বিমান ছিনতাই : তিন ঘন্টা উত্তেজনার পর শেষ হয় কমান্ডো অভিযান,ছিনতাইকারীর মৃত্যু

    রাজীব সেন প্রিন্স : চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে দুবাইগামী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট জরুরিভাবে অবতরণ করেছে। রবিবার বিকেলে এক অস্ত্রধারীর কবলে পড়ে বিমানটি জরুরিভাবে অবতরণ করে।

    জানা যায়, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের নতুন উড়োজাহাজ ময়ূরপঙ্খী ১৪২ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে দুবাইয়ের উদ্দ্যেশে রওনা দেন রোববার বিকেল সাড়ে চারটায়। আকাশে ওড়ার পরপরই উড়োজাহাজটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে এক অস্ত্রধারী।

    অবস্থা বেগতিক দেখে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের জরুরি অবতরণ করা হয়। জরুরি অবতরণের পরপরই রানওয়েতে বিমানটি ঘিরে ফেলে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ।

    বিশেষ উপায়ে নিরাপদে যাত্রীদের বের করে আনা হলেও ভেতরে দুজন ক্রুকে জিম্মি করে রাখে অস্ত্রধারী।

    পরে ৬টার দিকে সেনাবাহিনীর বিশেষ কমান্ডো টিমকে জানানো হয়। তারা দ্রুততম সময়ে উপস্থিত হন। পরে সবার সমন্বয়ে অভিযান চালানো হয়। রোববার রাত পৌনে ৮টার দিকে সেনা স্পেশাল ফোর্সের অভিযানে সন্দেহভাজন এক ছিনতাইকারীকে আহতাবস্থায় আটক করার কথা জানিয়ে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের জিম্মি সঙ্কটের অবসান ঘটনানোর তথ্য দেন সিভিল এভিয়েশনের নতুন চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. নাইম হাসান।

    তিনি জানান, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করা হয়েছে সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে। আহতাবস্থায় ক্রু সাগরকে উদ্ধার করা হয়। বিমানের কোনো ক্ষতি হয়নি। বিমানটি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সেনাবাহিনী।
    এর আগে সন্ধ্যা ৭টার পরে বিমান বাহিনীর এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদদুর রহমানের নেতৃত্বে বিমান ছিনতাই ঘটনার নেগোসিয়েশন করা হয় এবং সবাইকে উদ্ধার করা হয়।
    এর কিছুক্ষন পরেই এক ব্রিফিংয়ে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মতিউর রহমান জানান চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী অস্ত্রধারীর মৃত্যু হয়েছে। প্রায় তিন ঘন্টার টান টান উত্তেজনার পর অবশেষে কমান্ডো অভিযানে ছিনতাইকারী নিহত হয়। মুক্ত করা হয় জিম্মি থাকা ক্রু সাগরকে।

    সেনাবাহিনীর বিশেষ কমান্ডো টিমের সঙ্গে র‌্যাব, পুলিশের সম্মিলিত অভিযানে ওই অস্ত্রধারীর মৃত্যু হয় জানিয়ে তিনি বলেন, কমান্ডো অভিযান চালিয়েছেন হলি আর্টিজান রেস্তোঁরায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানের নেতৃত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরুল।

    তিনি আরও জানান, ওই উড়োজাহাজে ১৩৪ জন যাত্রী ও ১৪ জন ক্রু ছিলেন। তাদের সবাই অক্ষত অবস্থায় নেমে এসেছেন। কেবিন ক্রুদের জিম্মি করা হয়েছিল। তবে ছিনতাইকারী কোনো যাত্রীর কোনো ক্ষতি করেনি।

    রোববার রাত সাতটার পরে চট্টগ্রাম বিমানঘাঁটি প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুল রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। বলেন, অস্ত্রধারী ছিনতাইকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এবং তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছে। আমরা তার সঙ্গে কথা বলেছি। প্রধানমন্ত্রীর অফিসের নির্দেশনা দিয়েছেন এবং তার দেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত মতেই আমরা কাজ করেছি। ফলে বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি।

    তিনি বলেছেন ছিনতাইকারীর মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন বলেও তারা ধারণা করছেন। হামলার মুল কারণ এখনো জানা যায়নি, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে।

    অস্ত্রধারী সম্পর্কে মেজর জেনারেল মতিউর রহমান বলেন, প্রথমে ধারণা করা হচ্ছি সে বিদেশি। কিন্তু পরে দেখা গেলে, সে বাংলাদেশি। তার হাতে একটি অস্ত্র ছিল পিস্তল। তার বয়স ২৫ থেকে ২৬ বছর।

    তিনি বলেন, ছিনতাইকারীকে নিবৃত্ত করার জন্য কমান্ডো বাহিনী প্রথমে তাকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু সে আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করে। এসময় স্বাভাবিকভাবে যা হওয়ার কথা, তাই হয়েছে। গোলাগুলিতে প্রথমে সে আহত হয়। পরে সে মারা যায়।

    কেন এই ছিনতাই চেষ্টা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমে সে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল। তারপর তাকে আমরা কথোপকথনে ব্যস্থ রেখেছিলাম।

    এর আগে অপর এক ব্রিফিংয়ে জানানো হয় সমঝোতায় রাজি হয়ে নিজেই বিমান থেকে বের হয়ে আত্মসমর্পণ করেন ছিনতাইকারী। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় ছিনতাইকারী দেশের চিত্র নায়িকা শিমলার ব্যর্থ প্রেমিক। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে এ দুর্ধর্ষ ঘটনাটি ঘটিয়েছে।

    স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, যতটুকু জানা গেছে, একজন সন্দেহভাজন পাইলটের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিল। তবে সব যাত্রী নেমে গেছে। পাইলটও নেমে গেছে।

    বাংলাদেশ বিমানের একটি সূত্র জানিয়েছে, ১৬২ আসনের ময়ূরপঙ্খী উড়োজাহাজে ইকোনমি ক্লাসে ১৩৩ জন ও বিজনেস ক্লাসে নয়জন যাত্রী ছিলেন। এ ছাড়া পাঁচজন ক্রু, এর মধ্যে দুজন নারী ছিলেন। ককপিটে দুজন পাইলট ছিলেন। উড়োজাহাজটির মডেল বোয়িং ৭৩৭-৮০০। উড়োজাহাজটি ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমানের বহরে যুক্ত করা হয়।

    বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স