সরকার উৎখাতের উদ্দেশ্য আল্লাহর দলের সদস্যদের

    রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে ‘আল্লাহর দল’ (আল্লাহর সরকার) জঙ্গি সংগঠনের চার সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব। আটকের সময় তাদের কাছ থেকে ৩টি পেনড্রাইভ, ১২টি মোবাইল ফোন, ‘আল্লাহর দল’ সংগঠনের লিফলেট, দাওয়াতপত্র ও আয়-ব্যয়ের হিসাবের একটি টালি খাতা উদ্ধার করা হয়।

    বুধবার (২৮ আগস্ট) ভোরে দক্ষিণখান এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র‍্যাব-১ এর লে. কর্নেল মো. সারওয়ার-বিন-কাশেম আটক চারজনের বিষয়ে বিস্তারিত জানান।

    আটকরা হলো- সিরাজুল ইসলাম (৩৮), মনিরুজ্জামান মনির (৪০), এসএম হাফিজুর রহমান সাগর (৪৫) ও মো. শফিউল মোযনাবীন তুরিন (২৭)।

    র‍্যাব জানায়, জঙ্গিরা সংগঠনটির আর্থিক মূলধনের একটি বড় অংশ নামে-বেনামে দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকে গচ্ছিত রেখেছে। মূলত দেশে নাশকতা সৃষ্টি ও সরকার উৎখাতের কাজে এগুলো ব্যয় করার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

    আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা ইসলামের অপব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পরিবেশন এবং ভ্রান্ত ইসলামী সংগীতের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করে। জঙ্গি কার্যক্রমকে জোরদারের জন্য আর্থিক কাঠামো তৈরি করেছে। সংগঠনটির যাবতীয় আর্থিক মূলধনের একটি বড় অংশ নামে-বেনামে দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে।

    আটক সিরাজুল ইসলাম জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ১৯৯৯ সালে মতিন মেহেদীর কাছে বায়াত গ্রহণের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে সংগঠনের সদস্য হওয়ার পর ‘গ্রাম নায়ক’ হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করে। পরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পাবনা, ঝিনাইদহ, খুলনা, রাজশাহী ও নওগাঁয় দায়িত্ব পালন করে।

    ২০১৪ সালে যুগ্ম অধিনায়ক পদে দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং বর্তমানে একই দায়িত্বে বহাল আছে সিরাজুল। সে জঙ্গি সংগঠনটির মামলা মোকাদ্দমাসহ বিবিধ বিষয়াদির ওপর তদারকি করে।

    ১৯৯৭ সালে গাইবান্ধার এক জঙ্গি সদস্যের মাধ্যমে বর্ণিত জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করে মনিরুজ্জামান। সংগঠনের আমির মতিন মেহেদীর কাছে ঢাকায় বায়াত গ্রহণ করে। জঙ্গি সদস্য হওয়ার কিছুদিন পরে গ্রাম নায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। পরে বিভিন্ন পদে নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও খুলনায় দায়িত্ব পালন করে সে।

    ২০১৯ সালে ‘উপ-অধিনায়ক’ পদে দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং বর্তমানে একই দায়িত্বে বহাল আছে। জঙ্গি সংগঠনটির আর্থিক ব্যবস্থাপনা, দাওয়াতি ব্যবস্থাপনা, রিক্রুটিংসহ বিভিন্ন বিষয়াদি দেখাশোনা করে মনিরুজ্জামান।

    আটক হাফিজুর রহমান সাগর খুলনার খালিশপুর থানায় ‘আঞ্চলিক নায়ক’ এবং পরে ‘জেলা নায়ক’ পদে দায়িত্ব নিয়ে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করত।

    শফিউল মোযনাবীন তুরিন একটি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৭ম সেমিস্টার পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। ২০১০ সালে তার দুই বন্ধুর মাধ্যমে ‘আল্লাহর দল’ জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করে। ২০১৭ সালে নির্বাহী পদে দায়িত্ব পালন করে।

    র‍্যাব অধিনায়ক আরও জানান, ১৯৯৫ সালে মতিন মেহেদীর নেতৃত্বে ‘আল্লাহর দল’ নামক জঙ্গি সংগঠনটি গড়ে ওঠে এবং ২০১৪ সালে মতিন মেহেদীর গোপন নির্দেশে এটি ‘আল্লাহর সরকার’ নামকরণ করা হয়।

    তাদের মতে, বর্তমানে যুদ্ধাবস্থা চলছে বিধায় তারা ঈদ, কোরবানি, হজ ইত্যাদি পালন করে না, জুমার নামাজ আদায় করে না এবং প্রতি ওয়াক্তে শুধু দুই রাকাত নামাজ আদায় করে। এমনকি ইসলামের কালেমার সাথে শেষ নবীর নাম যুক্ত করার ক্ষেত্রেও তাদের ভিন্নমত রয়েছে।

    তারা মনে করে, বর্তমান সময়ের জন্য মতিন মেহেদী আল্লাহর বিশেষ দূত হতে পারে। সংগঠনটি গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের সংবিধানে বিশ্বাসী নয়। তাদের মূল লক্ষ্য অনুকূল পরিবেশে দেশের মধ্যে নাশকতায় লিপ্ত হয়ে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের মাধ্যমে শান্তি-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা এবং তাদের নিজেদের কাঠামো অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

    অপরদিকে আশুলিয়া থেকে চাঞ্চল্যকর কোরবানির পশু ব্যবসায়ীর গাড়িতে ডাকাতি ও হত্যার ঘটনায় জড়িত আন্তঃজেলা ডাকাত দলের চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা সবাই আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তাদের কাছ থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত মোবাইল এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাতুড়ি উদ্ধার করা হয়েছে।

    বিএম/এমআর