অপেক্ষা নগরবাসীর
    জলাবদ্ধতা : বর্ষায় জোয়ারে ডুববে নাকি ভাসবে?

    চট্টগ্রাম মেইল : চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেছেন, চট্টগ্রামের দুঃখ জলাবদ্ধতা নিরসনকে অগ্রাধিকার দিয়ে ৫৬১৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প একনেক এ পাস হয়েছে। যা এ যাবতকালের মধ্যে চট্টগ্রামের জন্য সর্বোচ্চ বরাদ্ধ যা প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রামের জনগনের প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু চট্টগ্রামের জনগন চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছেন আগামী বর্ষায় জোয়ারে ডুববে না ভাসবে? আমরা আশ্বাস নয় কাজের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন চাই।

    তিনি আজ ৯ মে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের সাথে মতবিনিময় সভায় এমন মন্তব্য করেন।

    জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা খোরশেদ আলম সুজন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ১০ বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম শহর বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম বাণিজ্যকেন্দ্রে রূপান্তরিত হবে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের উন্নয়নে একের পর এক বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের অর্থের যোগান দিয়ে যাচ্ছে বর্তমান সরকার।

    তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম হচ্ছে বানিজ্যিক রাজধানী কিন্তু এ শহরে একটি পরিকল্পিত ট্রাক টার্মিনাল নেই। প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার ট্রাক নগরীতে প্রবেশ করে। তাই একটি আধুনিক ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে চউক চেয়ারম্যানের প্রতি তিনি আহবান জানান।

    চট্টগ্রামের উত্তর ও দক্ষিণ পতেঙ্গা এলাকার জনগন বৈরীতার শিকার। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অনায়াসে বহুতল ভবন নির্মাণ করলেও সাধারণ জনগণের জন্য দ্বিতলের বেশী ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। তিনি এ বৈষম্য দূর করার জন্য চউক চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। তিনি বলেন, অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠা অফডক কন্টেইনার ইয়ার্ডগুলো টুটি চেপে হত্যা করছে চট্টগ্রাম শহরের জীবন প্রবাহকে।

    অফডক টার্মিনালগুলোর যানজটের কারণে আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর ব্যবহার করতে পারছে না চট্টগ্রামের যাত্রী সাধারন। প্রতিদিনই বিমান বন্দরগামী যাত্রী সাধারনকে নিদারুন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রতিনিয়তই ফ্লাইট মিস হচ্ছে যাত্রী সাধারনের। তাই চউক কর্তৃপক্ষের এখনই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত একটি শহরের জন্য বিমান বন্দর বেশী গুরুত্বপূর্ণ নাকি অফডক কন্টেইনার ইয়ার্ডগুলো। সম্প্রতি লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ টার্মিনাল নির্মাণ হলেও হুমকির মুখে পড়বে চট্টগ্রামের আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরটি। তাই এ টার্মিনাল নির্মাণের পূর্বে বিশিষ্ট ব্যাক্তি এবং নগর পরিকল্পনাবিদদের মতামত নেওয়া জরুরী বলে মত প্রকাশ করেন।

    তিনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে ইউএসটিসি থেকে ভাটিয়ারী পর্যন্ত নয়নাভিরাম পর্যটন কেন্দ্র এবং বড়শী দিয়ে মাছ শিকার করার উপযোগী করার পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্য চউক চেয়ারম্যানের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি আরো বলেন চট্টগ্রামের আদি বাসিন্দাদের জায়গা জমি হুকুম দখলের নামে বিভিন্ন সরকারী এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্টান অধিগ্রহণ করেছে। ফলতঃ নিজ ভূমে পরবাসী হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের আদি বাসিন্দাগণ। তাই এ ব্যাপারেও উদ্যোগ নেওয়ার জন্য চউক চেয়ারম্যানের প্রতি আহবান জানান সুজন। এছাড়া সাধারন জনগনের জন্য নির্মিত রাস্তা সহ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কোন স্থাপনা যাতে বানিজ্যিক ভাবে ব্যবহার না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহবান জানান তিনি।

    চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নাগরিক উদ্যোগের প্রস্তাবনাগুলোর সাথে একমত পোষন করেন। বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে আস্থা এবং বিশ্বাস নিয়ে আমাকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অর্পন করেছে আমি সে দায়িত্বের পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে চাই। সকল সেবা সংস্থার সমন্বয়ে আলাপ আলোচনা করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষকে একটি জবাবদিহিতামূলক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হবে। ইতিমধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিয়ে খালের মাটি উত্তোলনের কাজ চলছে।

    নবনির্বাচিত সিডিএ চেয়ারম্যান দোভাষ বলেন, নগরের খালগুলোকে আর এস সীট মূলে অবৈধ দখলমুক্ত করে পুরাতন অবয়বে ফিরিয়ে নিয়ে আসা এবং খালের দুই পাড়ে গার্ড ওয়াল নির্মাণ করা হবে। পরবর্তীতে স্লুইসগেট নির্মাণ, খালের দুই পাশে রাস্তা, ওয়াকওয়ে এবং আনুষাঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া চাক্তাই থেকে কালুঘাট পর্যন্ত স্লুইচগেটসহ বাঁধ ও রাস্তা নির্মাণ, লালখান বাজার থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন এবং নাগরিক উদ্যোগের নেতৃবৃন্দকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সহযোগীতা করার অনুরোধ জানান। তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম নগরী পৃথিবীর একটি অন্যতম আকর্ষনীয় নগরীতে পরিণত হবে।

    এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজনীতিবিদ হাজী মোঃ ইলিয়াছ, সংগঠনের সদস্য সচিব হাজী হোসেন কোম্পানী, আব্দুর রহমান মিয়া, সাইদুর রহমান চৌধুরী, মোঃ সেলিম, এজাহারুল হক, মোঃ শাহজাহান, জাহেদ আহমদ চৌধুরী, সমীর মহাজন লিটন, জাহাঙ্গীর আলম, শিশির কান্তি বল, স্বরূপ দত্ত রাজু, ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, সরওয়ার্দী এলিন, নগর ছাত্রলীগ সভাপতি এম ইমরান আহমেদ ইমু, মনিরুল হক মুন্না, হাসান মুরাদ প্রমূখ।

    বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স…