মোবাইল চুরি
পলকেই হাপিশ হাতের মুঠোফোন

প্রিন্স আচার্য :::

চোখের পলকে কখনো মোবাইল ছিনতাই হচ্ছে , কখনো বা হাপিশ হচ্ছে হাতের মুঠোফোন। চট্টগ্রামের ব্যস্ত এলাকা নিউমার্কেটের নিত্যদিনের ঘটনা এটি। চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন বেচাকেনার মার্কেটও গড়ে তোলা হয়েছে নিউমার্কেট এলাকায়।

চট্টগ্রামে চোরাই মোবাইল ফোন সেটে রেয়াজউদ্দিন বাজার, শাহ আমানত  মার্কেট সয়লাব। নগরীর জলসা, সিডিএসহ শাহ আমানত মার্কেট ও পুরাতন রেলস্টেশন এলাকায় চলছে চোরাই মোবাইল ফোনের জমজমাট ব্যবসা। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশকে ম্যানেজ করে এ ব্যবসায় জড়িত রয়েছে ২১ টি গ্রুপ। তারাই পুরো চট্টগ্রামের চোরাই ফোনের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।

সুত্রমতে, শুধু চট্টগ্রামের নয়, সারা দেশ থেকে আসা চোরাই মোবাইল ফোন এসব মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে। এ চক্রের সদস্যরা চোরাই মোবাইল ফোনের ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুইপমেন্ট আইডেনটিটি (আইএমইআই) নম্বর পরিবর্তন করে ফেলছে কয়েক মিনিটের মধ্যে। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরে আর এসব মোবাইল ফোন শনাক্ত করতে পারে না। এ ছাড়া একই আইএমইআই নম্বর বসিয়ে ( ক্লোন) একাধিক সেটও বিক্রি করছে চোর চক্র।

মানুষ এখন ঘুম থেকে উঠে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্ত  প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মত্ত হয়ে থাকে।  আর সেই প্রযুক্তির একটি বড় অনুষঙ্গই হলো স্মার্টফোন। দিনে দিনে স্মার্ট ফোনের  ব্যবহার যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনিভাবে স্মার্টফোন চুরি কৌশলে হাত পাকিয়েছে চোররাও।স্মার্টফোনের কারণে আমাদের দৈনন্দিন কাজ যেমন সহজ হয়েছে তেমনি কিছু জটিলতারও সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ফোনটি হারিয়ে বা চুরি-ছিনতাই হলে হেনস্তার মধ্যে পড়তে হচ্ছে ব্যবহারকারীকে।

প্রতিদিন চলন্ত বাসে জানালার পাশে বসা যাত্রীদের টার্গেট করে টান দিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোবাইল। দূরপাল্লার বাসগুলো লক্ষ্য করে ছিনতাইকারী চক্র সংঘবদ্ধ হয়ে জানালার পাশের সিটে বসা যাত্রীর হাতে থাকা মোবাইল নিয়ে ভোঁ দৌড় মারছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ চোরাই চক্র খুবই সক্রিয়। কিন্তু চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকা এসব চোরদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।

অনেকে না বুঝে চোরাই মোবাইল ফোন কিনে পরে নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে চুরি ও ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনও চলে আসে নগরীর চোরাই মার্কেটে। এসব মার্কেট থেকে গত আট মাসে পাঁচশর বেশি চোরাই মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেফতার করা হয়েছে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে। তার পরও কমছে না এ বাণিজ্য। বিভিন্ন মার্কেটকেন্দ্রিক শতাধিক  ব্যবসায়ী এ ব্যবসায় জড়িত বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।

বাস যখন জ্যামে আটকে থাকে, তারা ওই সময়টুকুতেই ছিনতাইয়ের কাজে চালায়। জানালা খোলা রেখে কেউ মোবাইল টিপলে তাদের হাত থেকে মোবাইল লাফ দিয়ে নিয়ে যাবার ঘটনাও ঘটছে প্রতিদিন।

চলন্ত বাসে হঠাৎ গাড়ির ভেতরে জানালার কাছে বসা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের চিৎকার ‘আমার মোবাইল, আমার মোবাইল’। এরপর চালককে বাস থামাতে বলে তড়িঘড়ি করে নেমে গেলেন ওই যাত্রী। তার পাশে থাকা আরেক যাত্রীকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল চলন্ত বাস থেকেই জানালা দিয়ে ওই যাত্রীর হাতে থাকা স্মার্টফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে গেছে ছিনতাইকারী।

ঘটনাটি মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট এলাকার। যারা সবসময় গণপরিবহনে যাতায়াত করেন, তাদের কাছে এই এলাকায় এমন ঘটনা নতুন নয়। প্রতিদিন এ রকম যাত্রীরা মোবাইল হারাচ্ছেন। অনেক সময় ছুরিকাঘাতের ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় , সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন থেকে মোবাইল ছিনতাই করে বেশ কয়েকটি গ্রুপ।তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে  নিউ মার্কেট ও বিভিন্ন এলাকা থেকে ছিনতাই হওয়া এসব মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে তা পাইকারী মার্কেট  রেয়াজউদ্দিন বাজারে সুকৌশলে বিক্রি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চক্র।

জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল কবির বলেন, ‘ চুরি হওয়া মোবাইল প্রযুক্তির সহযোগিতায় উদ্ধার করে দিচ্ছি। তবে চুরি হওয়া মোবাইল পুনরায় না খুলে পার্টস বিক্রি করে দিলে সে ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে।  ছিনতাইকারী ও মোবাইল চোরদের সম্পর্কে তথ্য দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ‘