রংপুরে পৌঁছেছে গ্রেফতারি পরোয়ানা: আসেননি ওসি মোয়াজ্জেম

    রংপুর প্রতিনিধি : বহুল আলোচিত ফেনীর সোনাগাজী মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির অভিযোগ ভিডিও রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় ফেনীর সোনাগাজীর সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা তার বর্তমান কর্মস্থল রংপুর রেঞ্জে এসে পৌঁছেছে। তবে আসেননি সেই আলোচিত ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন।

    তবে এই গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে লুকোচুরির অভিযোগ উঠেছে পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

    এদিকে আজ রোববার ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘অপরাধের সঙ্গে যেই জড়িত হোক, তাকেই শান্তি পেতে হবে। তিনি ওসি হোক কিংবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হোক, আর জনপ্রতিনিধি হোক।’

    তিনি বলেন, ‘নুসরাত জাহানকে হত্যার ঘটনায় মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। চার্জশিটে তার নামও এসেছে। পালিয়ে গেলে খুঁজে পেতে হয়তো একটু সময় লাগবে। তবে তাকে বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে।’

    এদিকে পুলিশের এই গড়িমসির সুযোগে মোয়াজ্জেম হোসেন গা ঢাকা দিয়েছেন। এখন তার অবস্থান সম্পর্কে কেউ কোনো তথ্য দিতে পারছেন না। বরং তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রংপুর ও ফেনীতে পৌঁছালেও মোয়াজ্জেম তার বর্তমান কর্মস্থল রংপুরে ফিরে আসেননি।

    পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) দেবদাস ভট্টাচার্য জানান, গ্রেফতারি পরোয়ানা রংপুরে এসেছে। কিন্তু মোয়াজ্জেম হোসেন অনুমতি ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। পরোয়ানাটি সোনাগাজী থানার ওসির কাছে পাঠানো হয়েছে।

    রংপুরে গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠানোর ক্ষেত্রে বিধি অনুসরণ করা হয়নি। বিধি মোতাবেক কাজ করার জন্য ফেনীর পুলিশকে জানাবেন বলেও তিনি জানান।

    ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সাইয়েদুল হক। গত ২৭ মে পিবি আই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলে ঐ দিনই মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

    পরোয়ানা জারির দুই দিন পর মোয়াজ্জেম হোসেন হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে ১১ জুন। ৩১ মে পরোয়ানার চিঠি ফেনীর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পৌঁছায়।

    কিন্তু পুলিশ সুপার কাজী মনির-উজ-জামান বারবার বিষয়টি অস্বীকার করতে থাকেন। একপর্যায়ে ৩ জুন রাতে পরোয়ানা হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি। এর দুই দিন পর বিশেষ বার্তা বাহকের মাধ্যমে পরোয়ানা রংপুর রেঞ্জে পাঠানো হয়।

    উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ঐ মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার নামে থানায় অভিযোগ করা হয়। সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন নুসরাতকে আপত্তিকর প্রশ্ন করে বিব্রত করেন এবং তা ভিডিও করে ছড়িয়ে দেন।

    ঐ ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে আদালতের নির্দেশে সেটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবি আই)।

    এদিকে পুলিশ মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাকে আটকের পর গত ৬ এপ্রিল ঐ মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগিরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।

    বিএম/এসআর/এমআর