ডেঙ্গুতে স্কুলছাত্র রাইয়ানের মৃত্যু
    ছেলের লাশ দাফনের সময় খবর এলো মেয়েও সংকটে

    ছেলের জানাজা শেষে যখন দাফন করতে নিচ্ছিলেন, তখনই খবর পেলেন একমাত্র মেয়েরও প্লাটিলেটের মাত্রা নেমে যাচ্ছে। তাকেও বাঁচানো মুশকিল। এমন খবরে চরমভাবে ভেঙে পড়েন মমিন সরকার ও তার পরিবার। হাসিখুশি ছোট্ট পরিবারটি আগে কখনো এত শোক সয়েছে বলে মনে হয় না।

    এভাবেই ঘটনার বর্ণনা করেন ডেঙ্গুতে শিশু রাইয়ান সরকারের চাচা মনিরুল ইসলাম। রাইয়ান মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। ৩১ জুলাই জন্মদিনে ধরা পড়ে তার ডেঙ্গুজ্বর। বাবা মমিন এসিআই কোম্পানির জোনাল সেলস ম্যানেজার। তড়িঘড়ি করে ছেলেকে ভর্তি করান স্কয়ার হাসপাতালে। অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে। শিশু রাইয়ানকে রক্ত দেওয়া হয়, আইসিইউ থেকে লাইফ সাপোর্টেও নেওয়া হয়। কিন্তু সব চেষ্টা বৃথা করে মৃত্যুর কাছে হার মানে সে। গত শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে সে মারা যায়।

    গতকাল প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে। তেজগাঁওয়ের রহিম মেটাল জামে মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।
    মমিনের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচির মুকুন্দগাঁতী গ্রামে। পরিবার নিয়ে থাকেন মোহাম্মদপুরের শেখেরটেকে।

    তিনি বলেন, ‘ছেলের লাশ যখন আমার কাঁধে তখন মেয়ে মালিহা সরকার (৬) মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে হাসপাতালে। এ কষ্ট সহ্য করা কঠিন। আমি ভাবতেই পারিনি, এমনটা ঘটবে আমার সঙ্গে। ’ গতকাল স্কয়ার হাসপাতালে মেয়ের পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে মমিন বলেন, ‘মেয়ে ১ আগস্ট থেকে ভর্তি আছে স্কয়ারের ১১২৩ নম্বর বেডে। ঠিক এ বেডেই ৩১ জুলাই ভর্তি করেছিলাম রাইয়ানকে। ছেলের শরীরিক অবস্থা অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। তখন মেয়েকে এ বেডে ভর্তি করি। ’ চোখ মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ‘ছেলে আমার সত্যিই চলে যাবে এটা বিশ্বাসই হয়নি। চিকিৎসকরা যখন হাল ছেড়ে দিলেন তখনো মনে হচ্ছিল ছেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। ’

    মালিহার বেডে বসে কাঁদছেন মা জান্নাত আরা রোমানা, চাচা মনিরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী। কেউ কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। রোমানা বিলাপ করতে করতে বলছেন, ‘মালিহার আগে জ্বর এসেছিল। ওরা যা যা করবে দুজন একসঙ্গেই করবে। তাই ছেলে আমার বারবার বলছিল, ‘আমারও জ্বর আসুক, তাহলে মালিহার পাশে শুয়ে ওর সঙ্গে কথা বলতে পারব। রাইয়ান ঘরের ভেতরে ফুটবল খেলছিল। কী জোরে জোরে বল পেটাচ্ছিল। ওইটাই মনে হয় ওর শেষ খেলা ছিল। রাতে ঘুমের ঘোরে আমার ছেলে বলছিল, ‘সব ভেঙে চুরে আসতেছে। আসিস না, তুই আসিস না। ’ একটু স্বাভাবিক হয়ে তিনি বলেন, ‘সব খবরে দেখলাম আমার ছেলে নাকি জন্মদিনে মারা গেছে। এটা মিথ্যা। আমার ছেলের জন্ম ২০০৮ সালের ২২ জানুয়ারি। ’

    এ সময় মালিহার হাতে স্যালাইন দেওয়া। কারও সঙ্গে কথা বলে না, সে সবার দিকে শুধু তাকিয়ে থাকে। মালিহা এখনো জানে না, তার খেলার সাথী আর বেঁচে নেই! মালিহা বলে, ‘কালকের চেয়ে আজ একটু ভালো লাগছে। কিন্তু শুতে কষ্ট হয়। ’ চাচা মনিরুল জানান, মালিহার প্লাটিলেট কিছুটা বেড়েছে। চিকিৎসক তাকে আশঙ্কামুক্ত না বললেও অবস্থা কিছুটা ভালোর দিকে বলে জানিয়েছেন।

    বিএম/এমআর