চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকের দূর্নীতি
তদন্ত কমিটিকে ম্যানেজে প্রাণান্তকর চেষ্টা প্রধান প্রকৌশলীর

বাংলাদেশ মেইল ::

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের নানা অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয় নি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এরমধ্যে  এলইডি প্রকল্পের কাজ দেবার বিষয়ে একটি পক্ষের সাথে সাত কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ পাবার পর নড়চড়ে বসে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

ইতিপূর্বে নিজের ছেলের নামে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ঠিকাদারি করার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।

সব অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম-সচিব (উন্নয়ন) নুমেরী জামানকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির সদস্য সচিব হচ্ছেন উপসচিব (পরিচালক-১) মো. মাহবুবুর রহমান ভ‚ইয়া। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন প্রকৌশলীকে সদস্য করা হয়েছে তদন্ত কমিটির।

রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর)  সকাল আটটা থেকে অভিযোগের বিষয়ে সাক্ষ্য গ্রহন করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।

৩০ শে আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিদর্শন-১ এর পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছিল।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সুত্র জানিয়েছে, তদন্ত কমিটি ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর চসিকের সম্মেলনকক্ষে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে তদন্ত কার্যক্রম চালাবেন।

চসিক সূত্র জানায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারীতে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুদকে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ করেন মো. জামাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। দুদকের সেই অভিযোগের  তদন্ত শেষ পর্যন্ত এগুতে দেয়া হয় নি।

জানা যায়,  চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের ছেলে আদনান রফিকের নামে  ‘মেসার্স মিয়াজি কনস্ট্রাকশন’ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স নেয়া হয়। গত ছয় বছরে সিটি করপোরেশনের প্রায় ১৯ কোটি টাকার কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। লাইসেন্স গ্রহন করার সময় তার ছেলের বয়স ছিল ২১ বছর। সেই হিসেবে ছেলের নামে মুলত প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে বসে নিজেই ঠিকাদারি ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েন।  চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকজন ঠিকাদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এভাবে সরকারি কোন চাকরিজীবী তার বাবার প্রতিষ্ঠানে  ঠিকাদারি করার বিষয়টি আইন বহির্ভূত হলেও আইনের তোয়াক্কা না করে চসিকে ঠিকাদারি করেছেন তিনি । অথচ, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) ২০০৯ আইন অনুযায়ী, করপোরেশনের কোনো কর্মকর্তা–কর্মচারী কর্তৃক স্বজ্ঞানে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, স্বয়ং বা কোনো অংশীদার মারফত করপোরেশনের কোনো ঠিকাদারিত্বে স্বত্ব বা অংশ নেওয়া বেআইনি।

জানতে চাইলে, চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম  বলেন,  স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি করেছে। তবে অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অভিযোগকারীরও কোন অস্তিত্ব নেই। ’

অনুসন্ধানে জানা যায়,  চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন দরপত্রে কাজ দেয়া হচ্ছে কমিশনের বিনিময়ে। সিডিউলে অতিরিক্ত স্টিমিট করে কাজ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সুত্রমতে, প্রকৌশল বিভাগের চারজন নির্বাহী প্রকৌশলী, বিদ্যুৎ উপ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীসহ সাতজনের সিন্ডিকেট বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ বিক্রি করছেন চড়া কমিশনে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি করপোরেশনের এক ঠিকাদার জানান, ৭ থেকে ১০ শতাংশ কমিশনের বিনিময়ে কার্যাদেশ দেয়া হচ্ছে। ই-জিপি প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে  সুক্ষ্ম কৌশলে ‘ আইডি ‘ বিনিময়ের মাধ্যমে কাজ দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত চারটি কাজ বিক্রির কথা নিশ্চিত করেছে সুত্রটি।

অনুসন্ধানে জানা যায়,  অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে বেশ কিছু প্রকল্পের স্টিমিট করা হয়েছে আগে থেকেই। সেই অনুযায়ী বিক্রি করা হচ্ছে এসব প্রকল্পের কাজ।

এদিকে, ইন্ডিয়ান এলওসি ফান্ডের ( লাইন অব ক্রেডিট) এলইডি প্রকল্পে কাজের দরপত্রে নজিরবিহীন অনিয়ম পেয়েছে মন্ত্রণালয়।  ২৬১ কোটি টাকার এই প্রকল্পের দরপত্র প্রক্রিয়ায় নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে শুরু থেকেই। অনিয়মের নেপথ্যে প্রকল্পটির পরিচালক ঝুলন কুমার দাসকে দায়ী বলা হলেও, সেই প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন প্রধান প্রকৌশলীও। দরপত্রে এতটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে সাত কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে মন্ত্রণালয়।

সুত্রমতে, তদন্ত কমিটি গঠনের পরদিনই প্রধান প্রকৌশলী রফিক চসিকের একজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে সাথে নিয়ে  ঢাকায় গিয়ে তদবির শুরু করেন । গেল রবিবার তদন্ত বন্ধের  তদবিরে যুক্ত করা হয়েছে ফটিকছড়ি এলাকার একজন প্রভাবশালী ঠিকাদারকে।

অভিযোগ উত্থাপন করা ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করে তাকে সাক্ষ্য দিতে না আসার বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। অভিযোগ উঠিয়ে নেয়ার জন্য একটি আবেদন পত্রে জামাল হোসেনের স্বাক্ষর নেয়ারও চেষ্টা চলছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, তদন্ত প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দিতে সরকারের এক মন্ত্রীকে দিয়ে তদবির করা হয়েছে। দেখবেন চা নাস্তা খেয়ে তদন্ত কমিটির সদস্যরা চলে যাবেন।

তদন্ত কমিটির আহবায়ক স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম-সচিব (উন্নয়ন) নুমেরী জামান বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে রবি ও সোমবার চট্টগ্রামে অবস্থান করবে তদন্ত কমিটির সদস্যরা। ‘