১১৫ তম আসরে ৩ দিন ব্যাপী জব্বারের বলীখেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক :::

চট্টগ্রামের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অহংকার ‘আবদুল জব্বারের বলীখেলা’। এবার একশ’ পনের তম আসর বসছে ‘জব্বারের বলীখেলা’ নামের বিখ্যাত কুস্তি প্রতিযোগিতাটির। আগামী ২৫ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) দুপুর ৩টায় নগরের লালদীঘি ময়দানে শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যের এই খেলা অনু্ষ্ঠিত হবে ।

প্রতিবারের মতো এবারও ১২ই বৈশাখে বলীখেলার আয়োজন করছে আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখি মেলা কমিটি। এতে সহায়তা করবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।

এদিকে বলীখেলাকে ঘিরে নগরের লালদীঘি মাঠের আশপাশে বসবে তিনদিনের বৈশাখী মেলা। আগামী ২৪ থেকে ২৬ এপ্রিল (বুধবার থেকে শুক্রবার) এ মেলা অনুষ্ঠিত হবে।

এ উপলক্ষে গত ১৬ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টায় আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখি মেলা কমিটির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয় সিটি করপোরেশন পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে।

১৯ এপ্রিল (শুক্রবার) বিকেলে লালদীঘি পাড়ের সিটি করপোরেশনের লাইব্রেরি ভবনে ট্রফি ও জার্সি উন্মোচন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখি মেলা কমিটি।

আয়োজক সূত্রে জানা যায়, বলীখেলার জন্য লালদীঘি মাঠে ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের বালুর মঞ্চ তৈরি করা হয়। সেখানে পাঁচটি ধাপে প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। প্রথম বাছাইয়ের পরের রাউন্ড পর্বে ৫০ জনকে নিয়ে খেলা হয়। সেখান থেকে ২৫ জন যান মূল চ্যাম্পিয়ন পর্বে। এখানে কোনো পয়েন্ট ব্যবস্থা নেই। কুস্তি করতে করতে মাটিতে যার পিঠ যে লাগাতে পারবে সেই বিজয়ী হবে। প্রতিবছর ১০০ থেকে ১৫০ জন বলী দূর-দূরান্ত থেকে এসে খেলায় অংশ নেয়।

আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বলেন, ২৫ এপ্রিল দুপুর ৩টায় লালদীঘি মাঠে বলীখেলা এবং ২৪ থেকে ২৬ এপ্রিল বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হবে। বলীখেলার ১১৫তম আসর এটি। সংবাদ সম্মলনের মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার বাদল বলেন, আমরা আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করেছি। ২২ এপ্রিল বলীখেলার মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করা হবে। এবার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। উদ্বোধন করবেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। এছাড়া বিশেষ অতিথি থাকবের স্পন্সর প্রতিষ্ঠান এনএইচটি হোল্ডিংসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ মো. তানভীর। ইতিমধ্যে আমরা তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি। আশা করছি প্রতিবছরের মতো এবারও উৎসবমুখর পরিবেশে এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে।

জানা যায়, যুবসমাজকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করতে ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বকশিরহাটের ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর চালু করেছিলেন বলীখেলা। সময়ের ব্যবধানে লালদীঘির মাঠে বসা ‘জব্বারের বলীখেলা’ হয়ে উঠেছে এই জনপদের অন্যতম আকর্ষণ। শুধু কি তাই? বলীখেলাকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় বৈশাখি মেলাটিও বসে এখানে।

প্রসঙ্গত, করোনা মহামারীর কারণে দুবছর (২০২০ ও ২০২১) জব্বারের বলীখেলা ও মেলার আয়োজন হয়নি।পরের বছরেও এই মেলা হয়নি একই কারণে। ২০২২ সালেও ঐতিহাসিক এই আয়োজনের ভবিষ্যৎ ঝুলেছিল সুতার ওপর। শেষ পর্যন্ত সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রচেষ্টায় সড়কের মাঝখানে অস্থায়ীভাবে রিং তৈরি করে আয়োজন করা হয় বলীখেলায়। গত বছর থেকে বলীখেলা ফিরেছে নিজের পুরোনো ঠিকানা-লালদিঘী ময়দানে। এবারও সেখানেই হচ্ছে এই আসর।