শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তীকে পালাক্রমে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়

    চাঁদপুর শহরের ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তীকে ডিস লাইনম্যান জামাল হোসেন ও মহাজন আনিছুর রহমান পালাক্রমে ধর্ষণের পর হত্যা করেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

    রবিবার বিকেলে শহরের ওয়ারলেছ মোড়ে পিবিআই চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ে প্রেস বিফ্রিং করে সাংবাদিকদেরকে এ তথ্য জানানো হয়।

    পিবিআই চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল চাঞ্চল্যকর শিক্ষিকা হত্যার রহস্য ও তথ্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।

    জামান হোসেন ও আনিছুর রহমান

    পুলিশ জানায়, গত ২১ জুলাই দুপুরে শহরের ষোলঘর পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্টাফ কোয়াটারে সপরিবারে বসবাসকারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব সহকারী অলোক গোস্বামী’র স্ত্রী শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তীকে (৪৫) ডিস লাইনম্যান জামাল হোসেন ও মহাজন আনিছুর রহমান ধর্ষণের পর ঘরে থাকা ধারালো চুরি দিয়ে হত্যা করে। এই ঘটনায় পরদিন শিক্ষিকার স্বামী অলোক গোস্বামী চাঁদপুর মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

    এই ঘটনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁদপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অনুপ চক্রবর্তী ২৪ জুলাই রাতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে জামাল হোসেনকে শহরের ষোলঘর হোটেল আল-রাশিদা এলাকায় তার বাসা থেকে এবং আনিছুর রহমানকে ষোলঘর পাকা মসজিদের বিপরীত সড়কের বাসা থেকে আটক করেন।

    এরপর ৪ আগস্ট ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা হিসেবে তদন্ত কার্যক্রম পিবিআই কর্তৃক অধিগ্রহণ করা হয়। পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক মো. কবির আহমেদের নেতৃত্বে পিবিআই চাঁদপুরের একটি টিম গ্রেফতারকৃত আসামিদের আদালতের অনুমতিক্রমে দুই দিনের রিমান্ডে এনে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে জামাল ঘটনায় তার সক্রিয় সম্পৃক্ততা করে বিস্তারিত বর্ননা দেয়।

    পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন আসামি জামালের দেওয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে বলেন, ঘটনার দিন দুপুরে আনুমানিক ১২টার দিকে অভিযুক্ত আনিছুর রহমান ও জামাল পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক পাউবো’র ভিতরে পরিত্যক্ত ঘরে এসে দুজনে ইয়াবা সেবন করে। তারপর দুজনেই জয়ন্তী চক্রবর্তীর বাসায় যায়। নীচতলার সানশেডে উঠে জামাল ডিসের লাইন নাড়াচাড়া করলে জয়ন্তী টিভি দেখায় সমস্যা দেখা দেয়। তখন তিনি বারান্দায় বেরিয়ে এসে অভিযুক্তদের টিভি দেখতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানালে তারা কৌশলে বাসায় প্রবেশ করার জন্য লাইন ঠিক করার কথা বলে বাসার নিচের গেইটের চাবি নিচে ফেলতে বলে। জয়ন্তী চক্রবর্তী চাবি নিচে ফেললে প্রথমে আনিছ ও পরে জামাল বাসায় প্রবেশ করে।

    পরে দুজনে একে অন্যের সহায়তায় মুখ চেপে ধরে প্রথমে আনিছ ও পরে জামাল পালাক্রমে জয়ন্তীকে ধর্ষণ করে।

    ধর্ষণের পর জয়ন্তী হুমকি দেয়, এই ঘটনা বলে দিবে। তখন তারা দুজন ক্ষিপ্ত হয়ে পুনরায় ঝাপটে ধরে ঘরের র‌্যাকে থাকা ধারালো চুরি দিয়ে জামাল জয়ন্তীর গলাকেটে হত্যা করে। পরে আনিছ বাথরুম থেকে মগে করে পানি এনে রক্তমাখা ছুরিটি মরদেহের ওপর ধুয়ে ধর্ষণের আলামত বিনষ্টের উদ্দেশ্যে মরদেহের নিম্নাঙ্গের ওপর আরো পানি ঢালে এবং ছুরিটি পূর্বের স্থানে রেখে দেয়।

    এ সময় উপস্থিত ছিলেন পিবিআই চাঁদপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শংকর কুমার দাসসহ অন্য পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ।

    বিএম/এমআর