে
    অর্ধাহারে! যারা দেশের অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত করছে, অথচ তাদের জীবনের ভিত্তিটাই আজ ধ্বংসের মুখে।

    বক্তরা আরো বলেন, কৃষক চাল উৎপাদন করে না অথচ সরকার চাল সংগ্রহ করে বেশি। আর নাম মাত্র ধান সংগ্রহ করে কৃষকদের সঙ্গে তামাশা করছে।

    বক্তারা ঠাকুরগাঁওয়ের উদাহরণ দিয়ে বলেন, এবার ঠাকুরগাঁওয়ে বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লক্ষ ৬৯ হাজার ৪৮১ মেট্রিক টন। সরকার চাল সংগ্রহ করবে ৩০ হাজার ৬ শ ১৯ মেট্রিক টন। যা মোট উৎপাদনের ১২.২৭%। অন্যদিকে ধান সংগ্রহ করবে ১ হাজার ৮শ ৫৭ মেট্রিক টন। যা মোট উৎপাদনের ০.৫০%। সারা দেশের মতো ঠাকুরগাঁওয়ের হিসাব বলে দেয়, সরকারের কৃষি নীতি কতটা কৃষি বান্ধব।

    বক্তারা আরো বলেন, ক্রমাগত ধান সহ কৃষি ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে কৃষক আজ ঋণগ্রস্থ, জমি হারিয়ে নিঃস্ব। গত ৪৭ বছরে ৫০ ভাগ কৃষক
    জমি হারিয়ে ভূমিহীনে রূপান্তর হয়েছে। জমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে বাঁচার তাগিদে বিদেশ যেতে গিয়ে ভূ-মধ্য সাগরে ডুবে মরছে। থাইল্যান্ডের ঘন জঙ্গলে গণ কবরে ঠাঁই হচ্ছে।

    বক্তারা আরো বলেন, দেশের উৎপাদিত ফসলের কমপক্ষে ৫০ভাগ প্রতিটি ইউনিয়নে সরকারি ক্রয় কেন্দ্র খুলে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য
    মূলে সংগ্রহ করতে হবে। ধান সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় গোডাউন নির্মাণ করতে হবে। উন্নয়ন বাজেটের কমপক্ষে ৪০ ভাগ কৃষি খাতে বরাদ্দ
    দিতে হবে। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী বান্ধব কৃষি নীতি নয়, কৃষক বান্ধব

    কৃষি নীতি এক মাত্র পারে দেশের কৃষি ও কৃষককে বাঁচাতে। সভা থেকে কৃষি ও কৃষক বাঁচতে দূর্বার চাষি আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্ববান জানানো হয়।

    বিএম/গৌতম/রনী