সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসের মধ্যেই ওয়াটার বাস চালুর আশ্বাস বিআইডব্লিউটিস ‘র
    সদরঘাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ওয়াটার বাস চালুর আহ্বান সুজনের

    সদরঘাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ওয়াটার বাস চালুর আহ্বান সুজনের

    চট্টগ্রাম মেইল : সদরঘাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ওয়াটার বাস সার্ভিস চালু করার আহবান জানিয়েছেন জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। তিনি আজ ১১ জুন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় সদরঘাটস্থ বিআইডব্লিউটিসি কার্যালয়ে সংস্থার উপ-মহাব্যবস্থাপক গোপাল চন্দ্র মজুমদারের সাথে মতবিনিময়কালে এ আহবান জানান।

    খোরশেদ আলম সুজন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশের নৌ রুটগুলো সচল রাখার জন্য বেশকিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ও এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দফতরকে দিকনির্দেশনা প্রদান করছে। একটি দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা বেগবান করতে সড়ক, রেল, বিমান পথের পাশাপাশি নৌপথগুলোও সচল এবং কার্যকর রাখা একান্ত প্রয়োজন।

    তিনি বলেন, চট্টগ্রাম দেশের বানিজ্যিক রাজধানী। প্রতিদিন ব্যবসায়িক কিংবা অন্য প্রয়োজনে বিপুল সংখ্যক দেশী বিদেশী ব্যবসায়ি এবং বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ বিমানযোগে দেশের বিভিন্ন স্থান ও অন্যান্য দেশ থেকে চট্টগ্রামে আসা যাওয়া করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নগরীর সিইপিজেড থেকে বিমানবন্দরগামী সড়কটি প্রতিনিয়তই যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে।

    ফলে প্রতিদিনই বিমান যাত্রীদের ফ্লাইট মিস হচ্ছে। ফ্লাইটের সময়সূচীর দুই তিন ঘন্টা আগে নিজ বাসা বাড়ী থেকে রওয়ানা হয়েও ফ্লাইট ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে বিমান যাত্রীগণ। এতে করে একদিকে সময় নষ্ট হচ্ছে এবং অন্যদিকে আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিমান যাত্রীরা। তাই সদরঘাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ওয়াটার বাস সার্ভিসটা চালু করা এখন একান্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। বিআইডব্লিউটিসি সে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। এতে করে যাত্রীরা মনোরম পরিবেশে নির্বিঘ্নে বিমান বন্দরে আসা যাওয়া করতে পারবে এবং আর্থিকভাবেও লাভবান হবে। উদ্যোগটি গ্রহণ করলে বিপুল সংখ্যক বিমান যাত্রীর পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠবে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরটি।

    তাছাড়া বিপুল সংখ্যক ঘাট গুদাম, লবন শ্রমিকসহ বিভিন্ন ধরনের শ্রমিকরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে চট্টগ্রামে আসা যাওয়া করে। বিশেষ করে সন্দ্বীপ এবং হাতিয়ার নৌ রুট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উক্ত এলাকার শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাড়াহুড়া করে অন্য উপায়ে আসা যাওয়া করতে গিয়ে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে শ্রমিকরা। তাই বন্ধ হয়ে যাওয়া সন্দ্বীপ এবং হাতিয়ার নৌ রুটটি পূণরায় চালু করে সেটা বরিশাল পর্যন্ত বিস্তৃত করার আহবান জানান তিনি।

    এতে করে ঐ সকল এলাকার সাথে চট্টগ্রামের যোগাযোগ বাণিজ্য পূণরায় চালু হবে এবং ব্যবসায়িরা ঐ সকল এলাকার উৎপাদিত পণ্য চট্টগ্রামে নিয়ে এসে ব্যবসা বানিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটাতে সক্ষম হবে। তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁস। কিন্তু কর্ণফুলী নদীর দখল এবং দূষণে সেই রাজহাসের প্রাণ এখন যায় যায় অবস্থা। যেহেতু বিআইডব্লিউটিসি দেশের নৌ পথগুলো সচল রাখার দায়িত্ব পালন করছে সেহেতু কর্ণফুলী নদীকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করার আহবান জানান খোরশেদ আলম সুজন।

    বিআইডব্লিউটিসি উপ-মহাব্যবস্থাপক গোপাল চন্দ্র মজুমদার আন্তরিকতার সাথে নাগরিক উদ্যোগের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শ্রবণ করেন। তিনি নাগরিক দায়িত্ব পালনে নাগরিক উদ্যোগের গৃহীত পদক্ষেপ সমূহের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

    তিনি বলেন, আপনাদের উদ্যোগ থেকেই বুঝা যায় যে, সরকার সঠিকভাবে তার নির্বাচনী অঙ্গীকার পালন করছে। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। প্রতিনিয়ত আমাদের জবাবদিহিতার মধ্যে থাকতে হয়। সরকার দেশের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা এবং উপকূলীয় এলাকা সমূহকে গুরুত্ব দিয়ে নৌ রুটগুলো পূণরায় চালু করার জন্য নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহন করেছে।

    ইতিমধ্যে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধ প্রদান করা হয়েছে। বিভিন্ন রুটের জন্য ৩৫টি নতুন জাহাজ ক্রয় করা হবে। যার মধ্যে সদ্বীপ এবং হাতিয়ার জন্য ২টি জাহাজ বরাদ্ধ রাখা হয়েছে। জাহাজগুলো তৈরীর প্রক্রিয়া চলছে। ডক ইয়ার্ডের অসযোগিতার জন্য জাহাজগুলো চালু করতে বিলম্ব হচ্ছে নচেৎ এ মৌসুমেই জাহাজগুলো সন্দ্বীপ এবং হাতিয়া রুটে যাত্রী সাধারন পরিবহন করতে সক্ষম হতো বলে মত প্রকাশ করেন।

    তিনি নাগরিক উদ্যোগের দাবীর প্রতি সহমত জানিয়ে আগামী সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসের মধ্যেই সদরঘাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ওয়াটার বাস চালুর আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি বলেন, ওয়াটার বাসগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বর্তমানে বৈরী আবহাওয়ার জন্য চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে ওয়াটার বাসগুলো চালু করা হবে। তখন বিমান যাত্রীরা নির্বিঘ্নে নিরাপদে বিমান বন্দরে আসা যাওয়া করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

    এছাড়া ক্যাপটিাল ড্রেজিংটি বন্দরের এখতিয়ার উল্লেখ করে বলেন, ইতিপূর্বেও বন্দর ক্যাপিটাল ড্রেজিং করেছে। বর্তমানেও ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে। আমরা বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছি। এছাড়া পার্বত্য এলাকার জনগনের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ঐ এলাকায়ও একটি নতুন নৌ রুট চালু করার জন্য নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে নাগরিক উদ্যোগের নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন তিনি।

    এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা হাজী মো. ইলিয়াছ, সদস্য সচিব হাজী মো. হোসেন, আব্দুর রহমান মিয়া, আতাউল্লাহ চৌধুরী, সাইদুর রহমান চৌধুরী, আব্দুল আজিম, আব্দুস সালাম মাসুম, এ.এস.এম জাহিদ হোসেন, মোঃ শাহজাহান, সোলেমান সুমন, সমীর মহাজন লিটন, জাহাঙ্গীর আলম, সফি আলম বাদশা, স্বরূপ দত্ত রাজু, হাসান মোঃ মুরাদ, সরওয়ার্দি এলিন, শিশির কান্তি বল, আব্দুল জাহেদ মনি, মোজাম্মেল হক সুমন, মনিরুল হক মুন্না, মোহাম্মদ আলী মিঠু প্রমূখ।

    বিএম/রাজীব..

     

    আরো খবর:: জনদুর্ভোগ লাঘবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে সুজনের একাধিক প্রস্তাবনা