চট্টগ্রামে শহরে ম্যানগ্রোভ
    ঘরের আঙ্গিনায় মঈনুল আনোয়ারের ‘মিনি সুন্দরবন’

    'মিনি সুন্দরবন'

    বাংলাদেশ মেইল ::

    সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি। এই বনভূমি গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র মোহনায় অবস্থিত এবং বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিস্তৃত। সুন্দরবন ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়। কিন্তু নির্বিচারে গাছকাটা, নদীতে বাঁধ নির্মাণসহ নানা কারণে ধ্বংসের মুখে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ৷ সন্দরবনের বাস্তুতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আপ্রাণ চেষ্টায় চট্টগ্রামের এক পরিবেশপ্রেমী মইনুল আনোয়ার নিজের ঘরের আঙ্গিনায় তৈরি করেছেন ‘মিনি সুন্দরবন ‘ ।

    সুন্দরবন থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ম্যানগ্রোভ গাছ  লাগিয়ে সফল হয়েছেন তিনি । ম্যানগ্রোভ বনায়নের  জন্য তিনি যে মডেল তৈরি করেছেন সেটাও বেশ বৈচিত্র্যময় ৷ তার এমন  উদ্দ্যেগে  নতুন সম্ভাবনার পথ দেখছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগ । চবি ক্যাম্পাসে ম্যানগ্রোভ বনায়নের পরিকল্পনা বিভিন্ন সময় ভেস্তে গেলেও মইনুল আনোয়ারের পরামর্শে উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগ নতুন করে ম্যানগ্রোভ কর্নার করতে চান ।

    মিনি সুন্দরবন

    ২৬ জুলাই আন্তর্জাতিক ম্যানগ্রোভ দিবস । আন্তর্জাতিক ম্যানগ্রোভ দিবস উপলক্ষ্যে মঈনুল আনোয়ারের গড়ে তোলা ‘মিনি সুন্দরবন ‘ এ গিয়ে দেখা মিললো সুন্দরবনের বৈচিত্রময় বিভিন্ন গাছ , মৌমাছির ।  চট্টগ্রাম শহরের ‘ম্যানগ্রোভ ম্যান’ মইনুল আনোয়ার বললেন তাঁর পরিকল্পনার কথা ৷ বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের মইনুল আনোয়ার বরাবরই অর্থনৈতিক উন্নতিকে গুরুত্ব দিয়েছেন৷ নানা প্রজাতির মৌমাছি , ম্যানগ্রোভ বৃক্ষ , গবেষনার জন্য ল্যাবরেটরি প্রস্তুত করেছেন নিজের বসত ঘরেই । ম্যানগ্রোভ লাগানোর আগে সুন্দরবন থেকে মাটিও সংগ্রহ করেছেন তিনি ।

    তিনি বলেন,  প্রকৃতির উপর প্রযুক্তি এবং পরিকল্পনা প্রয়োগ করার আগে পরিবেশবিদ বা ভূতত্ত্ববিদদের সঙ্গে আলোচনা হওয়া উচিত ।  অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণের কারণে সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভের সংখ্যা কমে গিয়েছে ৷ ইলিশ চোখে পড়ে না ৷ জীবকুলের ক্ষতি হয়েছে ।  ম্যানগ্রোভ সৃজন করে শহরেই প্রাণিকুলের বসবাসের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব ।

    নিজের ঘরের আঙ্গিনায় সুন্দরী গাছ দেখিয়ে মইনুল বলেন , সুন্দরবনের সুন্দরী গাছগুলি আগামী ২০ বছরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে৷  এই ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়৷ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে দূষণ পাল্লা দিয়ে বেড়েছে৷ এখনই যদি মানুষ পরিবেশ রক্ষায় সচেতন না হয়, তাহলে পরিণাম খুবই ভয়ঙ্কর হতে চলেছে৷ এই গাছগুলি সুন্দরবন থেকে সংগ্রহ করা । এগুলো শহুরে পরিবেশেই বড়ো হচ্ছে এখন । ‘

    মইনুল আনোয়ার বলেন , বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে  বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ম্যানগ্রোভ  গাছ লাগানো সম্ভব । আয়লা, আমফান ও তার পরবর্তী ঘূর্ণিঝড় ইয়াস সুন্দরবনের মারাত্মক ক্ষতি করেছে৷ এমন দুর্যোগ মোকাবিলায় পরিবেশবিদরা বারবারই ম্যানগ্রোভ লাগানোর কথা বলছেন ৷ এটি অর্থনৈতিকভাবে মানুষকে সমৃদ্ধ করার উদ্যোগ হতে পারে ৷’

    চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হারুনুর রশিদ জানান , চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে ম্যানগ্রোভ কর্ণার করার চেষ্টা করা হয়েছে । কিন্তু সংগ্রহ করা গাছ শেষ পর্যন্ত রক্ষা করা সম্ভব হয় নি । যেহেতু মইনুল আনোয়ার সফলভাবে ম্যানগ্রোভ লাগিয়েছেন । সুন্দরবন থেকে সংগ্রহ করা গাছগুলিও বেশ কয়েক বছর বিরুপ পরিবেশে ঠিকে আছে । আমরা তার পরামর্শ অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানগ্রোভ কর্ণার করার উদ্দ্যেগ নেবো । ‘

    মিনি সুন্দরবন

    বাংলাদেশে অবস্থিত ম্যানগ্রোভ বন (সুন্দরবন) পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে পরিচিত। সুন্দরবন বিশ্বের অন্যান্য ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের থেকে বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ। সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০,০০০ বর্গকিমি।এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশের আয়তন প্রায় ৬০১৭ বর্গকিমি।বনভূমিটি বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়া ও নানান ধরনের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল হতে অতিরিক্ত কাঠ ও মাছ আহরণের ফলে এবং উপকূলীয় ভূমিকে বিকল্প ব্যবহারযোগ্য ভূমি হিসেবে ব্যবহারের ফলে এ বনাঞ্চল আজ হুমকির সম্মুখীন।

    বিএম/ মিনি সুন্দরবন