বারবার আলাপ আলোচনার পরও স্বাস্থ্য বিভাগ চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছে
    মানুষের লাশের উপর দাঁড়িয়ে কাউকে ব্যবসা করতে দেওয়া হবে নাঃ সুজন

    চট্টগ্রাম মেইলঃ মানুষের লাশের উপর দাঁড়িয়ে কাউকে ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না বলে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারন করেছেন জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। তিনি আজ সোমবার (১৫ই জুন ২০২০ইং) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ হুশিয়ারি দেন।

    এ সময় জনাব সুজন বলেন বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের করাল থাবা থেকে চট্টগ্রামের জনগনকে রক্ষা করার জন্য চট্টগ্রামের ১২টি বেসরকারি হাসপাতালের সাথে চুক্তি সম্পাদন করে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ। এরপর তারা করোনা আক্রান্ত রোগীদের ভর্তি করছি করবো বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। পরবর্তীতে বারবার আলাপ আলোচনার পরও স্বাস্থ্য বিভাগ চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছে। এক্ষেত্রে তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাও মানছে না। হাসপাতাল মালিকরা তাদের রোগী বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে একের পর এক নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা দীর্ঘদিনের গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির সংযোগ বিহীন পরিত্যক্ত হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালটিকে করোনা রোগীদের চিকিৎসার উপযোগী করে গড়ে তোলার কথা বলে প্রস্তুতি সম্পন্ন না করেই উদ্বোধনের নাটক মঞ্চায়িত করেছে। দেখা যাচ্ছে যে উদ্বোধনের পরেও সেটা সম্পূর্ণ চালু করা যায়নি। যেখানে নগরীর অন্যান্য হাসপাতালে রোগী ভর্তির জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় সেখানে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালটি রোগীশুণ্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স, আয়ার অভাবে সেখানে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলো রোগী ফিরিয়ে দিয়ে চট্টগ্রামকে মৃত্যুপূরীতে পরিণত করছে। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক চিকিৎসা না দিলে লাইসেন্স বাতিলসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করার হুমকি দেওয়া হলেও তারা সেগুলো কর্ণপাতও করছে না। চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে পরিকল্পিতভাবে মানুষকে মৃত্যুর মুখোমুখি করা হচ্ছে। নাগরিক উদ্যোগের পক্ষ থেকে এ অবস্থা দূরীকরণে বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট বারংবার অুননয় বিনয় অনুরোধ করা হলেও এখনো তারা পর্দার অন্তরালে থেকে তাদের অদৃশ্য খেলা চালিয়ে যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে সম্পূর্ণভাবে বুঝা যাচ্ছে যে খুব কৌশলে চিকিৎসা সেবা না দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চলছে। তবে এ অবস্থা আর বরদাশত করা হবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারন করে জনাব সুজন বলেন এখন থেকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে রোগী ভর্তি করতে বাধ্য করা হবে। আমরা এর আগেও আবেদন জানিয়েছিলাম মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক চট্টগ্রামের সকল আইসিইউ, সিসিইউ এবং এইচডিইউ বেডকে সেন্ট্রাল মনিটরিংয়ের আওতায় আনার জন্য। আমাদের কাছে তথ্য আছে যে হাসপাতালের পিয়ন দাড়োয়ানদের নামে এসব বেডগুলো ভ‚য়া বুকিং করে রাখা হচ্ছে অথচ রোগীর প্রয়োজনে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন এগুলো কি আবাসিক হোটেলের সিট যে আগে থেকেই রোগীর নামে বুকিং করে রাখা হবে? আমরা স্পষ্টভাবেই বলে দিতে চাই এরকম প্রাতিষ্টানিক ভূয়া বুকিং আমরা মানি না। মানুষের চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত করে যারা হাসপাতালের যন্ত্রপাতি বাঁচাতে চায় তারা গনদুশমন। তাদের বিরুদ্ধে আজ থেকে আমাদের আপোষহীন সংগ্রাম শুরু। প্রতিদিন অস্বাভাবিক এসব রোগী মৃত্যুর খবর শুনতে শুনতে আমরা নির্বাক হয়ে পড়ছি। তার মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের রোগীদের প্রতি এরকম নিস্পৃহতা আমাদের হতবাক করে তুলেছে। এসব হাসপাতালে রোগী ভর্তি করতে আসা আত্নীয়-স্বজনদের নিকট আমাদের আবেদন থাকবে কোন হাসপাতাল যদি রোগী ভর্তি না করে অথবা আইসিইউ, সিসিইউ এবং এইচডিইউ বেড দিতে না চায় সেক্ষেত্রে এসব হাসপাতালের আইসিইউ, সিসিইউ এবং এইচডিইউ বেড পরিদর্শন করার জন্য। পরিদর্শন শেষে যদি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া না যায় তাহলে জোর করে সেখানে রোগী ভর্তি করানোর জন্য। কর্তৃপক্ষ যদি তারপরও রোগী ভর্তি কিংবা আইসিইউ, সিসিইউ, এইচডিইউ বেড না দেয় এবং কোন কারণে রোগীর মৃত্যু হয় সেক্ষেত্রে কোন ধরণের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তার সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে। এক্ষেত্রে আইন আদালত সংক্রান্ত বিষয়ে নাগরিক উদ্যোগ ঐ রোগীর আত্নীয়-স্বজনকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করবেন বলেও আশ্বাস প্রদান করেন তিনি। তিনি আরো বলেন আমরা ইতিমধ্যেই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নৈরাজ্যের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করেছি। যারা রোগী সাধারনকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করে মৃত্যুর মুখে পতিত হতে বাধ্য করছে এরা খুনী। এসব খুনীদের আগামী তিন দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম ছেড়ে যাওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন চট্টগ্রামে থাকলে অবশ্যই রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। এসব খুনী এবং গণদুশমনদের নামের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে। শীঘ্রই এদের নাম ও ছবি গণমাধ্যমসহ নগরীর উন্মুক্ত স্থানে প্রদর্শন করা হবে। চট্টগ্রাম শহরে হয় তারা থাকবে না হয় আমরা থাকবো। এদেরকে কোনভাবেই আর প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। তিনি প্রভাবশালী মহলকে বিভিন্ন ছদ্মাবরণে এসব খুনী গণদুশমনদের আশ্রয় না দেওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ জানান। তিনি বলেন এ শহর নিঃশ্বাস নিতে চায়। এ শহরের মানুষের নিঃশ্বাস নিতে যারা বাঁধা সৃষ্টি করবে তারা যত শক্তিশালীই হোক না কেন তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

    এছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে নগরীর ১০টি ওয়ার্ডকে রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করে পর্যায়ক্রমে লকডাউনের সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান জনাব সুজন। তিনি লকডাউনকৃত এলাকাসমূহে যাতে কোন প্রকার মানবিক সমস্যা সৃষ্টি না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের নিকট আহবান জানান। লকডাউনকৃত এলাকায় কিভাবে দৈনন্দিন কর্মকান্ড পরিচালিত হবে তার একটি গাইডলাইনও জনগনকে প্রদান করার লক্ষ্যে প্রচার প্রচারণা কার্যক্রম শুরু করার জন্য সিটি কর্পোরেশনকে অনুরোধ জানান তিনি। তিনি লকডাউনকৃত ওয়ার্ডসমূহের জনগনকে সরকারি নির্দেশনা মেনে ঘরে থাকার সবিনয় অনুরোধ জানান। এছাড়া জনসাধারনের প্রয়োজনে সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড ভিত্তিক হটলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করার আহবান জানান। তিনি লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসনকে সহযোগীতা করার জন্য নগরবাসীর প্রতি উদাত্ত আবেদন জানান। তিনি জনগনকে যে কোন প্রয়োজনে নাগরিক উদ্যোগের সহযোগিতা নেওয়ারও অনুরোধ জানান। এছাড়া নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা খোরশেদ আলম সুজনও লকডাউনকৃত এলাকার অধিবাসী তারপরও নগরবাসীর যে কোন প্রয়োজনে তাঁর সাথেও যোগাযোগ করার আহবান জানান তিনি।