করোনাকালে রাজনৈতিক বিতন্ডা তুঙ্গে
    উত্তর জেলা আ’লীগের অননুমোদিত কমিটির পদ ব্যবহার করে ছাত্রলীগের বিবৃতি

    বাংলাদেশ মেইল ::

    উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালামের করোনা মুক্তির জন্য দোয়া মাহফিল করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে উত্তর জেলা ছাত্রলীগ।

    গত ৩০ শে জুন এম এ সালামের রোগমুক্তির জন্য দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে উত্তর জেলা ছাত্রলীগ। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আতাউর রহমান আতাও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।  ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের উপস্থিতিতে  অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অননুমোদিত উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের  কমিটির কয়েকজনের নতুন পদ পদবী ব্যবহারকে নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুষ্ঠানের  প্রেস রিলিজকে ব্যঙ্গ করে পোস্ট দিতেও দেয়া যায় অনেককেই। কয়েকটি  স্থানীয় দৈনিকে এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিতও হয়।

    এই নিয়ে করোনা দূর্যোগেও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

    দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আ. লীগের কাউন্সিলে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালামকে সভাপতি ও মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শেখ আতাউর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেছিলেন কাউন্সিররা। উত্তর জেলার সম্মেলন ও কাউন্সিল হলেও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনসহ নানাবিধ কারণে জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হয়নি।

    ২০১৩ সালে দলের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ার পর ফটিকছড়ির সাবেক সংসদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম চৌধুরী উত্তর জেলা আ. লীগের সভাপতি হন। গত বছরের ২৭ জানুয়ারি নুরুল আলম চৌধুরীর মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাউজানের টানা চার বারের এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম। গত ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আ. লীগের কাউন্সিলে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ সালামকে সভাপতি ও মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শেখ আতাউর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেছেন কাউন্সিলরা।

    ৭ ডিসেম্বর ২০১৯ উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হলেও পূর্নাঙ্গ কমিটি এখনো অনুমোদন দেয়নি কেন্দ্র । সম্মেলনের পরে  খসড়া কমিটি কেন্দ্রে জমা দেয়া হলেও উত্তর জেলার বেশকিছু নেতার আপত্তির মুখে সেই কমিটি অনুমোদন লাভ করেনি।

    সম্প্রতি গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে অননুমোদিত কমিটির পদ পদবী ব্যবহার করা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, সদ্য বিদায়ী কমিটির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ইউনুস গণি,  সংগঠনের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও রাউজান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার বাবুলসহ জেলার সিনিয়র নেতাদের অনেকেই।

    এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসাইন (চট্টগ্রাম জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত)   বলেন, কেন্দ্রে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের একটি কমিটি অনুমোদনের জন্য জমা দেয়া আছে৷ তবে সেটি এখনো অনুমোদন দেয়া হয়নি। করোনা পরিস্থিতির জন্য সহসা সে কমিটি অনুমোদনের সম্ভাবনাও নেই। তাই উত্তর জেলা ছাত্রলীগসহ কেউ নতুন কমিটির পদ পদবী ব্যবহার করে কোন বিবৃতি দিয়ে থাকলে তারা ভুল করেছে। মাননীয়  প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় মাঠে রয়েছি। এই মুহুর্তে কোন জেলা কমিটি অনুমোদনের সুযোগও নেই৷ এরপরও কেউ নতুন পদ পদবী ব্যবহার করে গণমাধ্যমে বিবৃতি প্রদান করলে তাদের বিরোদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে৷ ‘

    জানতে চাইলে রাউজান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান  এহসানুল হায়দার বাবুল বলেন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কোন কমিটি কেন্দ্রে এখনো অনুমোদন পায়নি। তাই যারা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের পদ পদবী ব্যবহার করে সংগঠনের প্যাডে বিবৃতি দিচ্ছেন তারা সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করছেন। বর্তমানে সবাই বৈশ্বিক মহামারী করোনা দূর্যোগ মোকাবেলায় ব্যস্ত। সেখানে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের পদ ব্যবহার করে যারা বিবৃতি প্রচার করছেন তারা জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করছে। ‘

    এদিকে,  উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালামের  করোনা আক্রান্ত হবার পর তার রোগমুক্তির জন্য বিভিন্ন দোয়া মাহফিল করে গণমাধ্যমে দেয়া বিবৃতিতে  অননুমোদিত জেলা কমিটির পদ পদবী  ব্যবহারকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন।

    জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বখতেয়ার সাঈদ ইরান বলেন, প্রোগ্রামে আতা ভাই আমাদের নামের আগে এ পদবীগুলো দিয়ে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন। এখন উনি কেন এভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন সেটা আমি বলতে পারি না। তবে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি এখনো অনুমোদন দেন নি প্রধানমন্ত্রী।

    যেহেতু প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেন নি সেই কমিটির পদবী আপনার নামের আগেও ব্যবহৃত হয়েছে সেক্ষেত্রে আপনি কোনো প্রতিবাদ জানাবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ইরান বলেন, এটা সিনিয়রদের বিষয়। আমি প্রতিবাদ জানাবো না।

    যাদের প্যাড নিয়ে বিতর্ক সেই উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, ” এটা আমাদের প্যাড না। যে প্যাড নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে সেখানে আমি বা আমার সভাপতি তপু’র সাক্ষর নেই। তাই এটার দায় দায়িত্ব আমরা উত্তর জেলা ছাত্রলীগ নেব নাহ এবং কারা এ কাজ করছে সে ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবো। ”

    তবে কমিটি অনুমোদন দেয়া না হলেও নতুন পদ পদবী ব্যবহার করে দলের সহযোগী সংগঠনের প্যাডে বিবৃতি দেবার বিষয়টিকে রাজনৈতিক কৌশল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  কমিটি যাই হউক গণমাধ্যমের কল্যাণে নতুন পদ প্রচারের কৌশল নিয়েছেন  দলের প্রবীন এক নেতার অনুসারীরা।