চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে গৃহবধু বৈশাখী দে’কে হত্যা,আত্নহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার অভিযোগ

    বাংলাদেশ মেইল || নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানাধীন দক্ষিণ জ্যৈষ্ঠপুরার গৃহবধু বৈশাখী দে’কে খুন করা হলেও  পরিকল্পিত হত্যাকান্ডকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। থানা মামলা না নেয়ায় কোর্টে হত্যা মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার।

    নন্দী পাড়ার প্রবাসী সুজন দে র স্ত্রী বৈশাখী দে(২৪) আত্মহত্যা করেননি বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের ভাই বাবলু দেব। পরিবারের অভিযোগ বৈশাখী দে’কে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন জোর পূর্বক বিষ খাইয়ে হত্যা করেছেন।নিহতের ভাই আরোও অভিযোগ করেন তার বোনকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন যৌতুকের জন্য বিভিন্ন সময়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। তিনি বলেন,  ঘটনার পর থেকে তারা থানা পুলিশের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি উল্টো পুলিশ এই ঘটনায় রহস্যজনক আচরণ করছেন।নিহতের ভাই বাবলু দেব(২৭) বোয়ালখালী থানার ওসি এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের সহায়তা কামনা করেন।

    নিহতের ভাই বাংলাদেশ মেইলকে জানান, তিনি তার নিহত বোনের মৃতদেহ ২৯ ই সেপ্টেম্বর ২০১৯ইং তারিখে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসার পর পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করে পুলিশের সহায়তা চাইলে ৯৯৯– এর পক্ষ থেকে কনভারসেশন এর মাধ্যমে বোয়ালখালী থানার ওসি জনাব নেয়ামত উল্ল্যাহ নিহতের ভাই কে ফোর্স পাঠানোর কথা বলেন। কিন্তু পরবর্তীতে লাশ নিয়ে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও পুলিশের কোনো সদস্য না আসায় নিহতের শেষকৃৃত্য  সম্পন্ন করেন পরিবার।

    এরপর নিহতের পরিবার ৩০ই সেপ্টেম্বর ২০১৯ইং তারিখে বোয়ালখালী থানায় মামলা করতে গেলে থানা মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায় বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের পরিবার। থানা মামলা না নেয়ার কারণে তারা ৬ ই অক্টোবর ২০১৯ ইং তারিখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ চট্টগ্রাম, এ মামলাটি দায়ের করেন বলে জানিয়েছে নিহতের পরিবার। পরবর্তীতে বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল মামলাটি প্রাথমিক তদন্তের জন্য এফ.আই.আর. হিসেবে গ্রহণ করে থানাকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন।যার মামলা নং: ৫৩১/২০১৯।মামলায় আসামি করা হয় পাঁচ জনকে তারা হলেন, দেবর সুমন দে, স্বামী সুজন দে, শশুর রঞ্জিত দে, শাশুড়ি বকুলি দে, এবং ননন সন্জু ঘোষ।ঘটনার পরপরই দেশ ছেড়ে দুবাই চলে যায় প্রধান অভিযুক্ত দেবর সুমন দে।নিহতের পরিবার দাবি করছে মামলার অপর চার আসামিও দেশ ত্যাগের চেষ্টা করছে। আসামিরা যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারে সেজন্য তারা পুলিশের সহায়তা কামনা করেছেন।

    এদিকে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা না নেয়ার অভিযোগ করা হলেও অভিযোগের ব্যাপারে বোয়ালখালী থানার ওসি নেয়ামত উল্ল্যাহ কে ফোন করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বোয়ালখালী থানায় নিহতের পরিবার কোন মামলা দায়ের করতে আসেননি। ৯৯৯-এ  কথা বলার প্রসঙ্গে ওসিকে জিজ্ঞাসা করা হলে উনি ফোন কেটে দেন এবং পরবর্তীতে পুনরায় তাকে ফোন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।

    উল্লেখ্য,গত ১৯ই সেপ্টেম্বর ২০১৯ইং তারিখ রাতে বৈশাখী দে(২৪) তার ৩ বছরের ছেলে অংকন দে(৩),কে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার শশুর রণজিৎ দে ও দেবর সুমন দে র সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে বৈশাখীর গায়ে হাত তোলে এবং গালিগালাজ করে তার দেবর ও শশুর। পরবর্তীতে গত ২০ই সেপ্টেম্বর ২০১৯ ইং তারিখে বৈশাখীকে  মুমূর্ষ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয় এবং সেখানে অবস্থার উন্নতি না হলে পরে ২৬ ই সেপ্টেম্বর ২০১৯ইং তারিখে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আই.সি.ইউ. তে ভর্তি করা হয়। সেখানে ২৮ ই সেপ্টেম্বর ২০১৯ইং তারিখে তিনি মারা যান।

    মৃত্যুর আগে বৈশাখী তার স্বজনদের বলেছিলেন,  জোর করে তার মুখে বিষ ঢালা হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশের সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন বৈশাখীর পরিবার। তাদের অভিযোগ শ্বশুরবাড়ির লোকজন বৈশাখী দে ‘কে চমেক হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায়। হাসপাতালে থাকাকালীন সময়ে নিহতের স্বামী বা শ্বশুড়বাড়ির কেউ যোগাযোগ করে নি। এমনকি চিকিৎসার খরচও প্রদান করেনি তারা।