শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ২৪ আসামির ১৯ জন এনকাউন্টারে নিহত

    কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে জঙ্গি হামলার ঘটনার তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের জামাতের আগে মাঠের প্রবেশপথে তল্লাশি চৌকিতে ভয়ংকর হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ সময় জঙ্গিদের ছোঁড়া গ্রেনেড, গুলি ও চাপাতির আঘাতে দুই পুলিশ কনস্টেবল, একজন গৃহবধূ নিহত হন। মারা যায় এক জঙ্গিও। এ ঘটনায় আহত হন অন্তত ১৬ ব্যক্তি।

    এই জঙ্গি হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ইতিমধ্যে চার্জ গঠন করা হয়েছে। মামলায় ২৪ জনকে আসামি করা হলেও ইতিমধ্যে তাদের ১৯ জনই বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।

    সেদিনের স্বজন হারানোর দুঃসহ স্মৃতি আর দেশ-কাঁপানো বীভৎস ঘটনা আজও তাড়িয়ে বেড়ায় এই এলাকার মানুষকে। এ ধরনের নৃশংস ও বর্বরোচিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন কিশোরগঞ্জবাসী।

    কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার জানান, এ ঘটনাটি সফলভাবে তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এ মামলার সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে পুলিশ।

    এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় ২৪ জঙ্গিকে আসামি করা হয়। এদের প্রায় সবাই রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলারও আসামি।

    এ কারণে বেঁচে থাকা পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। তারা হলেন, কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিম তারাপাশা গ্রামের জাহিদুল হক তানিম, গাইবান্ধার রাঘবপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর চলম ওরফে রাজীব গান্ধী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাজারদীঘা গ্রামের মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, গাইবান্ধার গান্ধারপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন ও কুষ্টিয়ার সাদীপুর কাবলীপাড়া গ্রামের আব্দুস সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল মাহফুজ।

    কিশোরগঞ্জ জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি মায়া রাণী ভৌমিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দেশের এ সর্ববৃহৎ ঈদগাহ ময়দানের প্রতিটি জামাতের আগে আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীর মানুষেরাও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা দিয়ে থাকে। সেদিনের জঙ্গি হামলায় মহিলা পরিষদ সদস্য ঝর্ণা রাণী ভৌমিক এবং দুজন পুলিশ সদস্য নিহত হন। সেদিনের কথা মনে হলে এখনো গা শিউরে উঠে। আমরা জঙ্গিমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ দেখতে চাই।’

    ওই হামলায় নিহত ঝর্ণা রাণী ভৌমিকের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া পুত্র শুভ ভৌমিক ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে জানায়, জঙ্গি হামলার সময় তার মা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার দুঃস্বপ্ন আজও তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। সে প্রায়ই এ স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে চিৎকার দিয়ে জেগে ওঠে। তার দাবি, আর কোনো জঙ্গি হামলায় যেন কোনো শিশু তার মতো মাতৃহীন না হয়।

    কিশোরগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শাহ আজিজুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ইতিমধ্যেই এ চাঞ্চল্যকর মামলাটির চার্জ গঠন সম্পন্ন হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ ও আদালত সাক্ষ্যের জন্য প্রস্তুত। এজন্য ২২ জুলাই তারিখ ধার্য আছে।’

    কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সফল তদন্ত শেষে মামলাটির চার্জশিট দিয়েছে। এ দেশ কাঁপানো জঙ্গি হামলা আমাদের জন্যও বিশেষ বার্তা ছিল। আজকে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা গ্রহণ করে এদের নির্মূল করতে পারছি। এ মামলার সব আসামিরই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করি।’

    পুলিশ সুপার জানান, ওই ঘটনায় নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে সরকার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। আহতদেরও চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সহযোগিতা করা হচ্ছে। এমনকি নিহত ওই গৃহবধূর এক সন্তানকেও চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

    বিএম/এমআর