বৈশাখের উৎসবে মাতোয়ারা পুরো দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক ::

নতুন স্বপ্ন নিয়ে নতুন বছর এলো বাঙালির জীবনে। আজ পহেলা বৈশাখ,বাংলা ১৪৩১ সনের প্রথম দিন, শুভ নববর্ষ। আজ বাঙালির চিরায়ত উৎসবের দিন। আজ বর্ণিল উৎসবের মধ্য দিয়ে বাঙালি বরণ করবে পহেলা বৈশাখকে,নতুন আশা-স্বপ্নে যাত্রা করবে নতুন দিনে।

বাঙালির জীবনে পহেলা বৈশাখের গুরুত্ব অপরিসীম। এই দিনে বৈশাখ আর বাঙালি মিলেমিশে একাকার হযে যায় এই বাংলায়। তাই পহেলা বৈশাখ নিয়ে উচ্ছ্বাসের যেন শেষ নেই বাঙালির।

বাঙালির জীবনে পহেলা বৈশাখ আসে নান উৎসবের বার্তা নিয়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। হাজার বছরের ঐতিহ্য নিয়ে এবারও বাঙালি মেতে উঠেছে নানা উৎসবের ব্যঞ্জনায়।

আগে পহেলা বৈশাখ বরণে অন্যতম প্রধান অনুসঙ্গ ছিল হালখাতা। এখন বাঙালির জীবনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হালখাতার ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। তবে আনন্দের আবহে নানান আয়োজনে বর্ষবরণের ক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। আনন্দের কোন কমতি নেই বর্ষবরণে। আনন্দের আবহ বাঙালিকে ঘিরে রেখেছে আগের মতোই।

আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ বর্ণিল উৎসবে মেতে উঠবে।

শুভ নববর্ষ উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে দেশে ও দেশের বাইরে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাঙালি জাতির শাশ্বত ঐতিহ্যের প্রধান অঙ্গ পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতির জীবনে একটি পরম আনন্দের দিন। বৈশাখের আগমনে বেজে ওঠে নতুনের জয়গান। দুঃখ, জরা, ব্যর্থতা ও মলিনতাকে ভুলে সবাই জেগে ওঠে নব আনন্দে, নব উদ্যমে। পহেলা বৈশাখের মাঝে বাঙালি খুঁজে পায় নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও চেতনার স্বরূপ।

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে উৎসবমুখর বাংলা নববর্ষের এই দিনে দেশবাসীসহ সব বাঙালিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলা নতুন বছর ১৪৩১ আমাদের জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে। সারা বছরের দুঃখ-জরা, মলিনতা ও ব্যর্থতাকে ভুলে বাঙালি রচনা করবে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, আনন্দ ও ভালোবাসার মেলবন্ধন।

পহেলা বৈশাখ সরকারি ছুটির দিন। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। ছায়ানট ভোরে রমনা বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আসর বসাবে। আওয়ামী লীগ বর্ণিল শোভাযাত্রার কর্মসূচি দিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন করবে।

বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান আবশ্যিকভাবে জাতীয় সংগীত ও ‘এসো হে বৈশাখ’ গান পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হবে। বাংলা নববর্ষের তাৎপর্য, মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস ও ইউনেসকোর বিশ্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে মঙ্গল শোভাযাত্রার অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে এদিন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। বাংলা নববর্ষে সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের আয়োজন করা হবে।

বাংলাদেশে বর্ষবরণের প্রধান আকর্ষন ভোরে রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান। সেই পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে । আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায়। রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজন এখন ঐতিহ্যে পরিনত হয়েছে।

ঢাকায় বর্ষবরণের আরেক ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্র-শিক্ষক-সংস্কৃতিকর্মীদের অংশগ্রহনে মঙ্গল শোভাযাত্রা। গত কয়েকদিন ধরেই মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলেছে চারুকলা ইনস্টিটিউটে।

পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। কালক্রমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এখন শুধু আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেসকো এই শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।