আধুনিকাতার গ্যাঁড়াকলে সীতাকুণ্ডে ঐতিহ্য হারাচ্ছে ঢেঁকি শিল্প

    সীতাকুণ্ড( চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : কালের বিবর্তনে সীতাকুণ্ড উপজেলায় ঐতিহ্যবাহি ঢেঁকি শিল্প আজ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দু’একটি গ্রামে ঢেঁকি শিল্পের দেখা মিললেও তা একেবারেই হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র। আজ থেকে কয়েক বছর আগে ঢেঁকি শিল্পের ব্যবহার ছিল সর্বাধিক। কিন্তু যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঢেঁকি শিল্পের ব্যবহার না থাকায় আজ তা বিলুপ্তির পথে।

    এক সময় ঢেঁকি ছাড়া ধানভানার কাজ কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। কিন্তু বর্তমানে যুগে বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কারণে ঢেঁকি শিল্পের ব্যবহার আর নেই বললেই চলে। আদিম যুগের লোকেরা ঢেঁকি দিয়েই সব কাজ কর্ম করত, কিন্তু তা এখন বিলুপ্তির পথে।

    কেননা এখন বর্তমানে ধান, চালের আটা ও চিঁড়া বৈদ্যুতিক মিল হওয়ায় কৃষকরা খুব সহজেই তা মেশিনের  সাহায্যে ধান, আটা ও চিঁড়া কম সময়ে খুব কম খরচে ভাঙ্গাতে পারছেন। তাই কৃষকরা বৈদ্যুতিক মিলের ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছেন। ঢেঁকিতে ভানা ধানের চালের ভাত, খিচুড়ি, খির, পায়েশ, চিঁড়ার নিজস্ব স্বাদ ও ভিটামিন ছিল।

    আগের দিনে কৃষকেরা বাড়িতে অনেক কষ্ট করে ধান ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে চাল তৈরী করত। ধান ভাঙানোর বৈদ্যুতিক মিল হওয়ায় কৃষকদের বাড়ির নারীদের আর কষ্ট করে ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে ধান ভেঙ্গে চাল, আটা ও চিঁড়া তৈরী করতে হচ্ছেনা। বর্তমানে গ্রামের এক-দুটি কৃষকের বাড়িতে ঢেঁকি দেখা যায়। আর কিছু দিন পরে কালের আবর্তে হারিয়ে যাবে গ্রাম বাংলার শত বছরের এই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি।

    আগে এই ঢেঁকির প্রয়োজন ছিল যখন প্রচন্ড ঠান্ডা ছিল সেই সময় কি ছেলে-মেয়ে আর কি বুড়া-বুড়ি সবাই মিলে চুলা পুড়া সাইটে দিয়ে সবাই মিলে আগুনে হাত শেখতে আর ভাপা পিঠা, চিতাই পিঠা, কুলি পিঠা, নুনচিয়া পিটা সবাই মিলে খেত। কিন্তু সেই সব দিনের কথা ভুলে গেল আজকের কালের বিবর্তনের কারণে।

    যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সব কিছুতেই পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। আর আধুনিকতার ফলে গ্রাম বাংলার অনেক কিছুই হারিয়ে যাচ্ছে, তার মধ্যে ঢেঁকি অন্যতম। এমন একসময় ছিল গ্রামাঞ্চলে ঢেঁকিতে চাউল গুড়া করে নানা রকম পিঠাপুলি তৈরী করতো মহিলারা। সেই পিঠাপুলির স্বাদও ছিল অন্যরকম।

    যুগের পরিবর্তনে সব কিছুতে লেগেছে আধুনিকতা। এখন গ্রামাঞ্চলের আনাচে কানাচে পৌঁছে গেছে বৈদ্যুতিক লাইন। ফলে রাইস মিলও হয়ে গেছে সর্বত্র। মানুষ কষ্ট করে আর ঢেঁকি ব্যাবহার করেনা। একসময় গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে ঢেঁকি ছিল। আসতে আসতে ঢেঁকি ব্যাবহার কমে গেছে। মানুষ হয়ে গেছে যান্ত্রিক। ঐতিহ্য হারাতে বসেছে ঢেঁকি শিল্প।

    বিএম/কেআইডি/রাজীব…