অভিযানের ভেতরেই কাটা পড়ছে পাহাড়
চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা আর অভিযান, ‘ইঁদুর বেড়াল দৌড়’

প্রিন্স আচার্য 

পাহাড় কাটার খবর পেয়ে চট্টগ্রামের  জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান চালিয়েছে বায়েজিদ থানার অন্তর্গত বাংলাবাজার ও জালালাবাদ এলাকায়। কিন্তু সেই অভিযান হয়েছে সবকটি পাহাড় কাটা সম্পন্ন হয়েছে হবার পর। মঙ্গলবার বিকাল ৩ টায়  চট্টগ্রামের  বায়েজিদ থানার অন্তর্গত বাংলাবাজার ও জালালাবাদ এলাকায়  হাটহাজারী উপজেলার সরকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবু রায়হানের নেতৃত্বে এই অভিযানে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বায়েজিদ থানার পুলিশ সদস্যরাও অংশ নেন। তবে স্থানীয় জানিয়েছেন এলাকার সবকটি পাহাড় কাটা সম্পন্ন হবার পরই চালানো হয়েছে অভিযান।

পরিচালিত এই অভিযানে পাহাড় কর্তনের সত্যতা পাওয়া গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে এভাবে নিয়মিত মামলা আর জরিমানার আড়ালেই মুলত পাহাড় কাটার পরিসমাপ্তি ঘটে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী  নিয়মিত মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু রায়হান জানান, অভিযানে দেখা যায় চারপাশে উঁচু করে টিনের বেড়া দিয়ে ভেতরে পাহাড় কর্তন করে প্লট তৈরির চেষ্টা করছে। সেখানে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে সাইনবোর্ড দেখতে পাওয়া যায় ।অভিযান পরিচালনা কালে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি । তবে আশেপাশের ব্যক্তিদের কাছ থেকে যারা পাহাড় কর্তন করেছে তাদের সম্পর্কে তথ্য নেওয়া হয় এবং সাইনবোর্ডে প্রাপ্ত নাম অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর নোটিশ জারি করে।আগামী বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হবে।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পাহাড় কাটার ব্যাপারে তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে আমরা ব্যাবস্থা নিচ্ছি।ইতোমধ্যে পাহাড় কাটার দায়ে জেল জরিমানা ও মামলা দায়েরসহ শাস্তিরমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।গত ১২ আগস্ট লিংক রোডে পাহাড় কাটার দায়ে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। ‘

জেলা প্রশাসকের এমন প্রতিশ্রুতি আশার সঞ্চার হলেও বাস্তব চিত্র সম্পুর্ন ভিন্ন। জানা গেছে,  কাটা শুরু হবার পর থেকে শেষ পর্যন্ত জড়িত পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা। পাহাড় কেটে শেষ করার পরই চালানো হয় অভিযান। প্রতিটি অভিযানেই দায়ী ব্যক্তিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে জরিমানা আদায় করে পাহাড় কাটার বৈধতা পান। হাস্যরসের সাথে স্থানীয়রা বলছেন ‘ ডাক্তার আসিবার পূর্বেই রোগী মারা গিয়াছে। ‘ প্রসঙ্গত,  চট্টগ্রাম মহানগরীতে গত চার দশকে ১২০টি পাহাড় বিলুপ্ত হয়েছে। ৪০ বছর আগে পাহাড় ছিল ২০০টি, যার ৬০ শতাংশ ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ১৫টি পাহাড় কেটে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বাইপাস সড়ক নির্মাণ করেছে।