প্রবাসী এক ব্যক্তির সঙ্গে স্ত্রী রেশমা আক্তারের পরকীয়া সন্দেহ করে স্বামী নুরুল ইসলাম। এ কারণেই রেশমাকে পরিকল্পিতভাবে নুরুল খুন করে বলে র্যাবের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।সোমবার (২৩ মে) দুপুরে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান জানান, রোববার (২২ মে) রাতে কাকরাইল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
১২ বছর আগে রেশমা আক্তারের সঙ্গে একই গ্রামের নুরুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিবাহিত জীবনে তাদের একটি পুত্র সন্তান আছে। বিয়ের কিছুদিন পর জীবিকার তাগিদে স্বামীর অনুমতিতে রেশমা জর্ডান যান। জর্ডানে থাকাবস্থায় রেশমার সঙ্গে নুরুল ইসলামের সাংসারিক জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিবাদ লেগেই থাকত। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের সাংসারিক বনিবনা না হওয়ায় ৩ মাস আগে রেশমা জর্ডানে থাকা অবস্থায় তার স্বামী নুরুল ইসলামকে তালাক দেন।
কারওয়ান বাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারের সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও জানান, ২৮ এপ্রিল রেশমা দেশে আসেন। তালাক হওয়ার পরও তাকে নিয়ে সংসার করার জন্য রেশমা ও তার মা-বোনসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের বিভিন্নভাবে আকুতি-মিনতি করতে থাকেন নুরুল। একপর্যায়ে রেশমাসহ সবাই নুরুলের কথায় রাজি হয়ে গত ১৫ মে থেকে পুনরায় তাদের সংসার জীবন শুরু করে রেশমাদের বাড়িতে অবস্থান করতে থাকেন। ১৭ মে সকালে রেশমা ও নুরুল দুজন তাদের একমাত্র ছেলে মো. ইয়াসিনকে মাদ্রাসায় ভর্তি করানোর জন্য যান। মাদ্রাসা থেকে ফেরার পথে ইয়াসিনকে একা তার নানার বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে তারা দুজনে পাসপোর্ট ফটোকপি করার জন্য যান। একইদিন দুপুরে নুরুল একা তার শ্বশুর বাড়িতে এসে তার ছেলেকে জানান তার মাকে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার বরিশুর এলাকায় (নুরুল ইসলামের ভাড়া করা মেসে) আটক করে রেখেছে। এ কথা শুনে রেশমার মা এবং রেশমার ছেলে দ্রুত সেখানে গিয়ে মেসের দরজা তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। জানালার পাশে রাখা চাবি দিয়ে রুম খুলতেই তারা রক্তাক্ত অবস্থায় রেশমার লাশ ফ্লোরে পড়া অবস্থায় দেখতে পান। পরবর্তীতে রেশমার বোন বাদি হয়ে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানায় হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত নুরুলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
নুরুল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তার স্ত্রী রেশমা আক্তারের সাথে পুনরায় সংসার জীবন শুরু করার দুদিনের মাথায় রেশমা আক্তারের সাথে কাতার প্রবাসী এক যুবকের সম্পর্কের সন্দেহসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিবাদের সৃষ্টি হয়। নুরুল ক্ষুব্ধ হয়ে পরিকল্পিতভাবে তার স্ত্রী রেশমা আক্তারকে তার ভাড়া করা বাসায় নিয়ে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের পর নুরুল নিজেকে আত্মগোপন করার জন্য প্রথমে বরিশাল গমন যায়। সেখানে একদিন অবস্থান করার পর লঞ্চযোগে ঢাকা ও চাঁদপুর হয়ে চট্টগ্রাম যান। চট্টগ্রামে দুইদিন অবস্থান করার পর সেখানেও সে নিজেকে নিরাপদ মনে না করে পুনরায় ঢাকা হয়ে বরিশাল যাওয়ার সময় র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন।