ফরিদপুরের সালথায় নিকাহ রেজিষ্টার কাজী কামরুলের পাতানো আইনের ফাঁদে ভুক্তভোগী জনগণ

    ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্টার কাজী কামরুল হোসেন তার নিজের পাতানো আইনেই তিনি চলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই চলে তার নিকাহ রেজিষ্টারের কাজ।

    জানা যায়, উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌড়দিয়া গ্রামের মৃত সেকেন মাতুব্বরের পুত্র মোঃ রাকিবুল ইসলামের সাথে ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে, একই উপজেলার মাঝারদিয়া গ্রামের সহিদ শেখের মেয়ে মোছাঃ সাথী বেগমের বিবাহ হয়। বিয়ের সময় উভয় পক্ষের অভিভাবকদের সম্মতিতে ২ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করা হয়েছিল। পরে কয়েক বছর পর গত ২০১৮ সালে ২৩ ডিসেম্বর রাকিবুলের বড় ভাই মোঃ আব্দুল মাতুব্বর নিকাহ রেজিষ্টার কাজী কামরুলের নিকট যায় ঐ বিয়ের সার্টিফিকেট কপি (নকল) আনতে। কিন্তু তিনি তা দেবেন না বলে জানান। পরে তাকে শর্ত দেওয়া হয় ৫ হাজার টাকা ও ব্লাঙ্ক (ফাঁকা) ষ্টাম্পে টিপ সহি দিতে হবে। এবং তাকে বোঝানো হয় যে আপনি নকল বুঝিয়া পাইবেন তাহার প্রমাণ আমি রাখলাম। বড় ভাই আব্দুল মাতুব্বর সহজ-সরল বলে কোন কিছু না বুঝেই সাদা ষ্টাম্পে টিপ সহি দিয়ে দিলে কাজী সাহেব তাকে নিকাহ নামার নকল কপি দেয়। দেখা যায়, দেনমোহরে ২ লক্ষে টাকার স্থলে ৫ লক্ষ করা হয়েছে।

    অভিযুক্ত কাজী কামরুল

    বিষয়টি উদ্দেশ্য প্রণোদিত তা আব্দুল মাতুব্বর বুঝতে পেরে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, আমার ছোট ভাই দেশের বাহিরে থাকায় অভিভাবক হিসাবে কাজী মাওলানা কামরুল হোসেনের কাছে যাই বিবাহের নকল আনতে। তিনি আমাকে সাদা ষ্টাম্পে টিপ সহি ও ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে কাবিনের নকল দেবে বলে জানায়। পরে আমি কোন কিছু বুঝতে না পেরে ১ হাজার টাকা ও সাদা ষ্টাম্পে টিপ সহির বিনিময়ে নকল পাই। এখন আমি শঙ্কিত যে ঐ সাদা ষ্টাম্পের টিপ সহি দিয়ে আমাকে হয়রানি করে কি না।

    এছাড়া, চাঁদপুরের মতলব উপজেলার ঈশানবালা গ্রামের ভুক্তভোগী রিনা বেগম, নগরকান্দা উপজেলার বাগুটিয়া গ্রামের আবুল মাতুব্বরের মেয়ে বিউটি, লস্করদিয়া ইউনিয়নের দাগপুর গ্রামের সাথী, জুঙ্গুরদী গ্রামের তারা মিয়ার ছেলে মিজানুর রহমান সহ আরো অনেকেই।

    মাঝারদিয়া ইউনিয়নের বিবাহ রেজিষ্টার হওয়া সত্ত্বেও তার রয়েছে বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রতিনিধিদের কাছে নিকাহ নামার বই। গোপনে কাবিন করা, বিয়ে পড়ানো থেকে শুরু করে তালাকের প্রতিলিপি সংগ্রহ করেন তারা।

    এদিকে কাজী কামরুলের বিরুদ্ধে এছাড়াও অনেক অভিযোগ রয়েছে। রেজিষ্টার বহিতে বিবাহের দেনমোহরের জায়গা ফাঁকা রেখে এভাবে উৎকোচ নিয়ে ছেলে পক্ষ কিংবা মেয়ে পক্ষকে সুবিধা দিয়ে থাকে।

    বাল্য বিয়ে, উৎকোচের বিনিময়ে গোপনে তালাক রেজিষ্টার সহ অনেক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দেখা যায় চলমান রেজিষ্টার বহিতে ৫০টি নিকাহ রেজিষ্টার করা হয়েছে কিন্তু নিকাহ নামায় ফিস ও কাবিনের পরিমান লেখা হয়নি, শুধুমাত্র বর ও কনের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।

    তাছাড়াও এলাকায় চাউর রয়েছে, সামান্য কাজী মওলানা হয়ে তিনি নিজস্ব প্রাইভেটকার নিয়ে বিয়ে পড়াতে যান ও চলাফেরা করেন দম্ভের সাথে ঢাকা গ-১১৪৬৭০ প্রাইভেটকার নিয়ে ঘুরে বেড়ান। তার বাড়িতে অফিস রুমে গোপনে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে তাদেরকে কৌশলে নিজের দোষ আড়াল করতে জিম্মি করছে।

    স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি নিকাহ রেজিষ্টি ছাড়া অন্য কিছু করেন না। একমাত্র পেশা বিবাহ ও তালাক সম্পাদন কি করে তিনি প্রাইভেটকার ব্যবহার করেন- এত ইনকাম আসে কোথা থেকে।

    এ ব্যাপারে নিকাহ রেজিষ্টার কাজী কামরুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাদা কাগজে টিপ সহি নিয়েছি তাতে আমার কোন খারাপ উদ্দেশ্য ছিলো না। আমি সময় সুযোগ বুঝে অঙ্গিকার নামা লিখে নিতাম। আর বিয়ের নকল নিতে টাকা লাগে এ ব্যাপারে তিনি বলেন, অনেক পেছনের বই খাতা খুজতে হয় সে জন্য কিছু খরচ লাগে।
    এ ব্যাপারে ফরিদপুর জেলার সাবেক নিকাহ রেজিষ্টার মোঃ মকবুল হোসেন বলেন, নিকাহ রেজিষ্টারের নকল নিতে কোন টাকা লাগে না এবং বিবাহের সময় উভয় পক্ষকে নকল কপি দেওয়ার কথা। মাঝার দিয়ার কাজী সাহেব যেটা করেছেন তা অনিয়ম।

    বিএম/মিজানুর রহমান