সীতাকুণ্ডে হিমাগারের অভাবে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার সবজি

    কামরুল ইসলাম দুলু, সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি :

    উত্তর চট্টগ্রামের সবজি উৎপাদনে খ্যাত জনপদের নাম সীতাকুণ্ড। আর এই এলাকা চট্টগ্রামের দৈনন্দিন সবজি চাহিদার বিশাল একটা অংশ পূরণ করে এই উপজেলা। চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের অন্যান্য স্থানেও এই এলাকার সবজি রফতানি করা হয়। এছাড়া বিদেশেও রপ্তানী হয় সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন সবজি।

    তবে কৃষকের দুঃখ এক জায়গায় আর তা হলো এখানে সবজি সংরক্ষণের জন্য একটি হিমাগার বড় প্রয়োজন। আর এই হিমাগারের অভাবে এ এলাকার কৃষকদের প্রতি বছর প্রায় কয়েক কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে।

    সবজি সংরক্ষনের অভাবে সীতাকুণ্ড উপজেলার ২৩হাজার কৃষক হতাশা প্রকাশ করছেন। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এ উপজেলায় কোন হিমাগার না থাকায় কৃষকরা ভরমৌসুমে কমমূল্যে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।

    হিমাগারের অভাবে কৃষকেরা তা সংরক্ষণ করতে পারছে না। তারা উৎপাদিত কৃষিপণ্য সংরক্ষণে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে হিমাগার নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন।

    উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এলাকায় দুই হাজার সাত শত হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। উৎপন্ন হয় বেগুন,মুলা, টমেটো, বরবটি, শসা, লাউ, কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ক্ষীরাসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ৪০হাজার মেট্রিক টন সবজি। এছাড়া প্রায় দুই হাজার আট শত হেক্টর জমিতে শিমের চাষ করা হয়।

    উপজেলার সৈয়দপুর, বারৈয়াঢালা ও মুরাদপুর ইউনিয়ন এবং সীতাকুণ্ড পৌরসভার কৃষকেরা বিভিন্ন জাতের শীতকালীন ফসল উৎপাদন করে থাকে। এবারেও প্রতিটি এলাকায় ফসলের ভালো ফলন হয়েছে। এছাড়া সীতাকুণ্ডে শতাধিক একর পাহাড়ী এলাকায়ও সবজির ভালো ফলন হয়েছে।

    উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ১৫কিলোমিটার পাহাড়ী এলাকার ঢালু জমিতে স্থানীয় কৃষকরা সবজি চাষ করেছে। সৈয়দপুরের শেখের হাট, জাফরনগর, মীরের হাট গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন, মনির উল্লা, ফজল হকসহ আরো কয়েকজন কৃষক জানান, কীটনাশক ও সারের মূল্যে বৃদ্ধির পরও আশা নিয়ে জমিতে টমেটো, ফুলকপি, মরিচ ও বেগুন চাষ করেছিলাম। বাজারমূল্য না পাওয়ায় তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

    প্রথমবারের মতো শালগম চাষ করা বহরপুরের কৃষক পরিতোষ জানান, অল্প পুঁজি বিনিয়োগে করে শালগম ফলানো যায় বিধায় প্রায় দেড় একর জমিতে চাষ করেছিলাম। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে এনে উৎপাদন খরচও উঠাতে কষ্ট হচ্ছে। আর টমেটো না তোলার কারণে জমিতেই পচে যাচ্ছে। অন্যদিকে ফসল ভালো উৎপাদন হলেও সংরক্ষনের অভাবে অধিকাংশ সবজি মাঠেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

    উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কোন হিমাগার না থাকায় কৃষকরা ভর মৌসুমে কম মূল্যে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হয়। হিমাগারের অভাবে কৃষকেরা তা সংরক্ষণ করতে পারছে না। তারা উৎপাদিত কৃষিপণ্য সংরক্ষণে সরকারের কাছে হিমাগার নির্মাণের দাবি জানিয়েছে।

    উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাফকাত ফাহিম জানান, ‘সমতল ভুমির পাশাপাশি বিস্তীর্ণ পাহাড়ী অঞ্চলে সবজি চাষের উর্বর জায়গা। এখানকার মাটি সবজি চাষের জন্য প্রকৃতির তৈরি ক্ষেত্র। ফলে একটু যত্ন নিলেই এখানে সবজির ভাল ফলন পাওয়া যায়। এসব কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নির্মাণ হলে কৃষকরা সরাসরি বিক্রির সুযোগ পেত এবং সারা বছর আয় করার সুযোগ পেতেন।

    বিএম/কামরুল/রাজীব