সাইদির গায়েবানা জানাজা
পেকুয়ায় জানাজা পরবর্তী সংঘর্ষের মামলার আসামি ‘গণমাধ্যমকর্মী মিনার’

কক্সবাজার প্রতিনিধি :::

কক্সবাজারের পেকুয়ায় দেলোয়ার হোসেন সাইদির জানাজা পরবর্তী সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গণমাধ্যমকর্মীসহ অনেক নিরীহ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাইদির গায়েবানা জানাজা শেষে পুলিশের উপর চড়াও হয় সাইদীর অনুসারীরা। বারবাকিয়া বাজারে সাঈদীর গায়েবানা জানাজা শেষে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা অতর্কিতভাবে টহলে থাকা পুলিশের ওপর হামলা চালায়।

থানাসুত্রে জানা যায়,  গায়েবানা জানাজা পড়ার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন অনুমতি নেয় নি জামাত শিবির নেতারা। পরিষদের মাঠে জানাজা শেষে ফেরার পথে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়ায় তারা। এঘটনায় বেশ কিছু পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।

এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৬১ নং ক্রমে নাম রয়েছে মিনার নামের এক আইনজীবী। তিনি দৈনিক এই বাংলা নামের একটি জাতীয় দৈনিকের পেকুয়া প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন। এমডি হাসানউদ্দৌলা নামের এই আইনজীবি স্থানীয় দলিল মাস্টারের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, পুলিশের সাথে সংঘর্ষের সময় মিনার নিজের চেম্বার ছিলেন।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ আমি ইউনিয়ন পরিষদে জমি সংক্রান্ত একটি বিষয়ে জানতে গিয়েছিলাম আমার বাবাসহ। ওখানে জটলা দেখে আমার বাবাকে বাড়িতে পাঠিয়ে নিজের চেম্বার যাই। চেম্বার কাজ কর্ম করছি তখনই খবর পাই জানাজার পরে মারামারি হয়েছে। লোক মারফত বৃহস্পতিবার জানতে পারলাম আমাকেও মামলার আসামি করা হয়েছে।  ‘

পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর হায়দার জানান, ‘ জানাজার পর অতর্কিত হামলা করা হয়েছে পুলিশের উপর। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে। কোন গণমাধ্যমকর্মীর নাম মামলায় থাকার কথা নয়। কোন ভুল তথ্যে মামলায় ওই আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মীর নাম সংযুক্ত করা হয়ে থাকলেও অবশ্যই  বিষয়টি যাচাই করা হবে। ‘

ওসি ওমর হায়দার আরও জানান, গায়েবানা জানাজা পড়ার নামে পুলিশের উপর হামলা করেছে উশৃংখল শিবির কর্মীরা। ২০-২৫ জনের উপরে পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে ছিলো না। মুলত গায়েবানা জানাজায় পুলিশ বাধাও দেয় নি। তবুও বিনা উস্কানিতে হামলা করা হয়েছে পুলিশের উপর। ‘

জানা গেছে,  মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতের নায়েবে আমীর আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর গায়েবানা জানাযা ঘিরে সহিংস ঘটনায় কক্সবাজারের পেকুয়া-চকরিয়ার থানায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। পাঁচ মামলায় আসামি করা হয়েছে সাড়ে ছয় হাজার।

পেকুয়া থানা সূত্রে জানা যায়, সরকারী কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ে করা মামলায় জামায়াত-শিবিরের ১৫১ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে দেড় হাজার লোকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। অপরদিকে, একই পুলিশ কর্মকর্তা বাদী হয়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনেও একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় জামায়াত-শিবিরের ১৫১ জনের নামে উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বাদী ও পেকুয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মুফিজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) বারবাকিয়া বাজারে সাঈদীর গায়েবানা জানাজা শেষে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা অতর্কিতভাবে টহলে থাকা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় পুলিশের ২০ জন সদস্য আহত হয়েছে। এ ঘটনায় সিনিয়রদের নির্দেশে আমি বাদী হয়ে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে থানায় দুইটি মামলা দায়ের করেছি।’

উল্লেখ্য,  মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) বিকালে পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া বাজারে মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা শেষে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা পেকুয়া থানা পুলিশের উপর ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা চালায়। এতে পেকুয়া থানার ওসিসহ পুলিশের ২০ সদস্য আহত হন।