চীনে গণহত্যা, তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহে লন্ডনে ধারাবাহিক শুনানি

    বাংলাদেশ মেইল ::

    চীনে উইঘুর মুসলিমদের ওপর চালানো হত্যা, নির্যাতন গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে ব্রিটেনের আদালতে ধারাবাহিক শুনানি শুরু হয়েছে। চীনের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে গত শুক্রবার ওই শুনানি শুরু হয়।

    বৃটিশ প্রখ্যাত ব্যারিস্টার স্যার জিওফ্রে নাইসের সভাপতিত্বে আট সদস্যের একটি প্যানেল চার দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রায় ৩০ জনের সাক্ষ্য নিবেন। শুনানির ব্যাপারে কোনো সরকারি সমর্থন না থাকলেও আয়োজকরা মনে করেন এটি চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে তথ্য প্রমাণ দাঁড় করাবে।

    প্যানেলটি শিক্ষাবিদ, আইনজীবী এবং প্রাক্তন বৃটিশ কূটনীতিকদের সমন্বয়ে গঠিত। স্যার জিওফ্রে বলেন, ‘আয়োজকরা ইচ্ছাকৃতভাবেই বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের সমন্বয়ে প্যানেল গঠন করেছেন। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্বের ঝুঁকি এড়াতে চীনা বিশেষজ্ঞদের প্যানেলে আনা হয়নি।’

    উইঘুর ট্রাইবুনাল হিসেবে গঠিত প্যানেলটি নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ উপস্থাপন করতে এই শুনানির আয়োজন করেন লন্ডনভিত্তিক ব্যবসায়ী নিক ভেচ। এর আগেও চীনের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ প্রমাণে ২০১৯ সালে নিক ভেচ শুনানির ব্যবস্থা করেন।

    চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াংয়ে সংখ্যালঘু উইঘুর ও অন্যান্য মুসলিম জনগোষ্ঠীরা বসবাস করেন। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে তাদের ওপর নির্যাতন ও গণহত্যা চালানোর অভিযোগ রয়েছে চীন সরকারের বিরুদ্ধে। উইঘুর মুসলিমদের প্রতি যে আচরণ করা হচ্ছে তাকে গণহত্যা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিহিত করে ভোট দিয়েছে কানাডার হাউজ অফ কমন্স। যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে কানাডা উইঘুর মুসলিমদের প্রতি চীনা আচরণকে গণহত্যা বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।
    বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কমপক্ষে এক মিলিয়ন উইঘুর ও অন্যান্য মুসলিমদের আটক করেছে চীন।

    তাদেরক বিচারবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন ক্যাম্প কিংবা কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। এর আগে যারা বন্দীদশা কাটিয়েছেন তারা অভিযোগ করেছেন, ক্যাম্পগুলোতে অমানুষিক নির্যাতন, কঠোর নজরদারি করা হয়। এমনকি ধর্ষণ ও বন্ধ্যা করে দেয়া হয়।

    চীন এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। তারা বলছে, জিনজিয়াংয়ের ক্যাম্পগুলোর উদ্দেশ্য মানুষকে পুনঃশিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়া। জিনজিয়াং আঞ্চলিক সরকারের মুখপাত্র শি গুইসিয়াং এই শুনানিকে ‘আন্তর্জাতিক আইন-শৃঙ্খলার সম্পূর্ণ লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছেন। এ ছাড়া ‘প্রকৃত গণহত্যার শিকারদের গুরুতর অবমাননা এবং জিনজিয়াংয়ের ২৫ মিলিয়ন মানুষকে মারাত্মক উস্কানি’ দিচ্ছে বলে অভিহিত করেন গুইসিয়াং।

    শুনানিতে প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য এক ডজন বিশেষজ্ঞকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন- কলোরাডোর ডেনভার বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতাত্ত্বিক ড. ড্যারেন বাইলার, নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন বিষয়ে অধ্যায়নকারী ড. ডক্টর জো স্মিথ ফিনলে, অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউটের গবেষক নাথান রুসার এবং অ্যাড্রিয়ান জেনজ, যিনি জিনজিয়াংয়ে জোর করে শ্রম ও গর্ভপাত সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।
    বিশ্ব উইঘুর কংগ্রেসের সভাপতি ডলকুন ইসাও চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ দেবেন। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে এই শুনানি আয়োজনের উদ্দেশ্য চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা এবং এটিই একমাত্র পথ। এ ছাড়া দুটি আন্তর্জাতিক আদালতে এ ব্যাপারে মামলার বিষয়ে তেমন কিছুই করার থাকবে না।’

    গত ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) জানায়, চীনের বিরুদ্ধে তারা অভিযোগ তদন্ত করবে না। কারণ আইসিসির সদস্য না হওয়ায় চীন আইসিসির এখতিয়ারের বাইরে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষেদের অনুমোদন ছাড়া কোনো মামলা নেয় না। তাই চীনের বিরুদ্ধে অভিযাগ তদন্তও সম্ভব না। কারণ নিরাপত্তা পরিষদের চীনের ভেটো প্রদানের ক্ষমতা রয়েছে।

    বিশ্ব উইঘুর কংগ্রেসের সভাপতি ডলকুন ইসাও বলেন, ‘আমি মনে করি আমার মা জিনজিয়াংয়ে ক্যাম্পে নির্যাতনে মারা গেছেন। আমার ভাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এই শুনানি চীনের অভিযোগ তদন্ত ও বিচার দাবিতে রাজনীতিবিদদের আরও মনোযোগী করে তুলবে। তবে কেবল অধিক মনোযোগী করে তোলাই নয় এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এটি বিশ্বের সকল দেশের নৈতিক দায়িত্ব।’
    সূত্র: বিবিসি