নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে
বিএনপির কঠিন পরীক্ষায় রিমোর্ট তারেকের হাতে

সাইফুল ইসলাম 

নভেম্ভরে আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন । কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কোন সম্ভাবনা । ফলে বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অংশ নেয়া ছাড়া কোন রাস্তা খোলা নেই বিএনপিসহ সরকার বিরোধী জোটের । ২০১৮ সালে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভরাডুবির পর বিএনপিও ওই পথে পা বাড়াবে না । কিন্তু কূটনৈতিক সুত্র এবং সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সুত্র বর্তমান সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ।

সুত্রমতে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে যথারীতি নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার । বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন করার বিষয়টি অনেকটাই চুড়ান্ত । বৈদেশিক চাপ সামাল দিয়ে বর্তমান সরকারের অধীনেই সুষ্ঠ নির্বাচন করে দেখাতে চায় সরকার । তবে সেই নির্বাচনে বিএনপি – জামাতসহ সরকার বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহনের বিষয় নিয়ে ভাবছে না সরকার । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বুঝাপাড়া করেই এমন নির্বাচন করবে সরকার ।

তবে, শেষ মুহুর্তে সরকারের পতন দাবিতে বিএনপি অক্টোবরের পুরোমাসই আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে । ইতিমধ্যে সব জেলা এবং উপজেলায় কেন্দ্র থেকে বার্তা পৌছানো হয়েছে । যদিও একদফা আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি । বিভাগীয় পর্যায়ে তারুন্যের সমাবেশ , মহাসমাবেশের পর পদযাত্রার মতো কর্মসুচীতে সেপ্টেম্বর মাস কাটাতে চায় বিএনপি । জোটভুক্ত দলগুলোর সাথেও এমন আলাপ করেছে বিএনপি । অক্টোবর মাসে বিএনপির আন্দোলনের ধরন কেমন হবে , সেই বিষয়টি নিশ্চিত নন দলটির শীর্ষ নেতারাও । তারা বলছেন চুড়ান্ত আন্দোলনের রিমোর্ট দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতে । জীবন মরণ আন্দোলনের রুপরেখা তিনিই তৈরি করে রেখেছেন ।

বিএনপির নীতি নির্ধারিত পর্যায়ে কথা বলে জানা যায় , অক্টোবর মাসের শুরু থেকে সরকার পতনের আন্দোলনের গতিপথ পরিবর্তনের কথা ভাবছে দল । নিয়মতান্ত্রিক পথে অসহিংস আন্দোলন করে সরকার পরিবর্তন হবে না , সেটি বুঝেই প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে । তবে সেই আন্দোলন থামাতে সরকার পুলিশ প্রশাসনকে কতখানি ব্যবহার করতে পারবে – সেটিও বিবেচনায় রাখা হয়েছে । আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পুলিশের অবস্থান ভালো ভাবে নিচ্ছে না -সেই বিষয়কে সামনে রেখেই চুড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো ।

বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এই বক্তব্যে এখনও অনড় আওয়ামী লীগ। আর বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি, এমন বক্তব্যে বিএনপিও অনড়। দেশের জনগণের কাছে কোন দল ক্ষমতা আসবে তার চেয়ে সামগ্রিক শান্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই গুরুত্বপুর্ণ । বিএনপির আন্দোলনের কারণে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হলে এর প্রভাব আগামী নির্বাচনে পড়বে । সুত্রমতে, একারণে আওয়ামী লীগই বিএনপিকে রাজপথে আন্দোলনের সুযোগ দিয়ে পরীক্ষা করে নিতে চায় ।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রতিনিধি দলের সদস্য শামা ওবায়েদ  বলেন, “আমরা বিদেশিদের সঙ্গে যে বৈঠকগুলো করেছি, সেখানে স্পষ্ট করেই বলেছি, বর্তমান সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমরা তত্ত্বাবধায়ক বা অন্য কোন নামে হলেও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলে আসছি। বিএনপি ছাড়া নির্বাচন দেশের মানুষই মানবে না । ”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে , বিদেশিদের এই তৎপরতায় দেশের রাজনীতিবিদদের দৈন্যতা ফুটে উঠেছে। তাদের কাছে বিরোধী দল যাচ্ছেন  বলেই তারা মোড়লের মতো পরামর্শ দিচ্ছেন। আমাদের ভোট কীভাবে হবে, গ্রহণযোগ্য হলো কিনা সেটা নির্ধারণ করবে জনগণ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সব সময় ভোটের পর পরাজিত দল ভোটের ফলাফল কখনোই মেনে নেয় নি । বিএনপি এখন তত্ত্বাবধায়াক সরকারের কথা বললোও, অতীতেও দলটি তত্ববধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেয় নি ।  ভোটের ফলাফল মেনে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করা প্রয়োজন । দেশের মানুষের কাছে কীভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে সে চিন্তাই করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে।

তবে, বাংলাদেশের অতীতের বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন যখন তার মেয়াদ শেষ করছে, তখন নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, কোন দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা আদৌ সম্ভব কিনা। এই বিতর্ক আরও উস্কে দিয়েছে একটি নতুন আইনের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ। বিরোধীদল বিএনপিসহ কয়েকটি দল বলছে, নির্বাচন কমিশন যেভাবে বা যাদের দিয়েই গঠন করা হোক, সরকার যদি দলনিরপেক্ষ না হয়, তাতে কোন লাভ হবে না ।