সরকার দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে-বিএনপি

    চট্টগ্রাম মেইল : বর্তমান রাজনৈতিক সংকটকালে গণতন্ত্রহীন রাষ্ট্রব্যবস্থায় দেশের মানুষ আজ চরম নিরাপত্তাহীন অবস্থায় দিন যাপন করছেন। বিনা ভোটের অস্বাভাবিক সরকার আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। দেশের সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। বিচার বিভাগ, সংসদ ও প্রশাসন যন্ত্র নিজেদের কবজায় নিয়ে সরকার দেশে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। দেশে এখন গুম, খুন, ধর্ষণ, হামলা-মামলা, প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    আগামী ২০ জুলাই বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে চট্টগ্রাম বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপরোক্ত মন্তব্যগুলো করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন।

    আজ ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, কুমিল্লার আদালতে বিচারকের সামনে প্রকাশ্যে দিবালোকে মানুষকে কুপিয়ে হত্যা করছে। সরকার বিনা কারণে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষ আজ দিশেহারা। সামান্য বৃষ্টিপাতে চট্টগ্রাম পানিতে তলিয়ে গিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। পাহাড় ধ্বসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলেছে। কিন্তু সরকার নির্বিকার।

    ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। আওয়ামীলীগ সরকার তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতেই প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে মিথ্যা মামলায় সাজা প্রদান করেছে। গ্রেফতারের পর থেকে দীর্ঘ ১৭ মাস ধরে তিনি আজ কারাগারে বন্দি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জটিল রোগে ভূগছেন। কারাগারে তাকে উপযুক্ত চিকিৎসা দেয়া হয়নি।

    বিএনপির পক্ষ থেকে বার বার দাবী করা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার পছন্দমত একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হউক। কিন্তু তার দাবীকে অগ্রাহ্য করে জোর করে তাকে পিজি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা তার সুচিকৎসা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ও সংকিত। আমরা মনে করছি সরকার তাকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করে সুকৌশলে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অশুভ উদ্দেশ্যেই তার চিকিৎসা ও মুক্তিতে বাঁধা দিচ্ছে।

    তিনি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলার সাজা বাতিল করে নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবী জানিয়ে বলেন, নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে দেয়া হাজার হাজার মিথ্যা গায়েবী মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ফাইনাল রির্পোট দেয়ার দাবী জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম কারাগারে দীর্ঘদিন ধরে বন্দি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী ও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহসহ গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি দেয়ার আহবান জানায় ডা. শাহাদাত হোসেন।

    সংবাদ সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম।

    বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান সরকার বিএনপির এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিও যথাযথভাবে পালন করতে দিচ্ছে না। ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হলেও চট্টগ্রামে বিএনপিকে দলীয় কার্যালয়ের বাইরে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে সরকার তাকে গায়ের জোরে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। সাজানো মিথ্যা মামলার রায়ের পর থেকে বিএনপি সর্বাত্মক শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে।

    খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে চালিয়ে যাবো উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে আগামী ২০ জুলাই নগরীর লালদীঘির পাড়স্থ জেলাপরিষদ চত্ত্বর অথবা কাজীর দেউরীর মোড়ে কেন্দ্রঘোষিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশ চট্টগ্রাম বিএনপির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে।

    গণতন্ত্র পুন:রুদ্ধার, বাকস্বাধীনতা, আইনের শাসন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ভোটাধিকার এবং মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছি। এদেশের গণতন্ত্র প্রিয় জনগণকে নিয়ে আমাদের শান্তিপূণ সংগ্রাম চলছে চলবে।

    এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার ও হারুনুর রশিদ ভিপি, কেন্দ্রীয় সদস্য মশিউর রহমান বিপ্লব, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সি: সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান, উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি এম এ হালিম, চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি এম এ আজিজ, মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, ইকবাল চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক কাজী বেলাল উদ্দিন, মো. শাহ আলম, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আবদুল মান্নান, আহমেদুল আলম রাসেল, জাহাঙ্গির আলম দুলাল, মঞ্জুর আলম মঞ্জু, আনোয়ার হোসেন লিপু, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, সাংগঠনিক সম্পদক কামরুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক শিহাব উদ্দিন মুবিন, নগর মহিলা দল সভাপতি কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মনি, সহ-দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী।

    বিএম/আরএস..