কাগতিয়া মাদ্রাসার প্রধান ফটকে দেয়াল
ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখেছে, তবুও উঠেছে দেয়াল

বাংলাদেশ মেইল :::

চট্টগ্রামের রাউজানে কাগতিয়া মাদরাসার প্রধান প্রবেশমুখ বন্ধ করে দেয়াল নির্মাণ করছে একটি চক্র। অভিযোগ উঠেছে মাদ্রসার জায়গা দখলের হীন প্রচেষ্টায় পুলিশ প্রশাসনও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাউজান উপজেলার মূল শহর থেকে দক্ষিণ রাউজানের নোয়াপাড়া যাওয়ার পথে কাগতিয়া এশাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসার অবস্থান। ছয়তলা ভবনটির মূল প্রবেশপথের পাশে মাদ্রাসার মালিকানাধীন খালি জায়গায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ। এখন সেই স্মৃতিসৌধের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের নামে বন্ধ করা হচ্ছে মাদ্রাসায় প্রবেশের মূল ফটক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সৌধের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম  জেলা পরিষদের অর্থায়নে মাদ্রাসার জমিতে স্থাপনা তুলছে একটি পক্ষ। মাদ্রাসার জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণে নিয়মানুযায়ী জমি অধিগ্রহণ করেনি জেলা পরিষদ। তবে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ  আপত্তি জানানোর পর জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে কাজ বন্ধ রাখার মৌলিক নির্দেশনা দেয়া হয়।

এবিষয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আদালতের শরণাপন্ন হলে আদালত ওই জমিন উপর ১৪৫ ধারা জারি করে। জরুরী ভিত্তিতে নির্মাণ কাজ বন্ধ করার জন্য গত ৪ ঠা এপ্রিল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (চট্টগ্রাম উত্তর)  ১৪৫ ধারায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলো। কিন্তু আদালতের নির্দেশনা না মেনে  কাগতিয়া মাদরাসার প্রধান প্রবেশমুখ বন্ধ করে দেয়াল নির্মাণ করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এমন কি জেলা পরিষদের ঠিকাদার কাজ বন্ধ রাখার পরও কারা দেয়াল নির্মাণ করছে সেই বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ মাঠ প্রশাসন।

জানা যায়,  মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের পক্ষে জাফর আলম বাদী হয়ে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (চট্টগ্রাম উত্তর) একটি মামলা করেন। আদালত জমির মালিকানার বিষয়টি জানাতে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দিয়েছেন।আদালতের সেই আদেশ সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও অফিসার ইনচার্জ রাউজান থানা গ্রহন করে রিসিভ কপি প্রদান করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে । কিন্তু আদালতের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখে ওই চক্রটি। ঈদের ছুটিতে তড়িঘড়ি করে দেয়াল নির্মাণের কাজ করে ওই চক্রটি।

স্থানীয়রা জানান, আদালতের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে একটি পক্ষকে সুবিধা দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন। ১৪৫ ধারা জারি করা বিরোধপূর্ণ ভূমিতে পক্ষদ্বয়ের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব এড়িয়ে উল্টো সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এখনো দেয়াল নির্মাণের কাজে সহযোগিতা করছেন।

এবিষয়ে, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের নিরবতায় মাদরাসা সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও সাধারন জনগণের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।

এবিষয়ে হস্তক্ষেপ চেয়ে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রামের জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম শফিউল্লাহ  বলেন, ‘ জমিটির প্রকৃত মালিক কে তা নিশ্চিত করে জানানোর জন্য আদালত উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দিয়েছেন। ওনার প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। ‘

এবিষয়ে, জানতে ওসি জাহিদ হোসেনের সাথে কযেকদফা যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেন নি। জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের পক্ষ থেকেও এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হন নি কেউ।

প্রসঙ্গত, রাউজানের ঐতিহাসিক কাগতিয়া মাদ্রাসা একটি প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় কুচক্রী মহল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত করছে গেল পাঁচ বছর ধরে নানা ষড়যন্ত্র করেছে। সীমানা দেয়াল নির্মাণ করে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে মাদ্রাসায় প্রবেশের মূল ফটক।মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সৌধের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের মত একটি স্পর্শকাতর স্থাপনা মাদ্রাসার জমিতে তৈরি করার কারণে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।