সাকিবের কাছেই হেরে গেল আফগানরা

    ম্যাচের আগে আফগানিস্তানের দেওয়া হুংকার দেখা যায়নি মাঠের লড়াইয়ে। বিশ্বকাপের ৩১তম ম্যাচে খর্বশক্তির দলটি টাইগারদের কাছে হেরেছে ৬২ রানের বড় ব্যবধানে। এই জয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজার দলের সেমিফাইনালের আশা আরও জোরাল হল।

    সপ্তম ম্যাচে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় জয়। এই জয়ে টাইগাররা আবারো উঠে এসেছে পয়েন্ট টেবিলের পঞ্চম স্থানে। অন্যদিকে সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলা আফগানিস্তান হেরেছে ৭টি ম্যাচের সবগুলোতে।

    রোজ বোলে প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ জড়ো করেছিল ২৬২ রান, ৭ উইকেট হারিয়ে; উইকেট ও মাঠ বিচারে যা ছিল শক্ত পূঁজি। সেই পূঁজি জড়ো করায় ছিল সাকিব আল হাসানের অর্ধ-শতকের অবদান। এরপর বল হাতে সাকিব ছিলেন আরও দুর্ধর্ষ। আফগানিস্তানের জয়ের স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে তার পারফরম্যান্সের সামনেই। সাকিবের পারফরম্যান্স পুরো ম্যাচে এতটাই অতিমানবীয় ছিল যে, ম্যাচের শেষদিকে তার ফিল্ডিং হাতছাড়া দেখে ধারাভাষ্যকার বলেই ফেলেন- সাকিব অবশেষে মানুষের ভূমিকায়!

    বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া লড়াকু সংগ্রহের জবাবে ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তানের দুই ওপেনার অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব ও রহমত শাহ্‌ ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। তবে দলীয় ৪৯ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর খেই হারায় দলটি।

    ২৪ রান করা রহমত শাহকে অনুসরণ করে ৭৯ রানে হাশমতউল্লাহ শহীদী সাজঘরের পথ ধরেন ১১ রান করে। অর্ধ-শতকের কাছে পৌঁছে যাওয়া গুলবাদিন নাইব ৩ রানের আক্ষেপ নিয়ে ফেরেন। ৭৫ বলের মোকাবেলায় তিনটি চারের সাহায্যে করেন ৪৭ রান।

    বাংলাদেশের পক্ষে এদিন বল হাতে তাণ্ডব চালিয়েছেন সাকিব। তার কাছে আফগান ব্যাটসম্যানরা এত অসহায় যে ইনিংসের শেষদিকে হালই ছেড়ে দেন ব্যাটসম্যানরা। সাকিবের মুড়িমুড়কির মত উইকেট সংগ্রহের দিনে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন সামিউল্লাহ শিনওয়ারি। তবে সতীর্থদের সঙ্গ না পাওয়ায় তার ইনিংস দলের পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে শুধু।

    শিনওয়ারি ৫১ বলে ৪৯ রান করে অপরাজিতই থেকে যান। অন্যান্যদের মধ্যে নাজিবউল্লাহ জাদরান ২৩, আসঘর আফগান ২০ ও ইকরাম আলিখিল ১১ রান করেন। শেষপর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলতে আসা দলটির ইনিংস থামে ২০০ রানে, ৪৭ ওভার ব্যাট করে সবকটি উইকেট হারালে। এতে বাংলাদেশ পায় ৬২ রানের বড় জয়।

    বাংলাদেশের পক্ষে সাকিব একাই শিকার করেন পাঁচটি উইকেট, তাও মাত্র ২৯ রানের খরচায়। ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এক আসরে দুটি সেঞ্চুরি ও দুবার ৪টি বা তারও বেশি উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপের মঞ্চে ৫ উইকেট শিকার করা প্রথম বাংলাদেশিও সাকিব।

    সাকিবের ধারাল বোলিংয়ের দিনে মুস্তাফিজুর রহমান দুটি এবং মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মোসাদ্দেক হোসেন একটি করে উইকেট শিকার করেন।

    এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিতর্কিত সিদ্ধান্তে উইকেট হারান তামিম ইকবালের সাথে ওপেন করতে নামা লিটন দাস। ১৬ রানে তার বিদায়ের পর তামিমের সাথে দলের হাল ধরেন সাকিব। তবে এদিনও ধীরগতির ইনিংস উপহার দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তামিম।

    তামিমের স্কোর এদিন স্পর্শ করেনি অর্ধ-শতকের মাইলফলকও। ৫৩ বলের মোকাবেলায় ৩৬ রান করে তামিম বিদায় নিলে ক্রিজে আসেন মুশফিকুর রহিম। সাকিবকে নিয়ে একদিনের ক্রিকেটে তার জুটি স্পর্শ করে ৩০০০ রানের মাইলফলক, যা দিচ্ছিল ভালো কিছুর ইঙ্গিতও। তবে ৬৯ বলে মাত্র একটি চার হাঁকিয়ে ৫১ রান করা সাকিব ইনিংসকে আর বড় করতে পারেননি।

    বিগত ম্যাচগুলোর নিয়মিত ওপেনার সৌম্য সরকার এদিন ব্যাট হাতে নামেন পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে। যদিও ৩ রান করে আউট হওয়ার আগে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। এরপর চোটের শঙ্কা জাগিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৩৮ বলের মোকাবেলায় ইনিংসকে টেনে নিয়েছেন ২৭ রান পর্যন্ত। তবে পেশিতে টান পাওয়ায় শেষপর্যন্ত পুরো ম্যাচে ফিল্ডিং করতে পারেননি। ব্যাট হাতে তার বিদায়ের পর মুশফিকের সাথে রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন একাদশে ফেরা মোসাদ্দেক।

    আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১১ হাজার রানের ক্লাবে প্রবেশের দিনে মুশফিক দিচ্ছিলেন টানা দ্বিতীয় শতক তুলে নেওয়ার ইঙ্গিত। তবে ৮৭ বলের মোকাবেলায় চারটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকানো ইনিংসটি থামে ৪৯তম ওভারে।

    ইনিংসের শেষ বলে বিদায় নেন মোসাদ্দেকও। তার আগে চারটি চারের সহায়তায় ২৪ বলে ৩৫ রান করে দলের রানকে অনেক এগিয়ে নেন। ২ রানে অপরাজিত থাকেন তার সাথে চোট কাটিয়ে একাদশে ফেরা সাইফউদ্দিন।

    আফগানিস্তানের পক্ষে মুজিব উর রহমান তিনটি এবং গুলবাদিন নাইব দুটি উইকেট শিকার করেন। এছাড়া একটি করে উইকেট পান মোহাম্মদ নবী ও দাওলাত জাদরান। ১০ ওভার বল করে ৫২ রানের খরচায় উইকেটশূন্য ছিলেন রশিদ খান।

    সংক্ষিপ্ত স্কোর

    টস: আফগানিস্তান

    বাংলাদেশ ২৬২/৭ (৫০ ওভার)
    মুশফিক ৮৩, সাকিব ৫২, তামিম ৩৬, মোসাদ্দেক ৩৫
    মুজিব ৩৯/৩, গুলবাদিন ৫৬/২, নবী ৪৪/১

    আফগানিস্তান ২০০ (৪৭ ওভার)
    শিনওয়ারি ৪৯*, গুলবাদিন ৪৭, রহমত ২৪
    সাকিব ২৯/৫, মুস্তাফিজ ৩২/২, মোসাদ্দেক ২৫/১, সাইফউদ্দিন ৩৩/১

    ফল: বাংলাদেশ ৬২ রানে জয়ী।

    সেরা খেলোয়াড় : সাকিব আল হাসান

    বিএম/এমআর