নাটোরের মুড়িগ্রাম
রমজানে মুড়ি উৎপাদনে ব্যস্ত গ্রামবাসী

আল আমিন,নাটোর প্রতিনিধি:-

নাটোর সদর উপজেলার ছোট্ট গ্রাম গোয়ালদিঘি কৃষ্ণপুর। আলাদা একটি নামেও পরিচিত গ্রামটি। নাটোরসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি জেলার মানুষের কাছে ‘মুড়ি গ্রাম’ হিসেবে এর রয়েছে বেশ সুনাম।

কেমিক্যালমুক্ত হওয়ায় এই মুড়ির ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে।

সারা বছর এখানে উৎপাদিত হয় মুড়ি। ক্রেতার চাহিদা মেটাতে নির্ভেজাল মুড়ি সরবরাহ করেন কারিগররা। আমন, বিনা-৭, হরি, ২৯, ১৬, ৫২ প্রভৃতি ধানের মুড়ি উৎপাদিত হয় এখানে। এখানকার মুড়ি ঢাকা, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জসহ দেশের নানা অঞ্চলে বিক্রি হয়।

কৃষ্ণপুরের বারুহাট, বাকশোর, তেগাছি, তালগাছি ও ঢাকোপাড়ায় সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় সব বাড়িতে তৈরি হচ্ছে ‘হাতে ভাজা মুড়ি’। বাতাসে ঝনঝন-শনশন মুড়ি ভাজার শব্দ। সব বাড়িতে মুড়ি ভাজার জন্য রয়েছে আলাদা ঘর। মুড়ি ভাজছেন নারীরা। তাদের কেউবা উঠানে ধান শুকাচ্ছেন। মাঝে মাঝে সেই ধান নেড়ে দিচ্ছেন। মাটির চুলায় চাল গরম করছেন কেউ। সেই চাল নারিকেলের খিল কিংবা পাটসোলা দিয়ে নাড়াচাড়া করছেন। কেউবা সেই গরম চাল মাটির পাতিলে রাখা বালিতে পাটসোলা দিয়ে নাড়াচাড়া করছেন। সঙ্গে সঙ্গে চাল থেকে ফুটে তৈরি হচ্ছে মুড়ি।

মুড়ি তৈরিতে নারীদের পাশাপাশি মুড়ি ভাজা থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছেন এখানকার পুরুষরা। খুব ভোরে শুরু হয় মুড়ি ভাজা। সকালেই তা নিয়ে যাওয়া হয় আড়তে।

নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের ডালসড়ক এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি মুড়ির আড়ত। স্থানীয় মুড়ি বিক্রেতা ও দূরদূরান্ত থেকে আসা পাইকারদের সমাগম ঘটে এসব আড়তে। মুড়ির মান দেখে নির্ধারণ করা হয় দরদাম। আমন ও হরি ধানের মুড়ির চাহিদা বেশি। আমন মুড়ি মণপ্রতি ২৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা, ১৬ ধানের মুড়ি তিন হাজার টাকা থেকে ৩১০০ টাকা ও অন্য মুড়ি গড়ে ২৫০০ থেকে ২৯০০ টাকায় বিক্রি হয়।

গোয়ালদিঘি কৃষ্ণপুর গ্রামের মুড়ি উৎপাদনকারী মিলন হোসেন জানান, মেশিনে প্যাকেটজাত মুড়ির ভিড়ে আমাদের হাতে ভাজা মুড়ির সুনাম নষ্ট হচ্ছে। তবে তেগাছি গ্রামের আবদুল জব্বার বলেন, ‘এই মুড়িতে কোনো রাসায়নিক সার দেওয়া হয় না। লবণ আর বালু দিয়ে ভাজা হয় মুড়ি। তাই সারা বছর ধরে আমাদের মুড়ির চাহিদা বেশি থাকে।’ ঢাকোপাড়া গ্রামের আসিয়া বেগম বলেন, ‘সাধারণত আমরা রাত ১টা থেকে ২টার মধ্যে শুরু করে পরদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত মুড়ি ভাজি। তবে রমজানে আমরা প্রায় সারা দিনই মুড়ি ভাজি।’

মুড়ি ব্যবসায়ী অহিদুল ইসলাম জানান, ‘স্বল্প পুঁজির হলেও এ ব্যবসায় আয় হয় ভালো।’ স্বল্প সুদে মুড়ি উৎপাদনকারীদের ঋণ সহায়তা করা হলে ব্যবসার পরিধি বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন মুড়ি উৎপাদনকারীরা।