কুমিল্লায় সাংবাদিকসহ পরিবারের ৩ জনকে কুপিয়ে জখম

     

    বাংলাদেশ মেইল::

    কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক সমকালের উপজেলা প্রতিনিধি শরিফুল আলম চৌধুরী এবং তার বাবা ও বৃদ্ধা মাকে দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে। এসময় হাতুড়ি ও লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে।

    শনিবার দুপুরে ওই উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে আশংকাজনক অবস্থায় প্রথমে মুরাদনগর হাসপাতাল এবং পরে সন্ধ্যায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় শরিফুলের বাবা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন চৌধুরী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়াসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে সন্ধ্যায় মুরাদনগর থানায় মামলা করেছেন। ঘটনার পর চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মুরাদনগর থানার ওসি একেএম মনজুর আলম।

    এদিকে এদিকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাংবাদিক শরীফের সাথে থাকা তার চাচাতো ভাই নাজমুল মুঠো ফোনে জানান, শরীফের অবস্থা আশংকাজনক, শরীরে প্রচুর রক্তের প্রয়োজন। কিন্তু এখনো এবি পজিটিভ রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না, রাতেই তাকে ঢাকায় নিতে ডাক্তাররা বলেছেন, রোববার সকালে হয়তো ঢাকায় নেয়া হবে।

    সাংবাদিক শরিফুলের বাবা ও মামলার বাদী আহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন চৌধুরী জানান, আমার ছেলে শরিফুল বিভিন্ন সময়ে ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহানের দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করে।

    এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন আমার ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছিল। শুধু তাই নয়, বিশেষ একটি মহল ও শরীফের প্রতিপক্ষ একাধিক সাংবাদিকের ইন্ধনে তার বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। এতে শরিফ তাদের ভয়ে একমাস বাড়ির বাইরে ছিল। গত সপ্তাহে সে বাড়িতে আসে। তিনি আরও জানান, শরিফ বাড়িতে আছে এমন খবর পেয়ে শনিবার (৪ জুলাই) দুপুরে চেয়ারম্যান শাহজাহানের নির্দেশে তার লোকজন বাড়িতে ঢুকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই জোরপূর্বক শরিফকে টেনে-হিচড়ে ঘর থেকে বের করে উঠানে আনে।

    তারা দা দিয়ে কুপিয়ে, হাতুরি ও লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে তার দুই হাত ও পা ভেঙ্গে দেয়। দা দিয়ে তার মাথায় কুপ দিলে মগজের কিছু অংশ বেরিয়ে আসে। আমি ও তার মা তাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে রাম-দা দিয়ে আমার ডান হাতে কুপ দেয় এবং রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। এসময় তারা শরিফের মায়ের বাম হাত ভেঙ্গে দেয়। প্রাণে বাঁচার জন্য আমরা চিৎকার করলেও চেয়ারম্যানের লোকজনের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসার সাহস পায়নি। এ ধরণের তান্ডব চালিয়ে তারা চলে যায়। পরে শরিফকে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। অবস্থা আশংকাজনক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। আমরা মুরাদনগর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি।

    সাংবাদিক শরিফের বোন সুলতানা চৌধুরী মুন্নী জানান, তারা ঘরে ঢুকে আমাকে ঝাপটে ধরে কাপড় ছিড়ে ফেলে। আমি হাতে কামড় দিয়ে তাদের কাছ থেকে ছুটে দৌঁড়ে অন্য বাড়িতে গিয়ে আত্মরক্ষা করি। রাত ৮টার দিকে মুরাদনগর থানার ওসি এ কে এম মনজুর আলম বলেন, ‘সাংবাদিক শরিফকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান শাহজাহানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’ এদিকে চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারের পর এলাকার কতিপয় লোক তাকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়।