সচিবের আত্নীয় ও মন্ত্রীর ছেলে পেলেন কাজ
নির্বাচন কমিশনে অমোছনীয় কালি কেনায়ও দূর্নীতি

আফরিন আফসার :::

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিরোধীদলোর অভিযোগ অনুযোগের শেষ নেই। বেশ কয়েক বছর ধরে সংস্থাটির নির্বাচন অনুষ্ঠান ,  ভোট পর্যবেক্ষণ, আভ্যন্তরীণ  কেনাকাটাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে খবরের শিরোনাম হয়েছে। এবার ভোটের কালি ক্রয়ে নজিরবিহীন দুর্নীতি প্রকাশ্য হয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের অভিযোগ পত্রে। এক কোটি চব্বিশ লাখ টাকা জলে ফেলা হয়েছে অমোছনীয় কালি কেনার কাজ সচিবের আত্নীয় ও মন্ত্রীর ছেলেকে দিতে গিয়ে।

গেলে ৬ ই আগস্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এ এইচ জাহিদুর রেজা নামের এক ঠিকাদার। অভিযোগ পত্রে তিনি দাবি করেন ‘ তার প্রতিষ্ঠান এ এন ট্রেডার্স  নির্বাচন কমিশন আহবানকৃত ই জিপি টেন্ডারে  (Tender id 848560) অংশ নিয়ে ২ য় সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছেন। কিন্তু সরকারি আইন ও বিধি না মেনে সর্বোচ্চ দরদাতা বাবর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে  কালি ( indelible ink) কেনার কার্যাদেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। চায়না অরিজিন ইন্ডেরিবেল কালির  জন্য চার কোটি ৭৩ লাখ একত্রিশ হাজার একশত পনের টাকা ( ৪,৭৩,৩১,১২৫ টাকা) দর জমা দেবার পরও ৫,৭০, ০১,৯১৫ দরে বাবর এন্টারপ্রাইজকে কালি সরবরাহের জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। ‘

নির্বাচন কমিশনের দাপ্তরিক সুত্র মতে, অমোচনীয় কালি ক্রয়ের দরপত্র আহবান করা হলে বাবর এন্টারপ্রাইজ পাঁচ কোটি সত্তর লক্ষ এক হাজার নয়শত পনের টাকা (৫,৭০, ০১,৯১৫ টাকা)  দর জমা দেয়। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে শৈলী এন্টারপ্রাইজ দরকোড করে চার কোটি বত্রিশ লাখ এক হাজার পাঁচশত বিশ টাকা (৪,৩২,০১,৫২০ টাকা)। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা  এ এন্ড এ ট্রেডার্স চায়না অরিজিন একই পণ্যের জন্য চার কোটি ৭৩ লাখ একত্রিশ হাজার একশত পনের টাকা ( ৪,৭৩,৩১,১২৫ টাকা) । সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দরদাতার পার্থক্য এক কোটি চব্বিশ লাখ নিরানব্বই হাজার ছয়শত পাঁচ টাকা।

প্রতিবেদকের হাতে আসা নথি অনুযায়ী আরএফএল প্লাস্টিক লিমিটেডও একই দরপত্রে অংশ নিয়ে ৪ কোটি চুরাশি লাখ তিরানব্বই হাজার তিনশত পনের টাকা (৪,৮৪,৯৩,৩১৫) দরকোড করেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ দরদাতা বাবর এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে নোয়া ( নোটিফিকেশন অব এওয়ার্ড) ইস্যু করেছে। এতে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়েছেএক কোটি চব্বিশ লাখ নিরানব্বই হাজার ছয়শত পাঁচ টাকা।

অনুসন্ধানে জানা যায়  যেসব প্রতিষ্ঠান কালি সরবরাহের জন্য দর প্রস্তাব করেছে  তাদের প্রত্যেকেই স্ব স্ব অরিজিন থেকে ল্যাব টেস্ট করে টেন্ডার জমা করেছে। কিন্তু প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাব টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে তিনটি প্রতিষ্ঠানের নমুনা। তবে দরপত্রে অংশ নেয়া কোন প্রতিষ্ঠানের নমুনাই টেস্ট করতে পাঠানো হয় নি সেটি জানা যায় নি। নিজের ভাই আলাউদ্দিনকে ( কাজিন) কাজ পাইয়ে দিতে  দুটি প্রতিষ্ঠানকে স্থানীয় ল্যাব টেস্টে অকৃতকার্য করিয়ে এমন অনিয়মে জড়িয়েছেন স্বয়ং নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাঙ্গীর আলম ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাবর এন্টারপ্রাইজ নামের যে প্রতিষ্ঠানটি কার্যাদেশ পেয়েছে সেটিও নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাঙ্গির আলমের কাজিনের (নিকট আত্নীয়) । নির্বাচন কমিশনের জন্য ভোটের উপকরন অমোচনীয় কালি কেনাকাটার পুরো প্রক্রিয়ায় পণ্যের মান নিশ্চিত করার বিষয়টি যেমন ভাবা হয়নি তেমনিভাবে  ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দর-কষাকষির ব্যবস্থাও ছিল না। অতিরিক্ত দর প্রস্তাব করার পরও বাবর এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেবার কারনে রাস্ট্রের ক্ষতি হয়েছে প্রায় এক কোটি চব্বিশ  লাখ নিরানব্বই হাজার ছয়শত পাঁচ টাকা ( ১,২৪,৯৯, ৬০৫)

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে,  সরকারের একটি প্রভাবশালী মন্ত্রীর ছেলে এবং নির্বাচন  কমিশনের সচিব জাহাঙ্গীর আলমের ভাই আলাউদ্দিনের যৌথ সিন্ডিকেটকে কালি সরবরাহের  কাজ দেয়া হয়েছে। দরপত্র ওপেন করার দিন বেলা এগারোটায় ওই মন্ত্রীর ফোন করার বিষয়টিও দাপ্তরিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।

পিপিআর বিধিমালা অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাদ দিয়ে,  কেন সর্বোচ্চ দরদাতা বাবর এন্টারপ্রাইজকে কালি সরবরাহের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে-  সেই বিষয়টি জানতে নির্বাচন কমিশনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও নির্বাচন কমিশনার কিংবা নির্বাচন কমিশন  সচিব সাড়া দেন নি।

এক কোটি চব্বিশ লাখ টাকা জলে ফেলা হয়েছে অমোছনীয় কালি কেনার কাজ সচিবের ভাই (কাজিন) ও মন্ত্রীর ছেলেকে দিতে গিয়ে।

বাংলাদেশমেইল /আফরিন