সাইফুল আলম, বাংলাদেশ মেইল ::
চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত রোগীদের বড় অংশই বাড়িতে থেকে নিচ্ছেন। জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি না হলে হাসপাতালে যেতে চাচ্ছেন না করোনা পজিটিভ রোগীরা।
গেল এক সপ্তাহে আক্রান্ত রোগী, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদন, চট্টগ্রাম মেডিকেল, জেনারেল হাসপাতালের রোগী ভর্তির রেজিস্ট্রার বিশ্লেষনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
৪ ঠা এপ্রিলের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামে মোট করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয় ২৩২ রোগী। ৪ এপ্রিল দেখা গেছে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে জেনারেল হাসপাতালে ১৪ জন, চমেকে ৯ জন, মা ও শিশুতে ৪ জন, বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে ১৪ রোগী ভর্তি হয়। দেখা যাচ্ছে আক্রান্তদের মাত্র ১৮ শতাংশ হাসপাতালে প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকিরা বাড়িতে থেকেই করোনা মোকাবেলা করছেন। অবশ্য আক্রান্ত হবার দুই তিনদিন পর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এমন রোগীও রয়েছে।
নগরীর জালালাবাদ হাউজিং এর বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিন জানান,করোনা পজিটিভ আসার পর থেকে নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে চিকিৎসা নেন তিনি। তিনি জানান বেসরকারি ও সরকারী হাসপাতালের উপর আস্থা ছিলো না তার। ফলে নিজের বাড়িতেই চিকিৎসা করে সুস্থ হয়েছেন তিনি।
জটিল রোগীরা মুলত ভর্তি হচ্ছেন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। এক্ষেত্রে অক্সিজেন সেচুরেশন কমে যাওয়া রোগীদের জন্য আইসিইউ এবং এইচডিও সংকট প্রকটভাবে দেখা যাচ্ছে।
করোনার রোগীর তুলনায় চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে সিসিও, আইসিও ব্যবস্থা না থাকায় সংকটে রোগীর স্বজনরা কষ্টের মধ্যেই দিনাতিপাত করছেন।
শনিবার সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩ জনের। শনাক্তের সংখ্যা ৩৮০ জন। সবমিলে চট্টগ্রামে করোনা রোগীর সংখ্য ৪৩ হাজার ৫’শ জনের উপরে এবং সর্বমোট মৃত্যুর সংখ্যা ৪০৯ জন।
চট্টগ্রামের বিশেষায়িত প্রথম কোভিড-১৯ চিকিৎসাকেন্দ্র জেনারেল হাসপাতালে আজ শুক্রবার একটি আইসিইউ শয্যাও খালি ছিল না। এখানে মোট ১০টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এ ছাড়া সাধারণ শয্যা ১৪০টি। তার মধ্যে ৮০টিতে রোগী ছিল।
হাসপাতালের কোভিড ব্যবস্থাপনার প্রধান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মো. আবদুর রব বলেন, গতকাল থেকে আইসিইউ শয্যার জন্য ফোন আসছে। কিন্তু আমরা দিতে পারছি না। কোনো আইসিইউ শয্যা খালি নেই। সাধারণ শয্যাও ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। যে হারে রোগী বাড়ছে, তা উদ্বেগজনক।
বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ২০০ রোগীকে সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১০টি। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত এখানে রোগী ছিলেন ১৫০ জনের বেশি। আইসিইউতে ৮ জন রোগী ছিলেন। দুটি জরুরি প্রয়োজনের জন্য রাখা হয়েছে।
একইভাবে বিআইটিআইডি হাসপাতালের ৩২টি শয্যার একটিও খালি নেই বলে জানা গেছে।
একইভাবে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও আইসিইউ এবং সাধারণ শয্যায় টান পড়েছে। চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে ৯২টি কোভিড শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি আইসিইউ এবং এইচডিইউ শয্যা।
একইভাবে নগরের বেসরকারি পার্ক ভিউ হাসপাতাল ও ম্যাক্স হাসপাতালেও কোনো শয্যা খালি নেই। পার্ক ভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, আইসিইউ ১০টিই পূর্ণ রয়েছে।
করোনা আক্রান্ত রোগীদের বড় একটি অংশ বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেবার পরও সরকারী বেসরকারি হাসপাতালগুলো বাড়তি রোগী চাপ সামাল দিতে পারছে না। এক্ষেত্রে করোনা আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে যাবার প্রবনতা বাড়লে সংকট আরো প্রকট আকার ধারন করবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।
বিএম/সাইফুল