সন্তানের ভর্তির খোঁজ নিতে গিয়ে গণপিটুনিতে নারী নিহতের ঘটনায় মামলা

    রাজধানীর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে তাসলিমা বেগম রেনু (৪০) নিহত হওয়ার ঘটনায় অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা (নম্বর ৩০) করা হয়েছে।

    শনিবার (২০ জুলাই) রাতে বাড্ডা থানায় নিহতের ভাগিনা নাসির উদ্দিন এ মামলা করেন।

    মামলায় বলা হয়েছে, অতর্কিতভাবে ওই নারীকে স্কুলের অভিভাবক, উৎসুক জনতাসহ অনেকে গণপিটুনি দেয়। এতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আনুমানিক ৪০০ থেকে ৫০০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি জড়িত।

    মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, রেনু তার মেয়েকে ভর্তি করার জন্য স্কুলে যান। কিন্তু মানসিক অসুস্থতার কারণে তার আচরণ অস্বাভাবিক ছিল। এজন্য স্কুলের অনেকেই তাকে ছেলেধরা হিসেবে সন্দেহ করছিল। প্রধান শিক্ষক তার সাথে কথা বলার জন্য রুমে নিয়ে যান। কিন্তু স্কুল প্রাঙ্গণে তার অস্বাভাবিকতা দেখে অনেকেই বের করে মারধর করতে চাইছিলেন। প্রধান শিক্ষক রেনুকে বাইরে বের না করলে, স্কুলের কিছু অভিভাবক ও বাইরে থেকে আসা উৎসুক জনতা রুমের গেট ভেঙে তাকে ‘ছেলেধরা’ বলে মারধর করে। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢামেকে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রেনুকে মৃত ঘোষণা করেন।

    এ বিষয়ে বাড্ডা থানার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আহমেদ হুমায়ুন বলেন, আমরা প্রধান শিক্ষকের স্টেটমেন্ট নিয়েছি, তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে মূল ঘটনা জানা যাবে।

    নিহত তাসলিমার ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু বলেন, ‘নিহত রেনু মহাখালীর ৩৩/৩ জিপি/জ ওয়্যারলেস গেটে থাকতেন। তার দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। এর আগে তিনি উত্তর বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক স্কুলের পাশে আলী মোড় এলাকায় স্বামী তসলিম হোসেনের সঙ্গে পরিবার নিয়ে থাকতেন। গত দুই বছর আগে পারিবারিক কলহের কারণে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর থেকে সন্তানদের নিয়ে মহাখালীতে বসবাস করতেন রেনু।’

    তিনি আরও বলেন, ‘রেনু উত্তর বাড্ডায় ওই স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করার বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসন থাকতে কীভাবে রাজধানীর ভেতরে বাড্ডা এলাকার লোকজন তাকে পিটিয়ে হত্যা করে? আমি এর বিচার চাই। এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।’

    ‘কিন্তু জনতা ভুল সন্দেহে আমার খালাকে এভাবে মেরে ফেললো। আসলে আমরা কোন দেশে আছি? কোন সমাজে বসবাস করছি? না বুঝে ভুল সন্দেহে এভাবে একটা মানুষকে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা হলো’, যোগ করেন নাসির উদ্দিন টিটু।

    প্রসঙ্গত, শনিবার (২০ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজার সড়কে ছেলেধরা সন্দেহে এক নারীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

    ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা বাড়ছে। নেত্রকোনার পর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারে গণপিটুনিতে দুই নারীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার ও গাজীপুরে আরো কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ নিয়ে আতঙ্ক অভিভাবকদের মনে।

    গতকাল পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা ফৌজদারি অপরাধ। ডিএমপি’র ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, কাউকে ছেলেধরা সন্দেহ হলে গণপিটুনি না দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে।

    বিএম/এমআর