ওয়াসা চট্টগ্রাম নগরীকে কবরস্থানে পরিণত করেছে!
    মশার উৎপাত ঠেকাতে চসিকের কার্যকর উদ্যোগ নেই অভিযোগ সুজনের

    সুজন

    চট্টগ্রাম মেইল : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাথে ওয়াসার কোন সমন্বয় নেই মন্তব্য করে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর মূল সড়কগুলো খোড়াখুড়ির কারণে তীব্র যানজট ও নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে অতিষ্ঠ নগরবাসী। নতুন রাস্তা করে যাওয়ার পর আবার খুড়ে পুরো রাস্তাটি নষ্ট করে নগরবাসীকে ভোগান্তিতে ডুবিয়ে রেখেছে ওয়াসা। মূলত ওয়াসা চট্টগ্রাম নগরীকে একটি কবরস্থানে পরিণত করেছে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাথে ওয়াসার সমন্বয় করে উন্নয়ন মূলক কাজ সম্পাদনের আহবান জানান তিনি।

    সোমবার (১৩ মে) চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে মতবিনিময় কালে জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা খোরশেদ আলম সুজন এ আহ্বান জানান।

    মতবিনিময় সভায় সুজন নাগরিক উদ্যোগের পক্ষ থেকে নগরীর জনদুর্ভোগের চিত্র মেয়রের নিকট উপস্থাপন করেন। সুজন বলেন, পবিত্র রমজান মাসে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের ইবাদতে বাঁধা হয়ে দাড়াচ্ছে এই মশা। নগরজুড়ে মশার প্রজনন বন্ধ এবং উৎপাত ঠেকাতে কর্পোরেশনের কার্যকর কোন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না বলে অভিযোগ করেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্ঠা। তিনি নগরীতে মশার প্রজনন বন্ধ এবং উৎপাত ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহবান জানান।

    উত্মাপিত সমস্যাবলীর মধ্যে আগ্রাবাদ এক্সেস সড়ক এবং পোর্ট কানেকটিং সড়ক দুইটি চট্টগ্রামের অতীব গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এ দুইটি সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যান বাহন চলাচল করে। ইপিজেড, বন্দর, কাস্টমস ছাড়াও বিভিন্ন সরকারী এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবি নারী পুরুষকে প্রতিনিয়তই চলাচল করতে হয়এ দুইটি সড়ক দিয়ে। বন্দর কেন্দ্রিক বিভিন্ন ট্রাক, ট্রেইলর, কাভার ভ্যানের চলাচলও এ সড়ক দুটিতে। কিন্তু সংস্কারের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে এ সড়ক দুইটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া নগরীর গুরুত্বপূর্ণ আরাকান সড়কের এক পাশও দীর্ঘ সময় ধরে যান বাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তিনি অতিসত্ত্বর আগ্রাবাদ এক্সেস সড়ক এবং পোর্ট কানেকটিং সড়ক দুইটি ও আরাকান সড়কের এক পাশজনগন এবং যান চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।

    সুজন মেয়রের উদ্দ্যেশে বলেন, বিমান বন্দরের প্রবেশ মূখ সমূহে অফডক কন্টেইনার ইয়ার্ডগুলো বিমান বন্দরকে পুরো চট্টগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। অফডক কেন্দ্রিক যানজটের জন্য প্রতিদিনই বিমান মিস করছে যাত্রী সাধারণ। এমনকি অনেক বেসরকারী বিমান শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে তাদের রুট বন্ধ করে দিয়েছে। এটি চট্টগ্রামের প্রতি গভীর ষড়যন্ত্র কিনা তা ভেবে দেখার জন্য মেয়রকে আহবান জানান।

    তিনি বলেন, নগরীতে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ এবং উন্মুক্ত স্থান নেই। ফলে তরুন সমাজ মোবাইল, ইন্টারনেট এবং মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। তিনি নতুন প্রজন্মকে একটি বাসযোগ্য নগরী উপহার দিতে নগরজুড়ে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ এবং উন্মুক্ত স্থান নির্মাণ করারও অনুরোধ জানান। তাছাড়া প্রায়শই দেখা যায় কোন প্রকার ত্রিপল ছাড়াই ময়লা পরিবহনবাহী গাড়ীগুলো ময়লা আবর্জনা নিয়ে সারা শহর প্রদক্ষিন করে। এ সমস্ত কর্মকান্ড পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে মন্তব্য অভিমত প্রকাশ করেন সুজন। তিনি আরো বলেন, হকাররা প্রতিনিয়ত রাস্তা দখল করে তাদের ব্যবসা বানিজ্য পরিচালনা করছে। ফলে জনসাধারণ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছে না। অনেকে দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। হকাররা যাতে কোনভাবেই রাস্তা দখল করে ব্যবসা বানিজ্য পরিচালনা করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখার জন্য মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাছাড়া নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সীম্যান হোস্টেল, লালখান বাজার, ওয়াসা এবং জিইসি মোড় সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ফুট ওভার ব্রীজ স্থাপন করার অনুরোধ করেন।

    চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন নাগরিক উদ্যোগের প্রতিটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সহমত পোষন করে বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আমি মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর একযোগে নগরীর সড়কগুলোতে ওয়াসা, সিডিএ, টিএন্ডটি, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী খোড়া খুড়ি শুরু করে। স্বাভাবিক ভাবেই উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য সিটি কর্পোরেশনকে রাস্তা কাটার অনুমতি দিতে হয়। একই সাথে নগরীর মূল সড়কগুলো খোড়াখুড়ির কারণে নগরবাসী কিছুটা ভোগান্তিতে পড়েছে। তারপরও আমরা সীমিত সাধ্যের মধ্যে নগরবাসীর দূর্দশা লাঘবে প্রয়োজনীয় সংস্কার কর্মসূচী ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাচ্ছে যা এখনো অব্যাহত আছে।

    মেয়র বলেন, নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আগ্রাবাদ এক্সেস সড়কএবং পোর্ট কানেকটিং সড়ক দুইটি জাইকার অর্থায়নে চলমান রয়েছে। জানুয়ারী ২০১৮ সাল থেকে শুরু হয়ে মে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ দুইটি সড়কের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়েছে। জাইকার কাজের কিছুটা ধারাবাহিকতা রয়েছে। প্রকল্প শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল কাজ সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি জাইকার প্রতিনিধিদল তদারকি করে।

    তিনি বলেন, জাইকার পদ্ধতি কিংবা প্রক্রিয়ার বাহিরে যাওয়ার কারো কোন সুযোগ নেই। এ দুইটি সড়কের উন্নয়ন কাজে যাতে সঠিক মান বজায় থাকে সেটা নিশ্চিত করার জন্যই জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে। তিনি এ সড়ক দুটির অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা জানান এবং এ মাসের মধ্যে একটি লেয়ারের ঢালাই হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পুরোপুরি সম্পন্ন হলে এ দুটি সড়ক দৃষ্টিনন্দন সড়কে পরিণত হবে বলে মত প্রকাশ করেন। এছাড়া আরাকান সড়কটি কালুরঘাট পর্যন্ত ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে। ইতিমধ্যে যার দরপত্র সম্পন্ন হয়েছে। ওয়াকওয়ে এবং যাত্রী ছাউনি সহ এ রাস্তাটি পুরোপুরি সম্পন্ন হলে একটি আকর্ষনীয় রাস্তায় পরিনত হবে বলে নাগরিক উদ্যোগের নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন।

    তিনি তরুন সমাজকে মাদকের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করার জন্য প্রশাসন এবং নাগরিক উদ্যোগের নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এছাড়া আগ্রাবাদ এলাকায় জনগণের জন্য উন্মুক্ত শেখ রাসেল পার্ক নির্মাণ করার প্রক্রিয়ার কথা জানান। তিনি পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম সফল করে তুলতে নগরবাসীর আন্তরিক সচেতনতা কামনা করেন এবং আবর্জনাসমূহ নালা, নর্দমা বা ড্রেনে না ফেলার আহবান জানান।

    সীম্যান হোস্টেল মোড়ে একটি ফুট ওভারব্রীজ স্থাপনের কথা জানিয়ে মেয়র বলেন পর্যায়ক্রমে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ফুট ওভার ব্রীজ স্থাপন করা হবে। তিনি আশ্বাস প্রকাশ করেন আগামী দু থেকে তিন মাসের মধ্যে রাস্তায় কোন ধরনের হকার বসতে পারবে না। এছাড়া নগরবাসীর যে কোন অভিযোগ সকাল ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ১৬১০৪ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এই হট লাইন নাম্বারে জানানোর অনুরোধ জানান।

    মতবিনিময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজনীতিবিদ হাজী মোঃ ইলিয়াছ, মোঃ কামাল মেম্বার, হাজী হোসেন কোম্পানী, হাবিবুর রহমান, নিজাম উদ্দিন, আব্দুল আজিম, এজাহারুল হক, মোসাদ্দেক হোসেন বাহাদুর, মোঃ শাহজাহান, পংকজ চৌধুরী কংকন, জাহেদ আহমদ চৌধুরী, সোলেমান সুমন, সমীর মহাজন লিটন, রাজীব হাসান রাজন, শেখ মামুনুর রশীদ, জাহাঙ্গীর আলম, সফি আলম বাদশা, স্বরূপ দত্ত রাজু, মোঃ ওয়াসিম, মাহফুজ চৌধুরী, শিশির কান্তি বল,শেখ সরওয়ার্দী এলিন, রকিবুল আলম সাজ্জী, এম ইমরান আহমেদ ইমু, দীপংকর সৌম শান্ত, মনিরুল হক মুন্না, হাসান মুরাদ প্রমূখ।

    বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স