পায়েল হত্যায় মায়ের স্বাক্ষ্যগ্রহণ : থানায় গিয়ে জানতে পারে পায়েল খুন হয়েছে

    চট্টগ্রাম মেইল : নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পায়েল হত্যা মামলায় পায়েলের বাবা ও মায়ের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন করেছে আদালত। আজ ২৮ এপ্রিল রবিবার পায়েলের মা কোহিনূর বেগম আদালতে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে সাক্ষ্য দেন। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় ইতিমধ্যে বাদিসহ পাঁচ সাক্ষির স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী রোববার অবশিষ্ট সাক্ষিদের সাক্ষ্যগ্রহণের দিনক্ষণ ঠিক করেছেন আদালত।

    রোববার চট্টগ্রামের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক আবদুল হালিমের আদালতে পায়েলের মা সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাদের জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আইয়ূব খান বলেন, ‘পায়েল হত্যা মামলায় তার মা কোহিনূর বেগম আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আগামী রোববার বাকি সাক্ষিদের কাছ থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে।’

    ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে কোহিনূর বেগম বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী হানিফ এন্টারপ্রাইজে উঠে পায়েল ফোন করে কথা বলেছিলেন। সকালে আমি ফোন করলে তা পায়েলের বন্ধু আদর ফোনটি রিসিভ করে। এসময় আদার আমাকে জানিয়েছে পায়েল প্রশ্রাব করতে নেমে আর বাসে উঠেনি। এরপর কাউন্টার থেকে বাস চালক ও সুপারভাইজারের নম্বর সংগ্রহ করে খোঁজ নিতে শুরু করি। কিন্তু তারাও জানিয়েছে পায়েল আর বাসে উঠেনি। পরে গজারিয়া থানায় গেলে পুলিশ বাস চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার মিলে পায়েলকে খুন করেছে বলে জানায়।’

    রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আইয়ূব খান বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাক্ষ্য হয়ে গেছে। আর কয়েকজন বাকি আছে। আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগে বিচার কাজ শেষ হবে। এই মামলায় তিন আসামীর দুইজন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাই আসামীরা সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে বলে বিশ্বাস করছি আমরা।’

    পায়েলের মামা ফাহাদ চৌধুরী দীপু জানান, গত বছরের ২১ জুলাই রাতে দুই বন্ধু আকিবুর রহমান আদর ও মহিউদ্দিন শান্তর সঙ্গে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার পথে রওনা হওয়ার পর নিখোঁজ হন পায়েল। ২৩ জুলাই মুন্সিগঞ্জ উপজেলার ভাটেরচর সেতুর নিচের খাল থেকে পায়েলের লাশ উদ্ধার করে গজারিয়া থানা পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এই মামলায় হানিফ পরিবহনের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারকে আসামী করা হয়েছে। এরপর হানিফ পরিবহনের ওই বাসের সুপারভাইজার জনিকে ঢাকার মতিঝিল এবং চালক জামাল হোসেন ও তার সহকারী ফয়সাল হোসেনকে আরামবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

    আদালতে তাদের জবানবন্দির বরাতে পুলিশ জানায়, গজারিয়া এলাকায় গাড়ি যানজটে পড়ায় প্রসাব করার কথা বলে বাস থেকে নেমেছিলেন পায়েল। বাস চলতে শুরু করলে তিনি দৌড়ে এসে ওঠার সময় দরজার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে সংজ্ঞা হারান। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে দেখে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার বদলে দায় এড়াতে ভাটেরচর সেতু থেকে নিচের খালে ফেলে বাস নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন চালক ও সুপারভাইজার।

    মামলার বাদী গোলাম সরোয়ার্দী বিপ্লব জানান, পায়েলকে অচেতন অবস্থায় সেতু থেকে খালে ফেলে দেওয়ার আগে পরিচয় লুকাতে হানিফ পরিবহনের বাসের চালক ওই তরুণের মুখ থেঁতলে দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করেছে তার পরিবার।

    সাইদুর রহমান পায়েলের বাবা গোলাম মাওলা ও বড় ভাই গোলাম মোস্তফা কাতার প্রবাসী। বড় ভাইয়ের সন্তান হওয়ার খবরে জুলাই মাসে চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন পায়েল। সেখান থেকে ঢাকায় ফেরার পথেই ঘটে ওই ঘটনা। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র পায়েলের বাসা চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকায়। পায়েলের মৃত্যুর পর তার মামা বিপ্লব বাদী হয়ে চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারকে আসামি করে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানায় ওই হত্যা মামলা দায়ের করেন।

    গজারিয়া থানার পুলিশ ওই তিনজনকে আসামি করে ৩ অক্টোবর অভিযোগপত্র জমা দেয়। মুসিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। পরে পায়েলের পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ মামলাটি চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর মামলার বিচার কাজ শুরু হয় চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে।

    বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স…