নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চক্রান্ত
নৌকা ঘাটে ভেড়ানোর সিদ্ধান্ত সংক্ষুব্ধ আ.লীগের তৃণমূল

বাংলাদেশ মেইল :::

ফটিকছড়ি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনী প্রচারণা, মিটিং- মিছিলে তৃণমূলকে চাঙ্গা করার মাঝপথে এসে নৌকা ঘাটে ভেড়ানোর মতো ব্যঙ্গাত্নক উক্তিকে জাতীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন দলটির নেতাকর্মীরা। কেন্দ্র থেকে  সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন মাইজভান্ডারির পক্ষে কাজ করা মৌখিক  নির্দেশনা আসার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েছে ফটিকছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি আসনে এক যুগ পর জাতীয় নির্বাচনে নৌকা হাতে পেয়েছিলো সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ও প্রয়াত সাংসদ রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে নানামুখী ষড়যন্ত্র সামাল দিতে হয়েছে তাকে। আসনটি জোটকে ছেড়ে দিতে দলের  একজন প্রভাবশালী নেতা নানামুখী দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। তবে শেষ পর্যন্ত খাদিজাতুল আনোয়ার সনির হাতেই আসে নৌকার বৈঠা।

শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর)  চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি আসনে হঠাৎ করেই বদলে যায় নির্বাচনী সমীকরণ। চট্টগ্রামের একমাত্র নারী প্রার্থী হিসেবে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনিকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলেও ভোটের ১০ দিন আগে হঠাৎ পরিবর্তন এসেছে সিদ্ধান্তে। দলের উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বরাত দিয়ে নৌকাকে ঘাটে ভেড়ানোর গুজব ছড়ানো হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বলা হয় এই আসনে একতারা প্রতীকের প্রার্থী বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারীকে সমর্থন জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।

মনোনয়ন প্রত্যাহার করার কোন সুযোগ যেমন নেই, তেমনিভাবে কেন্দ্র কেন্দ্র পৌঁছে গেছে ব্যালট পেপার। ফটিকছড়ির নির্বাচনী ব্যালট থেকে নৌকা সরিয়ে নেবার চেষ্টাকে নির্বাচন বিরোধী চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের সমর্থকরা। নির্বাচনের আট দিন আগে দলের এমন আকস্মিক সিদ্ধান্তে বিভ্রান্ত  দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও।  বিশ্লেষকরাও ‘পাতানো নির্বাচন ‘ তকমার উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করছেন ফটিকছড়ির নির্বাচন।

এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি ইস্যু না হলেও ফটিকছড়িতে একতারা বাজানোর নির্দেশ দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। ফলে নৌকা পেয়ে নির্বাচনী দরিয়া বাইতে শুরু করলেও মাঝপথে নৌকা ডোবার আশঙ্কায় এর মাঝি সনি।

শনিবার সকালে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি বলেন, এখন কোন সিদ্ধান্ত হয় নি। আওয়ামী লীগের নৌকা ঘাটে বেঁধে রাখার খবরের পুরোটাই গুজব। আমি নির্বাচনের মাঠে আছি।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট।

উপজেলা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ভোটের মাত্র আট দিন আগে এমন সিদ্ধান্তে এলে ক্ষুব্ধ হবে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।  নির্বাচনের মাঠ তৈরি করার পর ফসল তুলতে আসবে ভিন্ন কেউ -সেটি মানা সম্ভব নই। এমন ষড়যন্ত্রের কলকাটি যিনি নেড়েছেন তাকেই ফটিকছড়িতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবে তৃণমূল। 

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে এবার এমপি হতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ মাইজভান্ডারী।এই দুই রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কারণে জমে উঠেছিল নির্বাচনী লড়াই। তবে সেই আমেজে ঘি ঢালতে পারে  আওয়ামী লীগের অবাস্তব  সিদ্ধান্ত।

স্থানীয়দের মতে, তিনজন হেভিওয়েট প্রার্থী একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় ভোটের লড়াইয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পাড় হওয়া প্রত্যেক প্রার্থীর জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে । তাই প্রার্থীদের এই মর্যাদার লড়াইয়ে নির্বাচনী প্রচারণা ভোটারদের কাছে ইতিমধ্যে  আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।  তবে সবকিছুতেই পানি ঢেলে দেয়া হলে নির্বাচনের গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, ভোটের মাইজভান্ডারি তরীকার অনুসারীদের ফ্যাক্টর হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে দলের সভানেত্রীর কাছে।  নৌকা প্রতীকের প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনিকে থামিয়ে দেবার সিদ্ধান্তটির পেছনে কলকাটি নাড়ছেন সরকারের একজন মন্ত্রী। তবে পুরো বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকে কাজ করছেন চট্টগ্রাম  জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির টিকিটে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (পরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) এমপি হন। তবে ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী জোটের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন তরীকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি। গত নির্বাচনেও একইভাবে এমপি হন তিনি। সম্প্রতি তাঁর দুই ছেলের বিরুদ্ধে দুদকের মামলার পর নতুনভাবে আলোচনায় আসেন।

দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী গত পাঁচ বছর অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। এলাকায় দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেননি। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক তো রাখেননি বরং বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধ উস্কে দিয়েছেন। সমালোচনার হাওয়ায়  নির্বাচনে আওয়ামী  মনোনয়নও সমর্থন দুটোও হারান তিনি । সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি জোটের প্রার্থী হিসেবে সমর্থন না পাবার পর থেকে সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন মাইজভান্ডারির পক্ষে তদবির লবিং চলেছে জোরেসোরে । সেই লবিং কখনো গুজব হিসেবে কখনো কেন্দ্রীয় নেতার ফোনের বার্তা হিসেবে ঘুরপাক খাচ্ছে এলাকায়।

জানতে চাইলে ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দীন মহুরি বলেন, ‘ এখনো সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা পাই নি।  মুখে মুখে কি বলা হচ্ছে সেটি নির্বাচনের প্রচারণায় প্রভাব ফেলবে না। শেষ মুহুর্তে বললেই নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া সম্ভব নয়। ‘