বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে প্রবাসী নারীর আইনি নোটিশ

    হয়রানি ও ভয়ভীতির অভিযোগ তুলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মানবাধিকার কর্মী শামিমুন নাহার।

    বৃহস্পতিবার (৯ মে) ডাক ও রেজিস্ট্রিযোগে লিপির পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান এ নোটিশ পাঠান।

    নোটিশ পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে হয়রানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন বন্ধ ও ক্ষতিপূরণ দিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে নোটিশ পাওয়ার পর এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবেও উল্লেখ করা হয়।

    নোটিশে প্রতিমন্ত্রী বিপুকে পারিবারিক বন্ধু দাবি করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলা হয়, আপনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে দীর্ঘদিন যাবত আপনার লোকজন দ্বারা শামীমুন নাহার লিপি ও তার পরিবারের সদস্যদের হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছেন।

    আমার মক্কেল লিপি বেশ কয়েকবার হামলার স্বীকারও হয়েছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বিভিন্ন সময় থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) ও মামলা (এফআইআর) দায়ের করেছেন। এছাড়া শামীমুন নাহার লিপিকে বিভিন্ন সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে হয়রানি ও তার মানবাধিকার অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। এসবের পিছনে প্রতিমন্ত্রীর হাত রয়েছে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।

    নোটিশে শামীমুন নাহার লিপি তার জীবননাশের আশঙ্কা করে নিরাপত্তা চেয়েছেন। একই সঙ্গে মানবাধিকার অফিস ভাঙচুর, মানসিক অশান্তির জন্য প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

    এর আগে, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গত ২৫ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন আমেরিকা প্রবাসী মানবাধিকার নেত্রী শামীমুন নাহার। তখন জানান, তিনি বিগত ৯ বছর পারিবারিক এসব বিষয়ে অন্তত ৫ বার সংবাদ সম্মেলন করেছেন। কিন্তু কোন সুফল পাননি।

    ওই সংবাদ সম্মেলনে হোপ’স ডোর বাংলাদেশ ও হিউম্যান রাইটস্ এ্যাক্টিভেজ (ইউএসএ) চেয়ারম্যান ও আমেরিকা প্রবাসী শামীমুন নাহার অভিযোগ করেন- বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু’র সহযোগিতা নিয়ে আপন ছোট বোন ডেইজি হাসান আইরিন তার পরিবারের সম্পত্তি দখল করে রেখেছে।
    অভিযোগে তিনি বলেন, তাঁর ছোট বোন অন্যদের সম্পদ দখল করে রেখেছেন। তার বড় ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে রাতের অন্ধকারে মাটি দিয়ে দিয়েছেন। তার এতিম দুই সন্তানকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। তাকেও (শামীমুন নাহার) বাবার সম্পদ থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। ছোট বোন এই সবই করতে পারছে জ্বালানী ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু’র সহযোগিতায়। নিজের ছোট বোনের সঙ্গে বিপুর বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

    বাংলাদেশী বংশদ্ভুত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, মানবাধিকার নেত্রী শামীমুন নাহার জানান, বিগত ৯ বছর যাবৎ অমানবিক নির্যাতন, সর্বস্তরে ভুল তথ্য প্রদান এবং প্রশাসনকে অবৈধ ভাবে ব্যবহার করে তার এলাকার সুশীল সমাজের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ছত্রছায়ায় বিভিন্ন লোক দিয়ে শামীমুন নাহারকে হত্যা ও গুম করার হুমকি দেয়া হয়, তাদের এমন হুমকিতে নিরাপত্তহীনতায় ভুগছেন তিনি। নসরুল হামিদ বিপু’র দ্বারা পারিবারিক অশান্তি ও পৈত্রিক সম্পত্তি দখল করে নেয়ার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।

    উক্ত সংবাদ সম্মেলনে তিনি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, তার প্রয়াত বড় ভাই আরিফুর রশীদের বড় ছেলে শাহরিয়ার নাফিজ ও আরিফুর রশীদের মেয়ে এলিজা। তারাও বিপু’র বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেন এবং ছোট বোন আইরিনের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন শামীমুর নাহার।

    সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার এ নেত্রী বলেন, ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে র্যাবেরমাধ্যমে ইয়াবা মামলাও দেয়া হয়। এ মামলাটি বিপুর প্ররোচণায় হয়েছে বলে তিনি জানতে পারেন। পরের বছর ২০১১ সালের ৯ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সে সংবাদ সম্মেলনেও বিপুর লোকজন হামলা চালায়।

    অভিযোগে আরও বলেন, ২০১২ সালের ১ জুলাই মাসে দ্বিতীয়বার আরো একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানেও বিপুর লোকজন তাকে হত্যার হুমকি ও ভয় দেখায়। এছাড়াও তার থাইরয়েড সমস্যাকে মাদক রিপোর্ট বলে বিপু অপপ্রচার করেছে বলেও এ সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।

    শামীমুন নাহারের অভিযোগ, ২০১৫ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি বিপুকে একটি লিগ্যাল নোটিশ দেই, বিপু লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার পরে কেরানীগঞ্জের উপজেলা চেয়ারমম্যান শাহীনকে দিয়ে আমাকে ফোন করান। সে ফোনের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বনানী ডিওএইচএসে তাকে একটি বাসায় দেখা করতে বলেন। তিনি সেখানে যেতে আপত্তি জানালেও তাকে সে বাড়িতে গিয়ে আলোচনায় বসতে বাধ্য করানো হয়। পরে শামীমুন নাহার কয়েকজন আইনজীবীসহ ১২ জনকে নিয়ে সে বাড়িতে যান। তবে আলোচনায় ধানমন্ডির ৪৮ নং ওয়ার্ড কমিশনার আমজাদ হোসেন মিয়া ও একজন আইনজীবীসহ পাঁচজনকে উপস্থিত থাকতে দেয়া হয়।

    এসময় বিপু তাকে হুমকি দেয় বলেও জানান শামীমুন নাহার। তিনি বলেন, ‘বিপু আমাকে পাগল ও চরিত্রহীনা আখ্যায়িত করে আমার মানহানী করে। আলোচনায় বসেও বারবার বিপু হুমকি দিয়েছেন। তিনি আমার চারিত্রিক বিষয় নিয়েও অশালীনভাবে মন্তব্য করেছেন। একইসঙ্গে বলেছেন, এতোদিন যা করেছি, এটা কিছুই না। আপনি যদি আমার নামে মামলা করতে যান, তাহলে আমি আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে দেখে নিবো। এটা আমার বাংলাদেশ, কোথাও বিচার পাবেন না।”

    তিনি আরও বলেন, “বিপু তার লোকজন দিয়ে আমাকে আমার বাবার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে দেন। আমার আইফোন, মার্কিন পাসপোর্ট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে যান।”

    সম্প্রতি সে আইফোনে থাকা শামীমুন নাহারের ছবির সঙ্গে অন্য মানুষের ছবি সংযুক্ত করে দিয়ে বিভিন্নস্থানে অপপ্রচার করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। শামীমুন নাহার বলেন, “বিপুর নির্দেশে তার লোকজন আমার শারীরিক, মানসিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে এবং ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও অভিযোগ জানিয়েছি।”

    সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, এসব অভিযোগ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানানো হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, আমি তো ওনার কাছে চুনোপুটি। এ বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা, মার্কিন দূতাবাসে অভিযোগ ও এসব বিষয়ে মামলা করার পরামর্শ দেন। পরে শামীমুন নাহার গত ২০১৫ সালের ১৫ মার্চ মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে এসব বিষয়ে অভিযোগ জানান। দূতাবাসও তার নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে জানায়।

    সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শামীমুন নাহার বলেন, আমার বাবার সম্পত্তি দখল করে রেখেছে ছোট বোন ডেইজি হাসান আইরিন। তাকে সহায়তা দিচ্ছেন- নসরুল হামিদ বিপুর নেতৃত্বে আশিফুর রশিদ, ইবনুল হাসান, ফুহাদ হোসেন, কবির হোসেন কাজল, (আইরিনের কাজের মেয়ে লাইলি ও তার স্বামী প্রিন্স গোমেজ) এবং অজ্ঞাত আরো অনেকেই রয়েছেন যাদের নাম অজানা। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এমপি বিপুর জন্য একটি পরিবার নয়, একাধিক মানুষ বিপদগ্রস্ত এবং নিরুপায়। আমরা এ সমস্যার সুস্থ সমাধান চাই। স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চাই।

    বিএম…