চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গ করোনা হাসপাতাল চান সুজন

    চট্টগ্রাম মেইলঃ চট্টগ্রামের গুরুত্ব বিবেচনা করে করোনা রোগীদের জন্য ঢাকার ন্যায় একটি পূর্ণাঙ্গ কোভিড হাসপাতাল চালু করার জন্য বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। তিনি আজ শনিবার (১৩ই জুন ২০২০ইং) বেলা ১২টায় উত্তর কাট্টলীস্থ তাঁর নিজ বাসভবনে নাগরিক উদ্যোগের কর্মপন্থা নির্ধারনী সভায় উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

    এ সময় জনাব সুজন বলেন প্রাচ্যের রাণী খ্যাত চট্টগ্রাম দ্রুত মৃত্যুপূরীতে পরিণত হচ্ছে। শত অনুনয়-বিনয়ের পরও রোগী ভর্তি করছে না বেসরকারি হাসপাতালগুলো। মুমূর্ষু রোগী নিয়ে অসহায় স্বজনরা ছুটছেন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে। এক পর্যায়ে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন রোগী। অথচ তারা একটু মানবিক হলেই অনেকগুলো তাজা প্রাণ বেঁচে যেতো অনায়াসেই। তাই আর কালবিলম্ব না করে আপনারা একটু মানবিক হোন। চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য সেবায় এতোদিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলো বেসরকারি হাসপাতালগুলো সেজন্য আপনাদের নিকট আমাদের অভিবাদন। অথচ করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে অদৃশ্য কারণে পিছনে হটতে শুরু করে বেসরকারি হাসপাতালগুলো। অনেক দেন দরবার করেও তাদের মন গলানো যায়নি। কিন্তু মানবতার এক মহান পেশাকে ব্রত করে এ পেশায় এসেছিলেন তারা। তিনি আঁকুতি জানিয়ে বলেন আমরা হেলায় ফেলায় অনেক সময় নষ্ট করেছি, অনেক অমূল্য প্রাণও হারিয়েছি। তাই মানুষের জীবন মৃত্যুর এ সন্ধিক্ষণে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি বেসরকারি হাসপাতালকে শুধুমাত্র করোনা রোগীদের চিকিৎসায় উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য বিনীত আহবান জানান তিনি। তিনি বলেন চট্টগ্রাম ব্যবসা বাণিজ্যের একটি উজ্জ্বল কেন্দ্রভূমি। ব্যবসায়িক কারণে প্রতিদিন চট্টগ্রামে বিভিন্ন জেলার মানুষ এখানে আসা যাওয়া করছে। সে কারণে চট্টগ্রামে প্রতিদিন নতুন নতুন করোনা রোগী সংক্রমিত হচ্ছে। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাতে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আপনাদেরকেই চালকের আসনে আসীন হতে হবে। এছাড়া সম্প্রতি চিকিৎসাসেবা না পেয়ে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রামবাসীর মনে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। যে কোন সময় সে ক্ষোভ থেকে অনাকাংখিত পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হতে পারে। তাই নগরবাসীর আস্থা অর্জন করতে হলে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা চিকিৎসাসহ নিয়মিত চিকিৎসা প্রদানের কোন বিকল্প নেই। চট্টগ্রামবাসী আপনাদের কাংখিত ফি দিয়েই চিকিৎসা করতে প্রস্তুত, দয়া করে এ অধিকার থেকে কাউকে নিরাশ করবেন না। তিনি চট্টগ্রামবাসীর চিকিৎসা সেবার পথে যারা অন্তরায় তাদেরকে চিহ্নিত করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীর নিকট বিনয়ের সাথে অনুরোধ জানান।

    তিনি মা ও শিশু হাসপাতালকে পূর্ণাঙ্গ করোনা হাসপাতালে রূপান্তর করার জন্য সরকারের সদয় সহযোগীতা কামনা করেন। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতালকেও করোনা চিকিৎসার উপযোগী করে গড়ে তোলার আহবান জানান। তিনি ইপিজেডসমূহে আইসোলেশন সেন্টার এবং করোনা নমূনা পরীক্ষার কার্যক্রম দ্রুততার সাথে শুরু করার সবিনয় অনুরোধ জানান। করোনা নমূনা পরীক্ষায় ইম্পেরিয়েল হাসপাতালকে এগিয়ে এসে কার্যক্রম শুরু করায় চট্টগ্রামবাসীর পক্ষে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপণ করেন তিনি।

    তিনি সেবা সংস্থাসমূহকে করোনা মহামারীর ডামাডোলে নাগরিক সমস্যাসমূহ ভূলে না যাওয়ার করজোড়ে আবেদন জানান। দেখা যাচ্ছে যে দেশে মৌসুমি বায়ুর আগমন ঘটছে। উকি দিচ্ছে আষাঢ়। নগরবাসীর মনে শুরু হয়েছে অজানা আতংক। আবার বুঝি জলাবদ্ধতায় অমূল্য সম্পদ নষ্ট হয়ে যায়। সম্প্রতি সামান্য বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় জলবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তাই করোনার পাশাপাশি জলাবদ্ধতাকেও অধিকতর গুরুত্ব দানের আহবান জানান তিনি। বিশেষ করে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসণ প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে নগরীর বিভিন্ন খাল নালাকে বাঁধ দিয়ে পানির স্বাভাবিক গতিপথ রূদ্ধ করা হয়েছে। এতে করে অল্প বৃষ্টিতেই নগরীর অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। তাই দ্রæততার সাথে এ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষকে একসাথে কাজ করার অনুরোধও জানান তিনি। নচেৎ আগামী বর্ষায় চট্টগ্রামবাসীকে গভীর জলাবদ্ধতায় নিমগ্ন হতে হবে এবং এর দায় তখন কেউ এড়াতে পারবেন না। তাছাড়া মশক নিধন কার্যক্রমও স্থিমিত হয়ে গিয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন জনাব সুজন। তিনি বলেন বর্ষা আসতে না আসতেই দেখা যাচ্ছে যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ধরা পড়ছে। তিনি মশক নিধন কার্যক্রমকেও অধিকতর গুরুত্ব দানের জন্য চসিক মেয়রের আশু সুদৃষ্টি কামনা করেন। এছাড়া নগরীর পোর্ট কানেকটিং রোড এবং আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের অবশিষ্ট কাজও দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাপ্ত করে জনগনকে জনদুর্ভোগ থেকে মুক্তি দানের আহবান জানান।

    তিনি বলেন বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে করোনা কেন্দ্রিক মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। বহুল জনবসতিপূর্ণ এই দেশে করোনাভাইরাস সক্রিয়ভাবে ছড়িয়ে পড়লে তা হবে মারাত্মক রকমের দুর্যোগ। আর এই ভাইরাস বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির ক্ষেত্রে মেডিক্যাল বর্জ্যের অব্যবস্থাপনাই হবে সবচেয়ে বড় কারণ। হাসপাতাল, ক্লিনিক, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ইত্যাদিকে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে। তিনি করোনা কেন্দ্রিক মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণপূর্বক অভিজ্ঞ কোন প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দানের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব উপায়ে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উপরও নজর দানের জন্য চসিক মেয়রের প্রতি আহবান জানান।

    এছাড়া করোনাকালীন সময়ে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের স্বাভাবিক আয়ের পথ অনেকটা রূদ্ধ হয়ে গিয়েছে। জনগন অনেকটা কষ্ট করে তাদের প্রাত্যহিক জীবন যাপন পরিচালনা করছে। দেখা যাচ্ছে যে নগরীর বিভিন্ন এলাকার মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণীর জনগন বিভিন্ন এনজিও’র উপর নির্ভরশীল। এসব এনজিওতে তারা টাকা জমা রাখে আবার প্রয়োজন সময়ে ঋণ নিয়ে বিভিন্ন ব্যয় নির্বাহ করে। ইতিমধ্যে জনগনের দূদর্শার কথা চিন্তা করে ছয় মাসের জন্য এনজিও ঋণের কিস্তি শিথিল করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি। তারপরও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গজিয়ে উঠা বিভিন্ন এনজিও সুদ এবং ঋণের কিস্তির জন্য তাদের গ্রাহকদের হয়রানি করছে। এক্ষেত্রে ঐসব এনজিও বিভিন্ন অমানবিক কর্মকান্ডও পরিচালনা করছে। যা ঐসব গ্রাহকদের জন্য মরার উপর খরার ঘাঁ। জনাব সুজন এসব এনজিওকে আগামী তিন মাস পর্যন্ত সকল প্রকার সুদ এবং ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখার উদাত্ত আহবান জানান। তিনি এসব এনজিওদের গ্রাহকদের প্রতি সংযত আচরণ করার অনুরোধ জানান নচেৎ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার হুশিয়ারি দেন।

    তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে যারা করোনা চিকিৎসায় এগিয়ে এসেছেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। করোনা চিকিৎসায় পেশাগত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চিকিৎসক এবং নার্স দিয়ে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করার আহবান জানান। ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্থাপিত ঐ সব হাসপাতাল থেকে যাতে আশেপাশের এলাকায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখারও অনুরোধ জানান। জনাব সুজন পর্দার অন্তরালে থেকে যে সকল ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতি করোনা চিকিৎসায় মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। এছাড়া আরো যে সকল সামর্থ্যবান শিল্পপতি এবং শিল্পগ্রুপ হাত গুটিয়ে বসে আছেন তাদেরকে চট্টগ্রামবাসীর এ দূর্যোগে পাশে থাকার করজোড় অনুরোধ জানান। তিনি বলেন চট্টগ্রামবাসীর এ বিপদে আপনারা যদি উদারতার হাত প্রশস্ত করেন চট্টগ্রামবাসীও আপনাদের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়বে আর না হয় চট্টগ্রামবাসী আপনাদের ব্যাপারে অন্য সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত থাকবে।

    সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সদস্য সচিব হাজী মোঃ হোসেন। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আব্দুর রহমান মিয়া, নিজাম উদ্দিন, নূরুল কবির, মোরশেদ আলম, মোঃ শাহজাহান, হাফেজ মোঃ ওকারউদ্দিন, শেখ মামুনুর রশীদ, শিশির কান্তি বল, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, মোঃ বাবলু, জমির উদ্দিন মাসুদ, মোঃ ওয়াসিম, উৎপল দত্ত প্রমূখ।