বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতিতে আইএইচআরসি’র উদ্বেগ

প্রেস বিজ্ঞপ্তি
বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতিতে ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশনের (আইএইচআরসি) উদ্বেগ

বাংলাদেশে ২০২৩ সালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে যেসব তথ্য—উপাত্ত এসেছে, তা চরম উদ্বেগজনক বলে দাবি করেছে ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন (আইএইচআরসি)।

আজ ৩ জানুয়ারি ২০২৪ (বুধবার) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি করেন ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন, বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট এম এ হাশেম রাজু।

বিবৃতিতে এম এ হাশেম রাজু বলেন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে দেশের মানবাধিকারের উদ্বেগজনক বাস্তব অবস্থা নিচের পরিসংখ্যানেই বুঝা যায়। আইএইচআরসি’র তদন্তে ২০২২ সালে ২২টি বন্দুকযুদ্ধে ১৫ জন মারা যান, ২০২৩ সালে ১৫টি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় মারা যান ৭ জন। উদ্বেগের কারণ হলো যখন দেখা যায় কারা হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। তদন্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে কারা হেফাজতে মারা যান ৯৩ জন, ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬২ জনে। এ ছাড়া পুলিশের হেফাজতে ১৩ জন, র‌্যাবের হেফাজতে ২ জন এবং ডিবি (গোয়েন্দা) পুলিশের হেফাজতে ৩ জন নাগরিকের মৃত্যু হয়। বিরোধী মত দমনে প্রায় ৪২ লক্ষ মিথ্যা ও গায়েবী মামলা দায়ের করা হয়েছে। গভীর রাত পর্যন্ত আদালত চালিয়ে ও নজিরবিহীন দ্রুততার সাথে আদালতকে ব্যবহার করে সরকার বিরোধীদের সাজা প্রদান করা হচ্ছে। এমনকি নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসকেও ছাড় দেয়া হয়নি। আইএইচআরসি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্তে নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের দাবি করে।

আইএইচআরসি’র বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট এম এ হাশেম রাজু মানবাধিকার পরিস্থিতির নাজুক অবস্থার কথা উল্লেখ করে বলেন, যাঁরা মানবাধিকারের কথা বলছেন তাদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। অধিকারের সভাপতি আদিলুর রহমান তার প্রমান। তেমনিভাবে এক তরফা নির্বাচন করার জন্য বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার ও নির্বাচনে অযোগ্য করতে সাজাদানও মানবাধিকার লঙ্ঘন। দেশের সংবিধান নাগরিককে যেসব মৌলিক অধিকার দিয়েছে, সেগুলো সরকার লঙ্ঘন করতে পারে না এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদে যেসব নাগরিক অধিকার স্বীকৃত, সেগুলোও জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো মানতে বাধ্য। কয়েক মাস আগে জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির বৈঠকে সরকার অনেক প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে এসেছিল। কিন্তু তার বাস্তবায়ন আদৌ করেনি। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে মানবাধিকারের উন্নয়নও জরুরি।

তিনি আরো বলেন, মানবাধিকার কোন রাজনৈতিক বিষয় হতে পারে না। প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। সরকারের কোন সংস্থা যদি এটি পালন না করে, তাহলে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। সরকারি যে বাহিনীর সদস্য বা সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই বাহিনীকে দিয়ে তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে না। দেশের বিবেকবান মানুষদের দিয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিশন ও নিরপেক্ষ তদন্ত সংস্থা গঠন করে মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।

এম এ হাশেম রাজু বলেন, একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমনকি একজন নির্বাচন কমিশনারের ভাষ্যমতে বহির্বিশ্ব থেকে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলেও সরকার তার কোন তোয়াক্কা করছে না। গণতন্ত্রের পূর্ব শর্ত হলো ভোটাধিকার। ভোটাধিকার হরণ করে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।