পরকীয়া-দাম্পত্য কলহে মাসে গড়ে তিনটি খুন হয় চট্টগ্রামে

    খুন

    স্ত্রী পরকীয়ায় আসক্ত, মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে। এ নিয়েই শুরু দাম্পত্য কলহ। আবার স্বামী আগে বিয়ে করেছেন, প্রথম বিয়ের কথা গোপন করে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন—এমন ঘটনায়ও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ চলছে। আর এই কলহের শেষ পরিণতি স্বামীর হাতে স্ত্রী কিংবা স্ত্রীর হাতে শিশুসন্তানসহ স্বামী খুন। দাম্পত্য কলহের জের ধরে চট্টগ্রামে এমন খুনোখুনির ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। সর্বশেষ এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম্পত্য কলহে প্রাণ গেছে দুই নারীর।

    নগর পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য মতে, বন্দর নগরের ১৬ থানায় সংঘটিত অপরাধের তথ্য বিবরণীতে পরকীয়ার ঘটনায় খুনের মামলার আলাদা হিসাব রাখা হয় না। তাই পরকীয়া ও দাম্পত্য কলহে হত্যাকাণ্ডের হিসাব নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে মাসে গড়ে তিনটি খুনের ঘটনাই থাকে পরকীয়া-দাম্পত্য কলহসংক্রান্ত।

    পরকীয়া ও দাম্পত্য কলহে খুনোখুনি বেড়ে যাওয়া সমাজের জন্য অশুভ বার্তা উল্লেখ করে নগর পুলিশ কমিশনার মাহাবুবর রহমান বলেন, ‘নৈতিক অবক্ষয়ের কারণেই এ ধরনের অপরাধের ঘটনাগুলো ঘটছে। পুলিশ আসামি গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করছে। এরপর দৃষ্টান্তমূলক বিচার হলে মানুষ হয়তো আরেকটু সচেতন হবে।’ এ ব্যাপারে সচেতনতামূলক উদ্যোগ নেবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিতে পারলে ভালো হতো। তবে পুলিশের চেয়ে সামাজিক সংগঠনগুলো এগিয়ে এলে ভালো হয়। সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা নিশ্চিত করতে অনৈতিক সম্পর্কগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। তাহলেই এ ধরনের অপরাধ কমবে।’

    রানু হত্যা : গত ২০ ডিসেম্বর ইপিজেড থানার বন্দরটিলা বক্সআলী মুন্সি রোডের এক বাসায় জেসমিন আক্তার রানুকে হত্যা করেন তাঁর স্বামী আবদুর রাজ্জাক। তিন বছর আগে বিয়ের সময় রাজ্জাক নিজেকে অবিবাহিত দাবি করছিলেন। পরে রানু জানতে পারেন যে রাজ্জাকের আগের পক্ষের স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। এই নিয়ে দাম্পত্য কলহ চলছিল।

    ইপিজেড থানার ওসি নুরুল হুদা বলেন, বাবুর্চি পেশায় নিয়োজিত রাজ্জাক জানতে পারেন যে তাঁর স্ত্রী রানু পরকীয়া প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে দাম্পত্য কলহ বাড়ে। শেষে ২০ ডিসেম্বর রাতে রানুকে মারধর করেন রাজ্জাক। এতে রানুর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় রানুর মা মাজেদা বেগম ইপিজেড থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় গতকাল সোমবার রাজ্জাককে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।

    মীম হত্যা : বন্দর থানার ইস্ট কলোনির এক বাসার ভাড়াটে লরিচালক জাবেদ হাওলাদার ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন গার্মেন্টকর্মী সুরমা আক্তার মীমকে। বিয়ের মাত্র ১৪ দিনের মাথায় গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে স্ত্রীর গলা কেটে বাসা ছেড়ে পালিয়ে যান জাবেদ। দুই দিন পর ফরিদপুর থেকে জাবেদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি জানান, বিয়ের পরই বুঝতে পারেন যে মীম পরকীয়ায় আসক্ত। এ নিয়ে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। হত্যাকাণ্ডের রাতেও কলহ চলে। একপর্যায়ে জাবেদকে হত্যার হুমকি দেন মীম। এরপর জাবেদ বঁটি দিয়ে স্ত্রীর গলা কেটে পালিয়ে যান।

    মা-মেয়ে হত্যা : গত ১০ অক্টোবর বন্দর থানা পুলিশ নিমতলা বুচুইক্যা কলোনির বাসা থেকে বাবা আবু তাহের ও বিবি ফাতেমা (৪ বছর) নামে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বাবা-মেয়েকে গলায় ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের দায়ে গ্রেপ্তার হন তাহেরের স্ত্রী বিবি হাছিনা।

    বিবি হাছিনা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, তাঁর সঙ্গে মাইন উদ্দিন নামে একজনের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। দুজনের ‘অন্তরঙ্গ’ দৃশ্য দেখে ফেলে মেয়ে। ঘটনা বাবাকে জানিয়ে দেবে বললে মা নিজের মেয়ের পা চেপে ধরেন এবং মইন গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যা করেন। কিছু সময় পর স্বামী বাসায় এলে তাঁকেও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।

    বন্দর থানার ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, পরকীয়ার শিকার হয়েছে বাবা ও মেয়ে। অনৈতিক সম্পর্ক পারিবারিক কলহ বাড়াচ্ছে। তা থেকে খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে।

    দাম্পত্য কলহে এভাবে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে বন্দর নগরে। এর মধ্যে ২৪ নভেম্বর ইপিজেড থানার ব্যাংক কলোনির এক বাসায় হত্যা করা হয় রোখসানা বেগম নামে এক গৃহবধূকে। এ ঘটনায় তাঁর স্বামী দেলোয়ার জড়িত বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। ২ ডিসেম্বর খুলশী থানার ঝাউতলা ডিজেল কলোনির বাসা থেকে রোজি আক্তার নামে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায়ও তাঁর স্বামী রেজাউল করিম জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ।

    বিএম