ইয়াবার চেয়ে কার্যকর মাদক
বাজারে নতুন মাদক ট্যাপেন্টাডল

রাহাত আহমেদ :::

২০০৫ সাল থেকে নিয়মিত বার্মা থেকে ইয়াবা টাবলেট বাংলাদেশেন বাজারে ডুকছে। গেল আটারো বছর ধরে দেশের তরুন তরুণীদের বড় একটি অংশই ইয়াবা ট্যাবলেটে আসক্ত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী দেশে ইয়াবা সেবনকারীর সংখ্যা অতিক্রম করেছে পঞ্চাশ লাখ৷

সরকারের মাদক বিরোধী অভিযান, মাদক পাচারকারীদের ক্রসফায়ার কোন কিছুই থামাতে পারে মরণ নেশা ইয়াবার বিস্তার। এরমধ্যে ভারত থেকে ইয়াবার চেয়ে মারত্নক ‘ট্যাপেন্টাডল বড়ি’ ডুকছে বাংলাদেশে। মাদকাসক্তরা ইয়াবার বিকল্প হিসেবে ট্যাপেন্টাডল ওষুধ সেবন করছে। ইয়াবা না পাওয়া গেলেই তারা এটি হাতে তুলে নিচ্ছে। বাংলাদেশে এটির উৎপাদন নিষিদ্ধ হলেও প্রতিবেশী ভারতে এখনও এটি বৈধ হওয়ায় এটি পাচার হয়ে আসছে।

রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে রংপুর দিনাজপুর পর্যন্ত অবাধে পোঁছে যাচ্ছে ইয়াবার বিকল্প মাদক ট্যাপেন্টাডল। মাদকসেবিদের কাছে প্রতিপিস ট্যাপেন্টাডল বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে   এই মাদক ইয়াবার থেকেও ভয়ংকর।

বাংলাদেশে এটির উৎপাদন নিষিদ্ধ হলেও প্রতিবেশী ভারতে এখনও এটি বৈধ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। কালোবাজারে অতিরিক্ত মূল্য হওয়ায় ভারত থেকে এসব সরবরাহ করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর  শিথিলতার সুযোগে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ছড়িয়ে পড়ছে ট্যাপেন্টাডল।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানায়, ট্যাপেন্টাডল মূলত ব্যথানাশক ওষুধ। এই ওষুধে অ্যামফেটামিন রয়েছে, যার কারণে এটিকে নেশাদ্রব্য হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে অনেকে। অনেক মাদকসেবী ট্যাপেন্টাডলকে ইয়াবার মতো আগুনে পুড়িয়ে সেবন করে থাকে।

ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে ট্যাপেন্টাডল গ্রুপের ট্যাবলেটকে ‘খ’ তফসিলভুক্ত করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।
ভারত থেকে অবাধে এই ট্যাবলেট পাচার হয়ে আসছে দেশে। সম্প্রতি রংপুর, বগুড়া, কুমিল্লা,  রাজশাহী মহানগর পুলিশ এই ট্যাবলেটের বিভিন্ন চালান উদ্ধার করেছে।

সিলেটের মাদক নিরাময় কেন্দ্রে মাদকাসক্ত ১২ জন তরুন স্ব স্ব কেন্দ্রে জানিয়েছে সিলেট শহরে চিকিৎসকদের মাধ্যমে এই মাদকের সন্ধান পেয়েছে তারা। ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে ব্যথানাশক হিসেবে ‘ট্যাপেন্টাডল ‘ ট্যাবলেটের প্রচলন ঘটে। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে লক ডাউন পরিস্থিতিতে  সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের  চিকিৎসকদের কাছ থেকে এই ট্যাবলেটটি হাত বদল হয় মাদক বিক্রেতাদের কাছে। সুত্রমতে, সিলেট মেডিকেল কলেজে অন্তত ৯০ জন চিকিৎসক ‘ট্যাপেন্টাডল’ আসক্ত। এরমধ্যে নারী চিকিৎসকদের সংখ্যা বেশি৷

সিলেট মেডিকেলে ভাতালিয়া এলাকায় বসবাস করছেন এমন দুজন নারী চিকিৎসক জানান, ‘ পেশাগত চাপ, রাত্রিকালীন ডিউটি সামাল দিতে এক সিনিয়র আপু সাজেস্ট করেছিলো৷ তখন বিষয়টি নিয়মিত না হলেও বর্তমানে আসক্ত হয়ে পড়েছি। ‘

আলাপচারিতায় জানা গেলো,  ওসমানী মেডিকেল কলেজের বিপরীতে  ওই সিনিয়র আপুর বাসায় নিয়মিত যাতায়াতের সুত্রে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বড়িতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন দুইজনই। একই বাসায় সাবলেট ভাড়া নিয়ে আরও দুইজন  ভাড়া থাকেন। তারা বিবাহিত হলেও চাকরিসুত্রে সিলেট থাকছেন তিন বছর।  ওই সিনিয়র  চিকিৎসকের বাড়ি চট্টগ্রামে, এই সুবাদে তিনি এরআগে ইয়াবা বড়িতে আসক্ত থাকলেও গেল দেড় বছর ধরে ট্যাপেন্টাডল বড়ি সেবন করছেন নিয়মিত। ‘

কিভাবে কোথায় পাওয়া যায় এমন প্রশ্নের জবাবে ওই দুই চিকিৎসক জানান, ‘ সিলেট শহর বেশ কনজারভেটিভ। মেয়েদের জন্য মাদক সংগ্রহ  রীতিমতো অসম্ভব। মুলত কিছু সেলার আছে। তারা মুলত ওষধ কোম্পানির এসআর। তাদেরকে মোবাইল ফোনে কল দিলেই ক্যাম্পাস বা বাসায় দিতে যায়। এমএস ‘ এ অধ্যায়নরত সেই আপুটার কাছে ওসবের চ্যানেল আছে। তার হাজবেন্ডও হবিগঞ্জে থাকেন। ফলে ফাঁকা বাড়িতে প্রায়ই মজা করা যায়৷ ‘

ট্যাপেন্টাডল সেবন করার ফাঁয়দা কি এমন প্রশ্নের উত্তরে দুজন দুই ধরনের উত্তর দিলেন। একজন বললেন দীর্ঘসময় ডিউটি করার সুবিধা, একটানা ৩/৪ ডিউটি নেয়া যায়। অন্যজন জানালেন, দীর্ঘস্থায়ী যৌন সম্পর্কে কাজ দেয়। একজন্যই এমএস অধ্যায়নরত সেই আপু সাজেস্ট করেছিলেন প্রথম। পরে পরে নিয়মিত হয়ে গেলাম।  ‘

সিলেট ওসমানীতে উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছেন এমন একজন চিকিৎসক শিকার করে বললেন, পড়া এবং চাকরির প্রেশার, সংসারের প্রেশার – সব মিলিয়ে ইয়াবা বড়ি কিংবা ট্যাপেন্টাডলের উপর ভরসা করছেন সহপাঠীদের অনেকেই। তবে বিষয়টি অনেক মারাত্নক। ‘

জানালেন, চট্টগ্রামের মেয়ে ডা: নওশিন ট্যাপেন্টাডলের জন্য রীতিমতো পরিচিত সহপাঠীদের কাছে। মধুশহীদ এবং বনকলাপাড়ার অনেক ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানও এখন ইয়াবা ছেড়ে ট্যাপেন্টাডলে আসক্ত। ওই চিকিৎসকের মাধ্যমে অনেকেই ট্যাপেন্টাডলে আসক্ত  হয়ে পড়েছে৷ ‘

নাম প্রকাশ করতে অনিশ্চুক সাভারের একটি প্রথম সারির নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রুহেল আহমেদ জানান, করোনাকালে হতাশার কারণে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বড়িতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন তিনি।

একই পরিস্থিতি কুমিল্লা অঞ্চলে। কুমিল্লার কসবাসহ বিভিন্ন বর্ডার পার করে মাদক পাচারকারীরা ট্যাপেন্টাডল নিয়ে এসে ইয়াবার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছে। শুরুতে ২৫০ টাকা করে বিক্রি হলেও, এখন দাম বেড়ে দুইগুণ হয়েছে। জানা যায় , যৌন সম্পর্ক স্থাপন এবং দীর্ঘস্থায়ীত্বের জন্য ‘ট্যাপেন্টাডল’ হয়ে উঠেছে বেশ জনপ্রিয়।