মিতু হত্যার তদন্তে যত নাটকীয়তা
    ভারতীয় নাগরিক ‘গায়েত্রী’র প্রেমের বলি মিতু !

    বাংলাদেশ মেইল ::

    সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের সাথে ভারতীয় নাগরিক ‘গায়েত্রী’র পরকীয়া প্রেমের জেরে খুন হয়েছিলেন মাহমুদা খানম মিতু। দীর্ঘ সময় পর একই হত্যা মামলায় দায়ের করা নতুন মামলার এজাহারে এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

    মিতু হত্যার নতুন মামলায় এক নম্বর আসামি তাঁর স্বামী ও পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তার। নতুন মামলার বাদী মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।

    কিন্তু কক্সবাজারে চাকরীরত অবস্থায় বা মিতু হত্যার পরপর কেন এ বিষয়টি সামনে আনা হয়নি, এমন প্রশ্নও উঠেছে। নতুন মামলায় ‘ গায়েত্রী’কে  আসামী কেন করা হয় নি,এমন প্রশ্নের কোন উত্তর নেই।

    পিবিআই ২০২০ সালে তদন্তভার পাবার অল্প সময়ের মধ্যেই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়। পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রামে মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার স্বামী সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের ‘সম্পৃক্ততার প্রমাণ’ পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই।

    সংস্থাটির প্রধান পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক  বনজ কুমার মজুমদার দীর্ঘদিন চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করেছেন। মিতু হত্যার সময়ও বনজ কুমার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ছিলেন।

    এ তদন্ত সংস্থার প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বুধবার ঢাকার ধানমন্ডিতে পিবিআই সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “মিত্যু হত্যার সঙ্গে স্বামী বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। এ জন্য তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।”

    বাবুল আক্তারের আইনজীবী আরিফুর রহমান বলেন, ‘ পুলিশ সিআইডি চার বছর তদন্ত করে যেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। পিবিআই সেটি এক বছরে করে ফেলেছে? আমার মক্কেল বাবুল আক্তার ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। পিবিআই’র প্রতিবেদনের ব্যাপারে আমরা উচ্চ আদালতে যাব। ‘

    এদিকে, স্ত্রীকে হত্যার জন্য বাবুল আক্তার তিন লাখ টাকা দিয়েছিলেন আসামিদের। আদালতে দেওয়া দুই সাক্ষীর জবানবন্দি ও পিবিআই এর তদন্তে এই তথ্য উঠে আসে।

    এদিকে, পিবিআই’র তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সুত্র বলছে, পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। ভারতীয় নাগরিক ‘গায়েত্রী’কে নিয়ে দাম্পত্য কলহের শুরু। বাবুল আক্তার মিশনে থাকাকালীন সময়ে এ সম্পর্কের বিষয়ে জেনে যায় মিতু।

    জিজ্ঞাসাবাদের ডাক পড়ার কারনে মঙ্গলবার হঠাৎ করে চট্টগ্রামে আসেন বাবুল আক্তার। মঙ্গলবার (১১মে) রাত পর্যন্ত তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি স্বীকার করা হয়নি পিবিআইবি’র পক্ষ থেকে।

    পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা  বলেন, মঙ্গলবার মিতু হত্যা মামলার বাদী বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পিবিআইতে ডাকা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআই স্ত্রী হত্যায় বাবুলের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে তদন্তকারী দল। তাই তাকে পিবিআই হেফাজতে রাখা হয়েছে। মামলার তদন্তের বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ‘

    ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় সড়কে খুন হন পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু।

    পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে যোগ দিতে ওই সময় ঢাকায় ছিলেন বাবুল আক্তার। তার ঠিক আগেই চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশে ছিলেন তিনি।

    হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন বাবুল আক্তার নিজেই।

    এই মামলার আসামী মুছা ও তার ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে দাবি করে  সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন মুছার স্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে মুছা গুমের শিকার হয়েছেন নাকি মৃত্যুবরন করেছেন সেই প্রশ্নও করেছিলেন মুছার স্ত্রী।

    অন্যদিকে, মিতু হত্যাকান্ডের একমাসের মধ্যেই মামলার অন্য এক আসামীকে ক্রসফায়ার দেয়া হয়েছিল,যদিও পুলিশের দাবি সেটি বন্দুকযুদ্ধ।

    (১২মে) বুধবার বাবুল আক্তারকে আদালতে হাজির করানো, একই দিন নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মিতুর বাবা মোশারফ হোসেনের দায়ের করা নতুন মামলা সবকিছু তড়িৎ গতিতে ঘটার কারনে জন্ম দিয়েছে নতুন নাটকীয়তার।